‘জনগণের জন্য বাজেট’ শীর্ষক প্রাক-বাজেট গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা বলেছেন, ধনী-গরিবের বৈষম্য বৃদ্ধির বাজেট করা যাবে না। আইএমএফের শর্তপূরণ করতে গিয়ে ইতোমধ্যে ধনীকে আরো ধনী এবং গরিবকে আরো গরিব করার পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। জনগণের প্রকৃত কল্যাণে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

সমাজ-রাজনীতি-অর্থনীতি ও সংস্কৃতি বিষয়ক গবেষণাধর্মী সংগঠন সমাজ সমীক্ষা সংঘ এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে। সভায় বক্তারা বলেন, আইএমএফের শর্তপূরণ করতে গিয়ে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ওপর ভর্তুকি তুলে দেয়ায় দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতির কারণে জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে। এই কারণে দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি মধ্যবিত্ত ও নিন্মমধ্যবিত্ত শ্রেণি ক্রমেই ধ্বংস হয়ে দ্ররিদ্র শ্রেণিতে পরিণত হচ্ছে। অর্থনীতির চালিকাশক্তি এই শ্রেণিকে বাঁচানো না গেলে অচিরেই দেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে। বক্তারা শিক্ষা খাতে আর্থিক বিনিয়োগ ও সরকারি বাজেট বাড়িয়ে এটিতে কর্মমুখী বাজেটে রূপান্তরের সুপারিশ করে বলেন, শিক্ষার ক্ষেত্রে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের বিষয় মাথায় রেখে বরাদ্দ দিতে হবে এবং এর ফলে মানুষের কর্মসংস্থান ও আয় দুটিই বাড়বে।

আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেটিক্স এন্ড ডেভেলপমেন্টের জয়েন্ট ডাইরেক্টর অব রিসার্চ ফাল্গুনী রেজা। এতে সভাপতিত্ব করেন সমাজ সমীক্ষা সংঘের সভাপতি কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু। সভায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রতিনিধিত্বশীল নেতারা তাদের বাজেট ভাবনা তুলে ধরেন। আলোচনা করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ সিকান্দর খান, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি তপন দত্ত, মুক্তিযোদ্ধা ও পরিবেশবিদ ড. মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী, ব্যবসায়ী নেতা মাহফুজুল হক শাহ, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক, ডক্টরস ফর হেলথ এন্ড এনভায়রনমেন্ট চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ডা. আরিফ বাচ্চু, চসিক কাউন্সিলর শাহেদ ইকবাল বাবু, সাবেক কাউন্সিলর এইচ এম সোহেল, চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বাবু, স্বনির্ভর ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান উন্নয়নকর্মী মো. মশিউর রহমান, যুব ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি মো. শাহ আলম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র জি এম তাওসিফ।

গোলটেবিল আলোচনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সমাজ সমীক্ষা সংঘের নির্বাহী পরিচালক কল্লোল দাশ, শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংগঠনের পরিচালক শিহাব চৌধুরী বিপ্লব। আলোচনা অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সংগঠনের যুগ্ম নির্বাহী পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদ মিনহাজ।

মূল প্রবন্ধে ফাল্গুনী রেজা উল্লেখ করেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট যদিও একটা প্রাক-নির্বাচনী বাজেট তবুও অর্থনীতির পুনরুদ্ধার বিবেচনায় এই বাজেটে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। আগামী বাজেট হবে বাংলাদেশের ৫২তম বাজেট এবং আকারের দিক থেকে এটিই হবে দেশের বৃহত্তম বাজেট- যা গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১২শতাংশ বেশি। এই বিশাল আকারের বাজেটে জনগণের কল্যাণে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। বর্ধিত মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রাজস্ব আয় বাড়ানো, বাজেট ঘাটতি সীমার মধ্যে রাখা, সরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।