×

জাতীয়

হরিজন-তেলেগুদের পুনর্বাসনের আশ্বাস রেলমন্ত্রীর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৩, ০৮:৩৫ পিএম

হরিজন-তেলেগুদের পুনর্বাসনের আশ্বাস রেলমন্ত্রীর
হরিজন-তেলেগুদের পুনর্বাসনের আশ্বাস রেলমন্ত্রীর
রাজধানীর কমলাপুর থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ঢাকার গোপীবাগ (টিটিপাড়া) হরিজন ও তেলেগু কলোনীর উচ্ছেদকৃত পরিবারগুলোর পুনর্বাসন এবং নতুন করে পুনর্বাসন ছাড়া কোনো উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা না করার দাবিতে রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত। বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) দুপুরে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর দপ্তরে এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। এসময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন-ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ। সাক্ষাৎকালে রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন আন্তরিকতার সাথে বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। সাক্ষাৎকালেই তিনি পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালককে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। রেলমন্ত্রী এসময় বলেন, পুনর্বাসন ছাড়া আর একটি পরিবারকেও সেখান থেকে উচ্ছেদ করা হবে না। ওই কলোনি থেকে ইতোপূর্বে উচ্ছেদকৃত সকল পরিবারকেও যথাযথ পুনর্বাসন করা হবে। তিনি জানান, গোপীবাগ (টিটিপাড়া) রেলওয়ে হরিজন ও তেলেগু কলোনির বাসিন্দাদের জন্য সেখানে অতি দ্রুত বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ করে দেয়া হবে। রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এ সময় ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দকে জানান, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আন্তরিক। তিনি নিজেও সম্প্রতি ওই কলোনী পরিদর্শন করে কলোনীর বাসিন্দাদের সার্বিক অবস্থা সরেজমিনে দেখে এসেছেন। সাক্ষাৎকালে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত রেলমন্ত্রীকে এ বিষয়ে একটি স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন। এতে বলা হয়, ২০১৯ সালে ওই কলোনীর ১১২টি পরিবারকে প্রথম দফায় উচ্ছেদ করা হয়। সে সময় প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় থেকে পুনর্বাসনের লক্ষে উচ্ছেদকৃত ১১২ পরিবারের তালিকা তৈরি করা হলেও আজ অব্দি তাদের কোনো ধরনের পুনর্বাসন করা হয়নি। পরবর্তীতে আরো ২৭টি পরিবারকে তালিকা প্রণয়ন ছাড়াই উচ্ছেদ করা হয়। এখনও হরিজন ও তেলেগু সম্প্রদায় মিলে যারা ওই কলোনির বাসিন্দা আছেন তাদেরকে কয়েকদিন পরপর প্রকল্পের কর্মকর্তারা গিয়ে যেকোন সময় উচ্ছেদ করা হবে মর্মে মৌখিকভাবে জানিয়ে আসছেন। এমতাবস্থায় কলোনীর বাকি পরিবারগুলো সার্বক্ষণিক উচ্ছেদ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। ইতোপূর্বের দুই দফায় উচ্ছেদকৃত ১৩৯টি পরিবারের সদস্যরা কলোনীর বাকি পরিবারগুলোর সাথে তাদের ঘরে গাদাগাদি করে মানবেতরভাবে বসবাস করছেন। কোন ধরনের পুনর্বাসন ছাড়াই এই উচ্ছেদ অত্যন্ত মানবেতর এবং নিশ্চয়ই তা মানবাধিকার পরিপন্থি। স্মারকলিপিতে বলা হয়, প্রায় দুইশ’ বছর পূর্বে ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে হরিজন ও তেলেগু সম্পদ্রায়ের মানুষকে এখানে পরিচ্ছন্নতার কাজ, রেলওয়ের কাজসহ বিভিন্ন কাজের প্রয়োজনে আনা হয়। উপরোক্ত কলোনীর বাসিন্দারা পূর্বে ফুলবাড়ীয়া পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় কলোনী করে বসবাস করতো। ৪০-৪৫ বছর আগে ফুলবাড়ীয়া এলাকার উন্নয়ন কাজের প্রয়োজনে তাদেরকে সেখান থেকে বর্তমান গোপীবাগ (টিটিপাড়া) কলোনিতে আনা হয়। এদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম বাংলাদেশ রেলওয়েতে কর্মরত থাকলেও বর্তমান প্রজন্মের অধিকাংশকেই রেলওয়েসহ সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ দেয়া হয়নি। তারা নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করে অতি সামান্য উপার্জনে কোনোরকমে দিনাতিপাত করছেন। প্রায় দুইশ’ বছরে তাদের কোন স্থায়ী জমি বা বসতভিটা নেই। তাদেরকে অন্য কোথাও বাসাভাড়া কেউ দেয় না। এমতাবস্থায় অন্য কোনো জায়গায় তাদের বিকল্প পুনর্বাসন না করে বর্তমান বসতি থেকে উচ্ছেদ করে দিলে তাদের যাওয়ার আর কোনো জায়গা থাকবে না। তাই মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে গোপীবাগ (টিটিপাড়া) রেলওয়ে হরিজন ও তেলেগু কলোনীর বাসিন্দাদের বিকল্প পুনর্বাসনের মাধ্যমে এ বিপুল সংখ্যক মানুষের নূন্যতম মাথা গোজার ঠাঁই নিশ্চিত করার জরুরি। হরিজন-তেলেগুদের পুনর্বাসনের আশ্বাস রেলমন্ত্রীরকলোনীর বাসিন্দাদের সাথে রাণা দাশগুপ্তের সাক্ষাৎ গোপীবাগ (টিটিপাড়া) রেলওয়ে হরিজন ও তেলেগু কলোনীর বাসিন্দারা বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) বিকালে অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্তের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এসময় তারা তাদের বাসস্থান ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করার জন্য ঐক্য পরিষদের আন্তরিক চেষ্টার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের পাশে থাকার জন্য রাণা দাশগুপ্তকে তারা অনুরোধ করেন। এ সময় অ্যাডভোকেট দাশগুপ্ত বলেন, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ বাংলাদেশের সকল ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুর সমঅধিকার নিয়ে বসবাসের নিশ্চয়তা প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে লড়াই সংগ্রাম করে যাচ্ছে। হরিজন ও তেলেগু সম্প্রদায়ের মানুষদের বসবাসের অধিকারের প্রশ্নেও ঐক্য পরিষদ সবসময় তাদের পাশে থাকবে। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক প্রাণতোষ আচার্য্য শিবু, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক বাপ্পাদিত্য বসু, গোপীবাগ কলোনীর বাসিন্দা রাজেন লাল, পারদ লাল, রাজীব চন্দ্র দাস।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App