×

জাতীয়

শনাক্ত করা দুরুহ জেনেই জাল স্ট্যাম্প তৈরি শুরু করে চক্রটি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৩, ০৪:৫৬ পিএম

শনাক্ত করা দুরুহ জেনেই জাল স্ট্যাম্প তৈরি শুরু করে চক্রটি
  • জড়িত ভেন্ডররা র‍্যাব নজরদারীতে
  • ৮-১০ রিম জাল স্ট্যাম্প তৈরি করা হতো মাসে
আসলে জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প শনাক্ত করার কাজটি বেশ দুরুহ। এ কারণেই এ চক্রের প্রধান মো. সোহেল কাজী (৩১) প্রথমে জাল টাকা বানানোর কথা ভাবলেও পরে নকল স্ট্যাম্প তৈরি কাজ শুরু করেন। তারা প্রতিমাসে ২-৫০০ টাকা মূল্যমানের ৮-১০ রিম কাগজের জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরি করতো। প্রতি রিম বিক্রি করা হতো আড়াই ২ লাখ টাকা করে। মূলত কিছু অসৎ কিছু ভেন্ডর ও ছাপাখানা মালিকদের সহায়তায় এ কাজটি করে যাচ্ছিলো চক্রটি। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন ভেন্ডরদের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের ধরতে কাজ চলছে। অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরী চক্রের অন্যতম হোতা সোহেল কাজী সহ ১০ জনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য জানান-র‍্যাব মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। বুধবার (১৪ জুন) দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারের র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক ও মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, র‌্যাব গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, এক শ্রেণীর প্রতারক চক্র দীর্ঘদিন ধরে আশুলিয়া বলিভদ্র এলাকায় অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি তৈরি করে সাধারণ জনগণের কাছে বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা সহ প্রতারণা করে আসছে। এছাড়াও এ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সরকারকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাব এসব প্রতারক চক্রকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বাড়ায়। এক পর্যায়ে মঙ্গলবার (১৩ জুন) সাভার আশুলিয়া ও মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরী চক্রের অন্যতম হোতা সোহেল কাজী সহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার বাকীরা হলেন- মো. জাহাঙ্গীর আলম ওরফে জাহিদ (৪০), মো. সোহেল রানা (৩৫), মো. সাব্বির হোসেন(২২), মোছা: সাবিনা ইয়াছমিন(৩০), মোছা: শাহনাজ আক্তার (৩১), কামরুল হাসান (২৬), মো. সুমন(২২), বিল্টু(১৯) ও সেন্টু মিয়া। এসময় র‌্যাব ২২ কোটি টাকার বেশী মূল্যমানের অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প, এসব তৈরীর মেশিন ও বিপুল পরিমাণ অন্যান্য সরঞ্জামাদি উদ্ধার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে কমান্ডার মঈন বলেন, জানা যায় চক্রটি প্রায় দুই বছর ধরে জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি তৈরী করে আসছিল। চক্রটি মূলত সোহেল কাজীর মাধ্যমে পরিচালিত হত। অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরি ও বিক্রয়ে অন্যান্যরা সোহেল কাজীর সহযোগি হিসেবে কাজ করত। গ্রেপ্তার সোহেল কাজী আগে বিভিন্ন প্রিন্টিং প্রেসে চাকরির সুবাদে সে বিভিন্ন রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরির কাজ রপ্ত করে। অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প চিহ্নিতকরণ সহজ না হওয়ায় ও বেশী মুনাফা লাভের আশায় সে নিজ ব্যবস্থাপনায় অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরি ও বিক্রয়ের পরিকল্পনা করে। আশুলিয়ার ‘কনফিডেন্স প্রিন্টিং’ প্রেসের মালিক ও অন্যান্য কর্মচারীদের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে এই ছাপা খানায় অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প ছাপার কাজ শুরু করে। ওই প্রেসে তার জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প মূদ্রণের কাজে নিয়োজিত ছিল। গ্রেপ্তারকৃত সাব্বির, সুমন, কামরুল সেন্টু ও বিল্টু। অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প মূদ্রণের পর পারফেক্ট মেশিনের মাধ্যমে কাটিং ও ছিদ্রকরণ করা হত। পরবর্তীতে গ্রেপ্তারকৃত জাহাঙ্গীরের মাধ্যমে রাজধানীর উত্তরা, বনানী, গুলশান ও সাভার, টঙ্গী সহ দেশের বিভিন্ন আদালতে কোর্ট ফি এবং জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প সরবরাহ করা হত। বিভিন্ন সময় অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প সরবরাহ করার সুবাদে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরি করতে পারে এমন অনেক ব্যক্তির পরিচয় হয় যারা তারা সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করে। এভাবে তারা ১০-১৫ জনের একটি চক্র গড়ে তুলে। এছাড়াও তার সাথে বিভিন্ন অনুমোদিত ভেন্ডরদের সাথে সু-সম্পর্ক থাকায় সে তাদের কাছে কমমূল্যে জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি সরবরাহ করত। ভেন্ডররা এসব জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করত। গ্রেপ্তারকৃতরা আরো জানায়, প্রাথমিক পর্যায়ে ১ রীম কাগজের জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরি করতে গড়ে তাদের খরচ হতো ৩০-৪০ হাজার টাকা। যা গ্রেপ্তারকৃত সোহেল তৈরি করে জাহিদের কাছে ১লাখ টাকায় বিক্রি করতো। পরবর্তীতে তিনি জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্পগুলো রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আনুমানিক ২ আড়াই লাখ টাকায় বিক্রি করত। এভাবে তারা প্রতি মাসে ৮-১০ রীম কাগজ দিয়ে অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরি করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করে আসছিল। মঈন বলেন, সোহেল কাজী প্রায় ১৬ বছর আগে মানিকগঞ্জ থেকে রাজধানীতে এসে বিভিন্ন প্রিন্টিং প্রেসে কাজ শুরু করে। তার নেতৃত্বে গত প্রায় ২ বছর ধরে চক্রটি জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি তৈরি ও বিক্রির কাজ করছিল। একপর্যায়ে অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরীর চাহিদা বেড়ে গেলে সোহেল কাজী এই কাজে স্ত্রী সাবিনা ইয়াছমিন সহ স্ত্রীর বড় ভাই সোহেল রানাকেও সম্পৃক্ত করে। ছাপাখানায় জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি মূদ্রণের পর সোহেল রানার বাসায় পারফেক্ট মেশিনের মাধ্যমে কাটিং ও ছিদ্রকরণসহ পরবর্তী ধাপের কার্যক্রম সম্পন্ন করা হতো। এছাড়াও তার একটি নিজস্ব ট্রাক রয়েছে। উক্ত ট্রাকের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে মালামাল পরিবহনের আড়ালে সে বিভিন্ন সময় অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প সরবরাহ করত। গ্রেপ্তারকৃত সোহেল কাজীর বিরুদ্ধে মানিকগঞ্জ থানায় একটি মামলা রয়েছে এবং উক্ত মামলায় সে কারাভোগ করেছে। কোর্ট ফী স্ট্যাম্প জামিন নেয়া সহ নানা কাজে ব্যবহৃত হয় চক্রটি এমন কাজ করছিল কী? এমন প্রশ্নের জবাবা র‍্যাব মুখ পাত্র বলেন, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত স্থান থেকে অনুমোদিত মূল্যে স্ট্যাম্প সংগ্রহ করে ভেন্ডরদের বিক্রি করার কথা। কিন্তু তা না করে এমন কাজ হচ্ছে। মুলত এ কাজ থেকে ভেন্ডররা লাভবান হচ্ছে। আমাদের কাছে এমন ভেন্ডারদের তথ্য রয়েছে তাদের গ্রেপ্তারে কাজ চলছে। তবে স্ট্যাম্প আসল না নকল তা শনাক্ত একটু কঠিন। তাই সচেতনতার কোন বিকল্প নেই বলেও জানান তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App