×

জাতীয়

সুসম্পর্কের সুবাদে বাড়তি এলএনজি চায় বাংলাদেশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৩, ০৮:৫৬ এএম

সুসম্পর্কের সুবাদে বাড়তি এলএনজি চায় বাংলাদেশ

তিন মাসে দ্বিতীয়বার কাতারে প্রধানমন্ত্রী

মাত্র তিন মাসের মাথায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বারের মতো কাতার সফরকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং বহুমাত্রিক বলে মনে করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে কাতারের দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় কূটনীতির এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। ওআইসি সদস্যপদ এবং মুসলিম পরিচয় এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সাহায্য করছে। গতকাল বিকালে প্রধানমন্ত্রী কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল থানির আমন্ত্রণে ‘তৃতীয় কাতার অর্থনৈতিক ফোরাম : নতুন বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির গল্প’ শীর্ষক ফোরামে যোগ দেয়ার জন্য ঢাকা ছাড়েন। আজ ও আগামীকাল দুদিনে প্রধানমন্ত্রী দেশটিতে নানা কর্মসূচিতে যোগ দেবেন। ২৫ মে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি বছরের মার্চে জাতিসংঘের পঞ্চম এলডিসি সম্মেলনে কাতার সফর করেন।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, তৃতীয় কাতার ইকোনমিক ফোরামে যোগ দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী কাতার গেলেও সফরে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় আলোচনার পাশাপাশি কাতারের কাছ থেকে এলএনজিসহ জ্বালানি খাত বিষয়ে দেশটির আমিরের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হবে। বেশি পরিমাণে এলএনজি পাওয়ার জন্য গত মার্চে আলোচনা শুরু করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সে সময় দেশটির আমির প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। এবারের আলোচনায় এলএনজি নিয়ে আলোচনা নতুন গতি পাবে। পাশাপাশি কাতারের আমিরের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশ-কাতারের মধ্যে অনেক অনিষ্পন্ন বিষয়ও আলোচনায় আসবে, যা থেকে দুই দেশেরই লাভ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর কাতার সফর নিয়ে গতকাল সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, চলতি বছর তিন মাসের মধ্যে কাতারে প্রধানমন্ত্রীর দুই দফা সফর আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের দৃশ্যমান উপস্থিতির পাশাপাশি ভ্রাতৃপ্রতিম কাতারের সঙ্গে নিবিড় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের স্বাক্ষর বহন করে। সফরে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরে কাতারের আমিরের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এলএনজি নিয়ে আলোচনা হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, আমরা এখন কোটার ভিত্তিতে কাতার থেকে জ্বালানি সংগ্রহ করি। এতে আমাদের পোষাচ্ছে না। কাতারের কাছে আমরা আরো বেশি জ্বালানি চেয়েছিলাম। তারা আগে বলেছিল, আমাদের প্রস্তাব নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে। তিনি বলেন, জ্বালানি খাত কাতারের অনেক বড় খাত। এজন্য আমরা তাদের কাছ থেকে অধিকতর জ্বালানি চাই। এতদিন তারা বিশ্বকাপ ফুটবল খেলাধুলার জন্য ব্যস্ত ছিল। এখন আমরা সম্পর্ক বাড়াতে চাইছি।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, কাতার শীর্ষ জ্বালানি উৎপাদনকারী দেশগুলোর একটি। কাতারের কাছ থেকে জ¦ালানি আমদানি করতে বাংলাদেশ এরই মধ্যে ১৫ বছরের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। বর্তমানে প্রাকৃতিক গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান জ্বালানি সংকট মেটাতে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির কাছে বছরে আরো এক মিলিয়ন টন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) চেয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে কাতারের আমির বাংলাদেশকে জ্বালানি সরবরাহের আশ্বাস দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের অনুরোধের পর কাতারের আমির প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলেন, আমি আমাদের জ্বালানিমন্ত্রীকে নির্দেশনা দিচ্ছি। কাতার সব সময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে। এছাড়া বাংলাদেশ ও কাতার সম্প্রতি তাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করেছে। কাতারের ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে বাংলাদেশের জ্বালানি, এলপিজি স্টোরেজসহ টার্মিনাল, বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছেন। মূলত প্রধানমন্ত্রীর চলমান কাতার সফরে সেসব বিষয়েই আলোচনা হবে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যসহ সব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে। তাই এই সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় আরো জোরালো ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়। তবে এই সফরের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো বাংলাদেশ-কাতার সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা। বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে গত এক দশকে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। সম্প্রতি এই সম্পর্ক আরো মজবুত হচ্ছে। একসময় বাংলাদেশ-কাতার সম্পর্ককে শুধু বাংলাদেশি শ্রমিকদের বাজার হিসেবে দেখা হতো, এখন এই সম্পর্কের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিক প্রকাশিত হয়েছে। সেই সম্পর্কের দিক বিবেচনা করে জ্বালানি সহযোগিতা এই সফরের সময় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ চায় কাতার আরো এলএনজি সরবরাহ করুক। বাংলাদেশকে আরো বেশি এলএনজি সরবরাহ করলে কাতারের জন্য বাংলাদেশে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশেরও একটি বড় বাজার রয়েছে। তাই কাতারের বিনিয়োগ আকর্ষণের বিষয়টি সামনে এসেছে।

কাতারের ইকোনমিক সম্মেলনে বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি কাতারের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেবেন। সবমিলিয়ে একটি বড় অগ্রগতি আশা করা হচ্ছে। এছাড়া কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক দৃঢ় হচ্ছে। বাংলাদেশ ও কাতার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের চ্যালেঞ্জের দিকে একই অবস্থানে আছে। স্বভাবতই বাংলাদেশ আশা করে বাংলাদেশের সমস্যা সমাধানে কাতার বড় ভূমিকা পালন করবে। বিশেষ করে এমন সময়ে যখন রোহিঙ্গাদের প্রতি বিশ্বব্যাপী সমর্থন কমে যাচ্ছে, ওআইসি দেশগুলো এগিয়ে আসতে পারে এবং কাতার এখানে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। কাতার থেকে নতুন সমর্থন আশা করা যেতে পারে- এবার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

সাম্প্রতিক ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, কাতার বর্তমান সময়ে একটি বিশেষ অবস্থান তৈরি করেছে। বিশেষ করে আরব বিশ্ব এবং মধ্যপ্রাচ্যে। পাশাপাশি বাংলাদেশের ঐতিহ্যগত দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষ করে আরব বিশ্বে। কারণ আশির দশকের বাংলাদেশ আর নেই। এই বাংলাদেশ একটি ভিন্ন বাংলাদেশ। কাতারসহ গোটা আরব বিশ্বের নজর দেয়া উচিত। বাংলাদেশ এখন আর শ্রমভিত্তিক অর্থনীতি নয়। আর এর প্রতিফলন দেখা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ ও কাতার অনেক পুরনো সম্পর্ক। এটি শুরু হয়েছিল ১৯৭৪ সালে ওআইসি সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর অংশগ্রহণ থেকে। চার দশক অতিক্রম করে এই সম্পর্ক এখন আরো শক্তিশালী কাঠামোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। উভয় দেশই এখন ‘উইন উইন’ পরিস্থিতি তৈরি করতে কাজ করছে। অংশীদারত্ব দুই দেশের মধ্যে অনেক দূর এগিয়ে যাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App