×

জাতীয়

দুই সিটিতে সোমবার ভোট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৩, ০৯:২৫ এএম

দুই সিটিতে সোমবার ভোট

নির্বাচন ভবন

শেষ দিনের প্রচারণায় উৎসবমুখর দুই নগরী

প্রচার-প্রচারণা শেষ। ভোটের জন্য প্রস্তুত খুলনা এবং বরিশাল সিটি করপোরেশন। প্রস্তুত দুই সিটির ভোটাররা। আর শেষ দিনের প্রচারণায় সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ক্লান্ত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা ঘরে ফিরেছেন গতকাল শনিবার রাত ১২টায়। সোমবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এই দুই সিটি করপোরেশনের ভোটগ্রহণ করা হবে। সুষ্ঠু ভোটের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। খুলনায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি ১১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বরিশাল সিটি করপোরেশনে কড়া নিরাপত্তাবলয় তৈরি করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। খুলনা থেকে বাবুল আকতার এবং বরিশাল থেকে এম কে রানার পাঠানো প্রতিবেদন।

পথসভায় উৎসবের নগরী খুলনা : শেষ মুহূর্তে গণসংযোগ, পথসভার মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় গতকাল শনিবার ব্যস্ত দিন পার করলেন খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীরা। গতকাল রাত ১২টা পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণার শেষ সময় থাকায় প্রার্থী, সমর্থক ও দলীয় নেতাকর্মীদের গণসংযোগ, পথসভা ও প্রচার প্রচারণায় মুখরিত ছিল গোটা শহর। ফজরের নামাজ শেষে মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে নির্বাচনের কাজ শুরু করেন প্রার্থীরা। ভোটারদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে বিরামহীন পরিশ্রম করে ভোট ও দোয়া চান তারা। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগে মাঠে ছিলেন নৌকা প্রতীকের তালুকদার আব্দুল খালেক, লাঙ্গল প্রতীকের শফিকুল ইসলাম মধু, ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা আব্দুল আউয়াল ও জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম মসফিকুর রহমান।

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক গতকাল সকাল ৯টায় নগরীর খালিশপুর ১২ নং ওয়ার্ড ঊর্দু ভাষী ক্যাম্প থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। পরে তিনি ১৩ ও ১৫নং ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে নৌকা প্রতীকে ভোট চান।

গণসংযোগকালে বিভিন্ন স্থানে দফা দফায় পথসভায় তিনি বলেন, জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও পরিচ্ছন্ন বাসযোগ্য ও মাদকমুক্ত নগরী গড়ে তুলব। কোনো মাদক বিক্রেতা বা সেবনকারী জনপ্রতিনিধি হতে পারে না। মাদকমুক্ত খুলনা গড়তে সবার সহযোগিতা ও নৌকায় ভোট চান তিনি। গণসংযোগ ও মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন শেখ মঞ্জুরুল আলম, মনিরুজ্জামান মনি, পারভীন আক্তার, আজিজুল হক স্বপন, ওয়াহেদুজ্জামান, ইঞ্জিনিয়ার চৌধুরী মিরাজ, তাজুল ইসলাম, ৭নং ক্যাম্প সভাপতি সাকিল খান, ৩নং ক্যাম্প সভাপতি মো. আলী, ১নং ক্যাম্প সভাপতি শাহাবুদ্দিন আনসারী প্রমুখ।

এদিকে কেসিসি নির্বাচনকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো অপপ্রচার বিভ্রান্তি ও বিশৃঙ্খলার আশ্রয় নিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে খুলনা ১৪ দলীয় জোট। গতকাল দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ১৪ দলীয় জোটের নেতারা বলেন, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে উৎসাহিত করাসহ তিনটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছি। আমরা প্রমাণ করব শেখ হাসিনার অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

বিএনপি নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে ষড়যন্ত্র করতে পারে, বিশৃঙ্খলার আশ্রয় নিতে পারে। ভোটারদের বলব- আপনারা কোনো ধরনের গুজবে কান দেবেন না। বিশৃঙ্খলার সৃষ্টিকারীদের কঠোরভাবে দমন করতে নির্বাচন কমিশন প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তৎপর রয়েছে। আমরা ১৪ দলের সব কর্মীরা যার যার এলাকার ভোটারদের তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকা পালন করব।

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ক্ষমতা পরিবর্তনের গণতান্ত্রিক পদ্ধতি হচ্ছে নির্বাচন। যারা মনে করে নির্বাচনে অংশ না নিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া যায় তারা ভুল করছেন। অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যারা এখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র করছে তাদের আশা পূরণ হবে না। খুলনার মানুষ যোগ্য প্রার্থী হিসেবেই নৌকায় ভোট দেবেন।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন খুলনা নগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এম ডি বাবুল রানা, ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা দেলোয়ার উদ্দীন দিলু, জাসদ নেতা খালিদ হোসেন, শেখ গোলাম মর্তুজা, ন্যাপের মো. নাসির উদ্দিন, জাতীয় পার্টির (জেপি) নেতা এডভোকেট আব্দুল হালিম, সাম্যবাদী দলের এফ এম ইকবাল, গণতন্ত্রী পার্টির সোলায়মান হাওলাদার ও জাকের কর্মী গ্রুপের গোলাম নবী মাসুম প্রমুখ।

ইসলামী আন্দোলন মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাফেজ মাওলানা আব্দুল আউয়াল বলেছেন, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় হাতপাখার বিকল্প নেই। হাতপাখা মানুষের মাঝে আদর্শিক পরিবর্তনের আহ্বান নিয়ে এসেছে। দুর্নীতি, দুঃশাসন, চাঁদাবাজ ও চোরাচালানি বন্ধে হাতপাখাই আমাদের মূল হাতিয়ার। স্বাধীনতার পর থেকে বারবার সরকার পরিবর্তন হয়েছে, নেতার পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত থেকেছে খুলনার মানুষ। এই অবস্থার পরিবর্তনের লক্ষ্যে আগামী ১২ জুন হাতপাখা মার্কায় ভোট দেবার আহ্বান জানান তিনি। গণসংযোগ ও পথসভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন, সহকারী পরিচালক মুফতী আমানুল্লাহ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা জেলা সভাপতি মাওলানা আব্দুল্লাহ ইমরান সমন্বয়নকারী মুফতি ইমরান হুসাইন প্রমুখ।

জেপির ভাইস চেয়ারম্যান ও দলীয় প্রার্থী শফিকুল ইসরাম মধু সকাল ১০টায় ২৯নং ওয়ার্ড হাজী মহসিন রোডের পিবিআই মোড় থেকে প্রচারণা শুরু করেন। পরে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভায় তিনি বলেন, এখন সময় এসেছে নগরবাসীর সেবা বুঝে নেয়ার। প্রতারণার জবাব দেয়ার। লাঙ্গল প্রতীকে ভোট দিয়ে খুলনাবাসী তাদের অধিকার বুঝে নেবে। গণসংযোগকালে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মাওলানা আল জুবায়ের, নগর সভাপতি এডভোকেট মহানন্দ সরকার, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন ও জেলার সাধারণ সম্পাদক এম হাদিউজ্জামান প্রমুখ।

জাকের পার্টির প্রার্থী এস এম সাব্বির হোসেন সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি রিকশা ও ইজিবাইক চালকদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। পরে তিনি নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে গোলাপফুল প্রতীকে ভোট চান। স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এস এম শফিকুর রহমান মুসফিক সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালান। এ সময় তিনি জনতার প্রার্থী দাবি করে টেবিল ঘড়ি প্রতীকে ভোট চান।

এদিকে সোমবার খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ ব্যপারে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দীন বলেন, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে। এবারের নির্বাচনে নগরের ৩১টি ওয়ার্ডে ২৮৯টি ভোটকেন্দ্রে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে নারী ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৬ জন ও পুরুষ ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮৩৩ জন।

খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বলেন, নির্বাচনে নিরাপত্তার জন্য খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকায় ১১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। তারা গতকাল থেকে ৪ দিন নির্বাচনের মাঠে দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া ১১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এই বিজিবির টিমের সঙ্গে থাকবেন।

বিরামহীন প্রচারণা বরিশালের প্রার্থীদের : বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিরামহীন প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলেন প্রার্থীরা। দিনভর বৃষ্টি উপেক্ষা করেই তারা ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট ও দোয়া প্রার্থনা করেন। মেয়র প্রার্থীদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে স্ত্রী এবং আত্মীয়-স্বজনরা যোগ দিয়েছেন। সভা ও সমাবেশ নিষিদ্ধ থাকায় প্রার্থীরা নিজেরা ও তাদের পক্ষে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বিভক্ত হয়ে গণসংযোগ করেন। হ্যান্ডবিল বিতরণসহ ব্যানার ও পোস্টারে তিল ধারণের ঠাঁই নেই নগরীর প্রাণকেন্দ্রে।

গতকাল পর্যন্ত বরিশালের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক ছিল। যদিও গণসংযোগকালে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী অভিযোগ করেছেন, গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করছেন। সরকারের দুয়েকটা গোয়েন্দা সংস্থা একজন বিশেষ প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে। অন্যদিকে হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী মুফতি ফয়জুল করীমের পক্ষ থেকে ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে তার নির্বাচনী প্রচারণাকালে হামলার ঘটনায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আইনি ব্যবস্থা চেয়ে আবেদন এবং তাদের প্রচার-প্রচারণায় বাধা দেয়ার জন্য পুলিশের তিন সাব-ইন্সপেক্টরকে নির্বাচনী দায়িত্ব না দেয়ার জন্য পুলিশ কমিশনারের কাছে আবেদন দিয়েছেন। তবে নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার আশা ব্যক্ত করে বলেন, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে অঙ্গীকারাবদ্ধ। তাছাড়া দেশে উন্নয়নের যে মহাসড়কে অবস্থান করছে তাতে সাধারণ মানুষ নৌকাকে ভোট দেবেন।

এদিকে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপন শনিবার দুপুরে ৩০ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। বরিশালকে মানবিক ও সবুজ নগরীতে রূপান্তরের লক্ষ্যে সাধারণ নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষা ও জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে ত্রৈমাসিক মেয়রের জবাবদিহিতা, নগরবাসীর অধিকার কর্মসূচি চালু করা, বাড়তি পৌরকর আরোপ না করা, জলাবদ্ধতা নিরসন, খাল খনন, আউট সোর্সিং সহায়তা কেন্দ্র সেল প্রতিষ্টা করা, হকারদের পুনর্বাসন ও হলিডে মার্কেট চালু করতে চান তিনি।

এদিকে গতকাল রাত ১২টা থেকে সব ধরনের প্রচার ও প্রচারণা বন্ধ হয়েছে। আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির জানান, আগামীকাল শান্তিপূর্ণভাবে ভোট নেয়ার সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ম্যাজিস্ট্রেরিয়াল দায়িত্ব পালনের জন্য ৩০ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ১০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App