×

জাতীয়

স্মার্ট লুটপাটের বাজেট দিয়েছে সরকার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২৩, ০৮:২০ এএম

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘বাস্তবতা বিবর্জিত, প্রতারণামূলক, লোক দেখানো’ হিসাবে বর্ণনা করে কলমের ওপর ভ্যাট আরোপের উদাহরণ টেনেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, সরকার শিক্ষার কথা বলে অথচ দাম বাড়ায় কলমের, ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলে দাম বাড়ায় ল্যাপটপ-মোবাইল ফোনের, গরিবের কথা বলে অথচ পরোক্ষ কর আরোপ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর।

জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবের ছয় দিন পর গতকাল বুধবার দলের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন। মূল্যস্ফীতি, বাজেট ঘাটতি, রাজস্ব প্রাপ্তি, আয়-বৈষম্য, করারোপে বৈষম্য, অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণ, বাজেট বাস্তবায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষি খাতে বরাদ্দের সঙ্গে বাস্তবতার বিশ্লেষণ এ সময় তুলে ধরেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এবারের বাজেট স্পষ্টতই জনগণের সঙ্গে প্রতারণা। সাধারণ ও দরিদ্র জনগণের জন্য কোনো সুখবর নেই। নেই চরম অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণের কোনো দিক নির্দেশনা। বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি ও বিনিয়োগসহ সামষ্টিক অর্থনীতির যেসব প্রক্ষেপণ করা হয়েছে তা ‘অর্জনযোগ্য নয়’।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ। এই চাপ মোকাবিলায় প্রস্তাবিত বাজেটে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই। বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবহন, খাদ্যসহ তেল, চাল, আদা, চিনি, ডিম, মুরগিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অনেক আগেই মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। অর্থমন্ত্রী বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কোনো পথরেখা না দিয়েই কীভাবে মূল্যস্ফীতির টার্গেট ৬% ঘোষণা করেছেন তা বোধগম্য নয়।

বাজেটে দুর্নীতি ও অর্থপাচার প্রতিরোধে কোনো দিক নির্দেশনা নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, ক্ষমতার বলয়ের বাইরে সাধারণ মানুষের অনুকূলে এই বাজেট কোনো ভূমিকা রাখবে না। এটা গণবিরোধী বাজেট। স্মার্ট বাংলাদেশে এবার তারা স্মার্ট লুটপাটের বাজেট দিয়েছে। তারা চুরিতে স্মার্ট। ভোট চুরি, ব্যাংক চুরি, অর্থ পাচার এ সবকিছুতেই স্মার্টলি লাখ লাখ কোটি টাকার দুর্নীতি, ব্যাংক লুটপাট, সিন্ডিকেট পরিচালনা, জনগণের সম্পদ লুটের পাকা বন্দোবস্ত করা হয়েছে এই বাজেটে। ¯্রফে দুর্নীতিবাজ বর্তমান সরকারের আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার লুটের লক্ষ্যে প্রণীত অর্থ লুটেরাদের বাজেট।

স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষি খাতে আনুপাতিক হারে বরাদ্দ কমানোরও সমালোচনা করেন বিএনপির মহাসচিব। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়েনি দাবি করে তিনি বলেন, বাজেট ও জিডিপির অনুপাতে এই খাতে বরাদ্দ কমেছে। বরাদ্দ বেশি দেখানোর কৌশল হিসেবে এই খাতে এমন কিছু কর্মসূচি দেখানো হয়েছে- যা বাস্তবে সামাজিক নিরাপত্তা সুরক্ষা কর্মসূচি নয়।

কৃষি খাতে ভর্তুকি, সঞ্চয়পত্রের সুদ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের দেয়া প্রণোদনার টাকাকে সামাজিক নিরাপত্তা বরাদ্দ হিসেবে দেখানোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, বয়স্ক নারী-পুরুষ, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ও প্রতিবন্ধীদের মাসিক ভাতা মাত্র ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে ঢাকায় প্রতিবন্ধীরা বিক্ষোভ করেছে, পুলিশের পিটুনি খেয়েছে।

বিদ্যুতের লোডশেডিং নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমাদের প্রশ্ন টাকা গেল কই? সাধারণ মানুষ তো তাদের বিদ্যুতের বিল দিয়েই যাচ্ছে। তাহলে কেন কয়লা গ্যাস ও তেলের জন্য এলসি খুলতে পারছে না?

তিনি প্রশ্ন রাখেন- টাকাও নাই, ডলারও নাই। কই গেল সব? এই টাকা কোথায় গেছে আমরা সবাই জানি। বিদেশে সম্পদ কেনা হচ্ছে, সুইস ব্যাংকে টাকা রাখা হচ্ছে। তারপরে অফশোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা রাখা হচ্ছে। কারা এই টাকার মালিক এটাও দেশের মানুষ কমবেশি জানে।

বিদ্যুৎ সংকট সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সারাদেশে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে সবার ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। অথচ উদ্বৃত্ত বিদ্যুতের ফেরি করে বিক্রি করতে হবে- পার্লামেন্টে অহমিকা করেছে সরকার। বিদ্যুতের এই সংকটের মূল কারণ ‘দুর্নীতি ও লুটপাট’ দাবি করে তিনি বলেন, কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে শুরু করে আদানি পর্যন্ত পুরোটাই লুটপাট।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App