×

জাতীয়

দুহাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি কমানো যাচ্ছেই না

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৩, ০৯:২০ এএম

দুহাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি কমানো যাচ্ছেই না

ছবি: সংগৃহীত

বিদ্যুতে ভোগান্তি থেকে সহজেই মুক্তি মিলছে না। দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি আপাতত কোনোভাবেই কমানোর সুযোগ নেই। আদানির বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার পরও সুফল মেলেনি। লোডশেডিং অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা এখন রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুই ইউনিটের উৎপাদনের দিকে তাকিয়ে আছেন। লোডশেডিংয়ের জন্য গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো পিডিবিকে দায়ী করছে। আর পিডিবি বলছে, জ্বালানি সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন না হওয়ায় বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আগামী মাসের মধ্যে রামপালসহ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র পূর্ণমাত্রায় উৎপাদনে এলে বিদ্যুতের ঘাটতি ৬০ শতাংশের নিচে নেমে আসবে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু পিডিবি গ্রাহক চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারেনি। কম বেশি ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। উৎপাদনে ঘাটতির জন্য একদিকে দেশীয় গ্যাস ক্ষেত্রগুলোতে উৎপাদন কমে যাওয়া, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় স্পট মার্কেট থেকে পর্যাপ্ত এলএনজি কিনতে না পারা, জ¦ালানি তেলের অভাবে ডিজেলচালিত কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকা এবং সর্বোপরি ডলার সংকটের কারণে বিদ্যুৎ বিভাগকে বহুমুখী সংকটে পড়তে হয়।

অন্যদিকে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেচ মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা, শিল্প খাতে উৎপাদন অব্যাহত রাখতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করার কারণে আবাসিক পর্যায়ে গ্রাহকদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তাছাড়া এ বছর তীব্র গরমে বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় বেশি বিদ্যুৎ খরচ হয়েছে। লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি রাজধানী ঢাকাসহ শহরগুলোতে কিছুটা কম হলেও মফস্বল পর্যায়ে লোডশেডিং চরম আকার ধারণ করেছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, দেশের লোডশেডিং পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। আরো অন্তত এক মাস সময় লাগবে। জুন মাসের পর বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়বে। তখন লোডশেডিং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম কমতে শুরু করেছে। আরো একটু কমলেই স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা হবে। গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এটা করতে পারলে বিদ্যুতের উৎপাদনও বাড়বে।

তিনি বলেন, গ্যাসের পর্যাপ্ত যোগান না থাকায় গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন কমে গেছে। সেচ ও শিল্পকারখানায় গ্যাস সরবরাহ করতে গিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো সংকটে পড়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, গরমের সময় গ্যাস থেকে ৬ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট, ফার্নেস অয়েল থেকে ৫ হাজার মেগাওয়াট, কয়লা থেকে ৩ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট এবং অন্যান্য উৎস থেকে ১ হাজার মেগাওয়াটসহ মোট ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি বলেই বিদ্যুৎ সংকট চলছে।

পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন জানান, জুন মাসের শেষ দিকে বিদ্যুতের ঘাটতি কমে আসবে। এই সময়ের মধ্যে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুইটি ইউনিট পূর্ণমাত্রায় উৎপাদনে আসবে। এস আলমের বিদ্যুৎকেন্দ্রটিও উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। মহেশখালিতে ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলএনজি টার্মিনাল পুরোপুরি সচল হবে। এর ফলে ১ হাজার থেকে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। এতে সংকট অনেক কমে আসবে। উৎপাদনে ঘাটতি এবং লোডশেডিং দুটোই কমবে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. বদরূল ইমাম বলেন, বিদ্যুৎ সেক্টরকে সচল রাখতে এবং জ¦ালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বড় ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কিন্তু সঠিক ও সময়োপযোগী পরিকল্পনার অভাবেই গ্যাস ও বিদ্যুৎ সেক্টরে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা যখন সরকারকে দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য বার বার অনুরোধ জানিয়েছি, তখন সরকার উচ্চমূল্যের এলএনজির দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এখন হোঁচট খেয়ে দেশীয় গ্যাস উত্তোলনে কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ভোলায় বিপুল পরিমাণ গ্যাস পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, আমদানিকৃত কয়লার ওপর নির্ভর করায় রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বার বার হোঁচট খাচ্ছে। ডলার সংকটের কারণে ইন্দোনেশিয়া থেকে সময়মতো কয়লা আনা সম্ভব হচ্ছে না। এই অবস্থা চলতে থাকলে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনেও সমস্যার সৃষ্টি হবে। এখন আমাদের দেশীয় কয়লা উত্তোলন ও ব্যবহারের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে ভাবতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App