×

জাতীয়

মাঠে থেকেই ভোটের প্রস্তুতি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ মে ২০২৩, ০৮:১৭ এএম

মাঠে থেকেই ভোটের প্রস্তুতি

প্রতিটি আসনে প্রার্থী বাছাইয়ে কাজ করছে ৫১টি টিম রাখা হচ্ছে একাধিক বিকল্প প্রার্থী

‘জনগণ ব্যালট চায়, পুলিশের বুলেট নয়’, ‘ব্যালট চাই, ভোট দেব’- এমন নানা দাবির কথা প্ল্যাকার্ডে লিখে আজকাল দলীয় সমাবেশে হাজির হন বিএনপির নেতাকর্মীরা। ‘বডি ল্যাঙ্গুয়েজ’ বলে দেয় ভোটে যেতে মুখিয়ে আছেন তারা। সিনিয়র নেতারাও গদি ছেড়ে দিয়ে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন ক্ষমতাসীনদের প্রতি। বিশ্লেষকরা বলছেন- রাজপথে থেকেই ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এরই মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে তিন স্তরে মাঠে কাজ করছে দলটির ৫১টি টিম। তিনশ আসনে প্রাথমিক মনোনয়ন প্রায় চূড়ান্ত। তৈরি হচ্ছে ইশতেহার ও ঘোষণাপত্র। আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে চাঙা রাখা হচ্ছে নেতাকর্মীদের।

নির্বাচন প্রশ্নে দলটির শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য- এই মুহূর্তে বিএনপির একমাত্র লক্ষ্য নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়। সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ তৈরিতে তাদের মূল ফোকাস এখন আন্দোলন। নেতাদের দাবি, নির্বাচনের জন্যই বিএনপি আন্দোলন করছে। সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ের মাধ্যমেই বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। অর্থাৎ নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি অর্জন করাটাই হলো বিএনপির নির্বাচন প্রন্তুতি। তবে সূত্র বলছে, সরকার পতনের আন্দোলনের পাশাপাশি বিএনপির ভোটের প্রস্তুতি চলছে নেপথ্যে। এ বছরের শেষ কিংবা আগাম বছরের শুরুতে নির্বাচন হলেও যাতে প্রস্তুতির ঘাটতি না থাকে। লন্ডনে পলাতক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সিনিয়র নেতারা সমন্বয় করে পুরো কাজ গুছিয়ে আনছেন।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা ভোটের মাঠে যাব, চোরের মাঠে নয়। একটি নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য বিএনপি যে কোনো মুহূর্তেই প্রস্তুত আছে। আমাদের আস্থা হলো জনগণ। আন্দোলনের মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে হটিয়ে তবেই আমরা ভোটের মাঠে যাব।

মাঠে সক্রিয় রাখা হচ্ছে প্রার্থীদের : আন্দোলন কিংবা ভোটের প্রস্তুতি- সব পরিস্থিতি মোকাবিলায় বেশ আগে থেকেই মাঠে সক্রিয় রাখা হচ্ছে সম্ভাব্য যোগ্য প্রার্থীদের। দেশব্যাপী জেলা ও মহানগর পর্যায়ে যে কর্মসূচি পালন করছে দলটি- এ কর্মসূচি মূলত তত্ত্বাবধান করতে দেয়া হয়েছে সামনের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হতে পারেন এমন সম্ভাব্য প্রার্থীদের। আন্দোলনে ভূমিকা যাচাই করে সম্ভাব্য মনোনায়নপ্রত্যাশীদের মধ্য থেকে আগামী নির্বাচনের প্রার্থীও খুঁজে নিচ্ছে দলটির হাইকমান্ড। যেসব আসনে সাবেক এমপিদের চেয়ে নতুন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা আন্দোলন-সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন, তাদের নিয়ে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করছে হাইকমান্ড। মনোনয়ন নিশ্চিত এমন সিনিয়র নেতাদের নিজ নিজ আসনে আন্দোলনরত দলীয় কর্মী-সমর্থকদের পাশে থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। এক্ষেত্রে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আসন বণ্টনের বিষয়টি মাথায় রেখেও হিসাব কষা হচ্ছে। এ বিষয়ে বিএনপির এক সিনিয়র নেতার বক্তব্য- বিএনপির নির্বাচন প্রস্তুতি মূলত শুরু হয়েছে গত বছরের বিভাগীয় সমাবেশের মধ্য দিয়েই। অর্থাৎ সব ধরনের প্রস্তুতি বিএনপির আছে। তার ভাষায় বর্তমান সরকারের পতন হলেই সেটি দৃশ্যমান হবে।

২৭ দফাই হবে ভোটের ইশতেহার : বিএনপি নেতারা মনে করেন- আন্দোলনের মুখে দাবি মেনে নিতে বাধ্য হবে সরকার, কেটে যাবে নির্বাচনকালীন সরকারের সংকট। এজন্যই নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নের কাজ শুরু করেছেন তারা। ২০১৭ সালের মে মাসে ‘ভিশন ২০৩০’ নামে এক রূপকল্প ঘোষণা করেছিলেন খালেদা জিয়া। ওই রূপকল্পে ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য যে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন, তাতে সবাইকে নিয়ে এক ‘রেইনবো নেশন’ বা রংধনু জাতি গড়ার কথা বলেছিলেন তিনি। পরে রূপকল্প ২০৩০ এর আলোকে রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা প্রকাশ করা হয়।

বিএনপি নেতারা জানান, রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা ও আন্দোলন কর্মসূচির ১০ দফা মিলেই তৈরি হবে বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহার। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ৭ জন নেতা এ কাজ করছেন। এর বাইরে দলের বিভাগভিত্তিক বিশেষজ্ঞরা ইশতেহারের কাজে যুক্ত হয়েছেন। ইশতেহারে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে গণতন্ত্রকে সুসংহত করা, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার সুরক্ষাসহ নানা বিষয়। এছাড়া বিএনপি কী চায়, কী করবে এবং ক্ষমতায় গেলে কী হবে সবই উল্লেখ থাকবে এ ইশতেহারে।

জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, চ্যালেঞ্জ নিয়েই বিএনপি রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা বাস্তবায়ন করবে। কারণ, সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার হীন উদ্দেশ্যে সংবিধানের অনেক মৌলিক বিষয়ে অযৌক্তিক সংশোধন করেছে। তারা গত দেড় দশকে দেশে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দেশের মেরামতের প্রয়োজন। তাই আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়েই রূপরেখা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে পরিকল্পনামাফিক প্রচারণা চালাচ্ছি। আমরা জাতির কাছে প্রতিজ্ঞা করেছি, ২৭ দফার আলোকেই নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি হবে।

মাঠে কাজ করছে ৫১টি টিম : ভোটে তিনশ আসনে তিন স্তরের যোগ্য প্রার্থীর তালিকা প্রস্তুত করতে দেশব্যাপী সিনিয়র নেতাদের সমন্বয়ে বিএনপির ৫১টি টিম মাঠপর্যায়ে জরিপ করছে। যাদের দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে তাদের জেলা ও মহানগরের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। প্রতি আসনে দুজন করে সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাই করে রাখা হচ্ছে। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করা হচ্ছে। আন্দোলনে রাজপথে না থাকলে মনোনয়ন দেয়া হবে না বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে। হাইকমান্ডের শক্ত মনোভাব বুঝতে পেরে সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন।

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ মুজিবুর রহমান ইকবাল বলেন, আন্দোলন কর্মসূচি এবং স্ব স্ব এলাকায় সংগঠন সুসংগঠিত করে এখনো মাঠে আছি। এটাকে নির্বাচনের প্রস্তুতি মনে করতে পারেন।

প্রার্থী হতে লন্ডনমুখী নেতারা : হঠাৎই লন্ডন সফরের হিড়িক পড়েছে বিএনপি নেতাদের। সেখানে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্টও করছেন তারা। সূত্র জানায়, সম্প্রতি দলের ১৫ জনের অধিক নেতা লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জয়নাল আবেদিন ফারুক, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা আব্দুস সালাম, আমানউল্লাহ আমান, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপনসহ অনেকে।

সূত্র জানায়, দুটি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করেছেন নেতারা। প্রথমত, দলে নিজের পদপদবি ও অবস্থান পাকাপোক্ত করা। দ্বিতীয়ত, আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজ সংসদীয় আসনের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে একটি বার্তা দেয়া- ‘আমার অবস্থান ভালো। আগামী নির্বাচনেও আমি দলের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করব।’

সর্বাত্মক আন্দোলন কর্মসূচিও চলবে : বিএনপির তৃণমূল নেতারা জানিয়েছেন, ঘোষিত প্রতিটি কর্মসূচি সফল করতে এবার হাইকমান্ড কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। তারেক রহমান লন্ডনে থেকেই জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক ভার্র্চুয়ালি বৈঠক করছেন। বিশেষ করে ছাত্রদল, যুবদলসহ বিএনপির সহযোগী সংগঠনগুলোকে আন্দোলনের মাঠে শক্ত রাখতে দাওয়াই দিচ্ছেন; কর্মসূচি পালন ও অংশগ্রহণে ব্যর্থ ইউনিট ও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের ফের সতর্ক করছেন তারেক রহমান। দাবি আদায়ে বিএনপির ১০ দফা ও গণতন্ত্র মঞ্চের ১৪ দফাকে সমন্বয় করে ৭ দফার যৌথ ঘোষণা দেয়ার প্রস্তুতি চলছে।

সূত্র জানায়, নিরপেক্ষ ভোটের দাবি আদায়ে চূড়ান্ত আন্দোলনে যেতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গুছিয়ে এনেছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে আন্দোলন কর্মসূচিকে দুটি ভাগে ভাগ করে চূড়ান্ত ছক তৈরি করেছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। প্রথম ধাপে কয়েক ভাগে ৮২টি সাংগঠনিক জেলায় সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে দলটি। দ্বিতীয় ধাপে ঢাকামুখী রোড মার্চ, লং মার্চ কিংবা ঢাকা ঘেরাওয়ের মতো বড় কর্মসূচি দেয়ার ব্যাপারে সর্বোচ্চ পর্যায়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App