×

জাতীয়

খুলনার উন্নয়ন ভাবনা ও ব্যক্তি ইমেজেই খালেকের বাজিমাত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৩, ০৮:১২ এএম

খুলনার উন্নয়ন ভাবনা ও ব্যক্তি ইমেজেই খালেকের বাজিমাত

ফাইল ছবি

খুলনার উন্নয়ন ভাবনা ও ব্যক্তি ইমেজেই খালেকের বাজিমাত

তালুকদার আবদুল খালেক

খুলনা-বরিশালে ‘উন্নয়ন’ ম্যাজিক

খুলনায় তৃতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক। বরিশালবাসী নগরপিতা হিসেবে বেছে নিয়েছেন একই দলের আবুল খায়ের আব্দুল্লাহকে (খোকন সেরনিয়াবাত)। দুজনেই নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়েছেন বড় ব্যবধানে। তাদের এই ভূমিধস বিজয়ের পেছনে কাজ করেছে কোন কোন উপাদান? স্থানীয় ভোটার ও বিশ্লেষকদের মতে, দুই নগরবাসীর উন্নয়নের আকাক্সক্ষাই এক্ষেত্রে কাজ করেছে প্রধান নিয়ামক হিসেবে। রয়েছে প্রার্থীদের নিজস্ব ভাবমূর্তিসহ অন্য ফ্যাক্টরও।

এসব নিয়ে খুলনা ও বরিশাল থেকে পাঠানো আমাদের পৃথক দুটি প্রতিবেদন-

তালুকদার আব্দুল খালেক তৃতীয়বারের মতো খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় নগরজুড়ে উৎসবের আমেজ। বিপুল ভোটে তার জয়ের পেছনে কোন কোন ফ্যাক্টর কাজ করেছে- এখন তাই নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। দলীয় ভোটের বাইরে তালুকদার আবদুুল খালেক কোন শ্রেণির মানুষের ভোট পেয়েছেন, হাতপাখা প্রার্থী ৬০ হাজার ভোট কীভাবে পেলেন, বিএনপি ও জামাত দলীয়ভাবে ভোট বর্জনের পরও দল দুটির কর্মী সমর্থকরা ভোটকেন্দ্রে গিয়েছেন কিনা- এসব আলোচনা সর্বত্র। তবে একটি বিষয়ে সবাই একমত- খুলনাবাসী ভোট দিয়েছেন নগরীর উন্নয়নের ভাবনা মাথায় রেখেই।

বিশ্লেষকদের মতে, তালুকদার খালেক আগের দুবার মেয়র থাকাকালে খুলনার উন্নয়নে তার সর্বাত্মক প্রয়াস নজর কেড়েছে সবার। এর প্রতিদান তাকে ব্যালটের মাধ্যমে দিয়েছেন ভোটাররা। বিশেষত ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী নির্বাচিত হলে স্থানীয় উন্নয়নে আরো বেশি অবদান রাখতে পারবেন- এই যুক্তি প্রভাবিত করেছে সাধারণ মানুষকে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তালুকদার খালেকের ব্যক্তি ইমেজ। তার স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ও জনসম্পৃক্ততা বিবেচনায় নিয়েছেন সব পর্যায়ের মানুষ। তাতেই হ্যাট্রিক বাজিমাত খালেকের।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও তালুকদার আব্দুল খালেকের নির্বাচনী প্রচারণার দায়িত্বপ্রাপ্ত এস এম কামাল হোসেন বলেন, খুলনার মানুষ তালুকদার আব্দুল খালেকের প্রতি আস্থা রেখেছিলেন। এখানকার মানুষ জানতেন তিনি মেয়র পদের জন্য যোগ্য ব্যক্তি। খুলনার উন্নয়নে আওয়ামী লীগ ও তালুকদার খালেকের কোনো বিকল্প নেই। ভোটের মাধ্যমে খুলনা নগরীর মানুষ তার প্রতিদান দিয়েছেন। এ কারণেই তালুকদার আব্দুল খালে তৃতীয়বারের মতো খুলনার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।

হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী এত বেশি ভোট কীভাবে পেলেন- এমন প্রশ্ন এস এম কামাল বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক ধারার রাজনীতি করে না বলেই নির্বাচনে আসেনি। তাদের নেতাকর্মীদের ভোটকেন্দ্রে যেতে নিষেধ করেছিল। কিন্তু ভোটের দিন বিএনপির-জামায়াতের নেতাকর্মীরা ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে গেছেন। তারা নৌকার প্রার্থীকে হারাতে চেয়েছিল। এজন্য তারা হাতপাখার মেয়র প্রার্থীকে ভোট দিয়েছে। এ কারণে ওই প্রার্থী ৬০ হাজার ভোট পেয়েছেন। আগে এই দলটি ভোট পেতে পেত মাত্র ১০ হাজার।

খুলনার সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, খুলনায় সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সব নেতাকর্মীরা একত্রিত ছিলেন। এখানে কোনো বিভক্তি ছিল না। সবাই একসঙ্গে কাজ করেছেন। আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের সব নেতা একত্রিত হয়ে কাজ করেছেন। তাছাড়া ১৪ দলের শরিক দলগুলোর নেতারা নৌকার পক্ষে ছিলেন। প্রতিটি ওয়ার্ডে নেতাকর্মীরা সাধারণ মানুষের কাছে নৌকা প্রতীকের জন্য ভোট চেয়েছেন। এই সম্মিলিত টিম ওয়ার্কের প্রতিফলন নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেছে। খুলনা সিটি করপোরেশনকে দুর্নীতিমুক্ত রেখেই তালুকদার আব্দুল খালেক নাগরিক উন্নয়ন কার্যক্রম চালিয়েছেন। দুর্নীতিবিরোধী কর্মকাণ্ড খুলনাবাসীর কমবেশি জানা আছে। এ কারণেই খালেকের ওপর তাদের আস্থা ছিল, ভোট দিয়েছে।

নৌকার মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে। বিএনপি ভোটের মাঠে না আসায় তিনি এবার অনেকটাই স্বস্তিতে ছিলেন। কিন্তু তাই বলে তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় হেলাফেলা করেননি। তিনি ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চেয়েছেন। ব্যবসায়ী, শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধা, সুশীল সমাজ, বিভিন্ন পেশার শ্রমজীবী মানুষের কাছে তিনি ছুটে গেছেন। এসব পেশাজীবীদের মধ্যেও নৌকা মার্কার পক্ষে প্রচারণা চালানো হয়েছে। এতে ভোটারদের সঙ্গে তার সম্পর্কের উন্নয়ন হয়েছে, ভোটাররা তাকে ভোট দিয়েছে, তাই তিনি আবারো মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। খুলনার পাটকলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বহু শ্রমিক খুলনা থেকে চলে যায়। তারা একসময় খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ভোটার ছিল। এবার নির্বাচনে খালিশপুর দৌলতপুর এলাকায় বসবাসরত বিপুল সংখ্যক শ্রমিক তালুকদার খালেককে ভোট দেয়ার জন্য বরিশাল, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে খুলনায় এসেছেন।

খুলনা সাধারণ মানুষ মনে করে, খুলনা নগরীর উন্নয়নে তালুকদার আব্দুল খালেক আপসহীনভাবে কাজ করেছেন। নগরীর রাস্তাঘাট ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে। নগরীর প্রায় সব এলাকায়ই তার পরিকল্পনায় অনেক উন্নয়ন কাজ হয়েছে, যা এখনো চলছে। বিগত পাঁচ বছরে তিনি খুলনা মহানগরীতে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। এলাকাবাসী মনে করেছে তিনি আবারো মেয়র নির্বাচিত হলে নগরীর উন্নয়ন হবে। তিনি এই মুহূর্তে নির্বাচিত না হলে নগরীর উন্নয়নের ধারা ভেঙে পড়বে। তাই সাধারণ মানুষ তালুকদার আব্দুল খালেককে ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছে।

নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের পাশাপাশি ব্যক্তি ইমেজ খুবই জরুরি। তালুকদার আব্দুল খালেকের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগের জন্য একজন নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তি। সিটি করপোরেশনকে তিনি দুর্নীতি মুক্ত রেখেছেন বলে সুনামও আছে। খুলনায় ব্যক্তি খালেকের কোনো চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। নিবেদিত প্রাণ আওয়ামী লীগ নেতা।

শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকাও তালুকদার আব্দুল খালেকের বিজয়ের অন্যতম কারণ। বিএনপি-জামায়াত এক হয়ে ভোটের মাঠে নামলে নৌকার বিজয় সহজ হতো না। সবাই জানত, জাতীয় পার্টির উপর মানুষের আস্থা নেই, হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী এখানে সুবিধা করতে পারবে না। বিএনপির প্রার্থী না থাকায় নির্বাচনী প্রচারণা শুরু থেকেই জনমত খালেকের পক্ষেই ছিল।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App