×

জাতীয়

সাইবার অপরাধের মাত্রা বেড়েছে ২৮২ শতাংশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ মে ২০২৩, ০১:০৮ এএম

দেশে প্রতিনিয়ত নানান কৌশলে অভিনব সব সাইবার অপরাধ ঘটছে। এই জগৎকে ব্যবহার করে হচ্ছে প্রতারণা, পর্নোগ্রাফি, যৌন হয়রানি, সামাজিক হেনস্তা, গুজব রটনা ও অপপ্রচারসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড।

শনিবার (২০ মে) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন (সিক্যাফ) প্রকাশিত ‘বাংলাদেশে সাইবার অপরাধ প্রবণতা, ২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উপস্থাপিত হয়। ভুক্তভোগীদের মতামতের ভিত্তিতে সিক্যাফ এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। সংগঠনের সভাপতি কাজী মুস্তাফিজের সভাপতিত্বে ও কার্যনির্বাহী সদস্য খালেদা আক্তার লাবণীর সঞ্চালনায় প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সিক্যাফের গবেষণা সহকারী স্বর্ণা সাহা।

এই প্রতিবেদনের ওপর আলোচনা করেন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ভূঁইয়া, বিটিআরসির সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রাশেদা রওনক খান, সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা বিষয়ক জাতীয় কমিটির সদস্য প্রকৌশলী মুশফিকুর রহমান ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের গবেষণা কর্মকর্তা নাহিয়ান রেজা সাবরিয়েত।

ভার্চুয়ালি আলোচনায় অংশ নেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বিজিডি ই-গভ সার্ট প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল আলম খান।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন ধরনের সাইবার অপরাধ বাড়লেও এসব বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগের প্রবণতা কমেছে কয়েক গুণ। আবার লিঙ্গভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ভুক্তভোগীদের ৫৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ পুরুষ। এর মধ্যে ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আইডি হ্যাকসহ বিভিন্ন অভিযোগের সংখ্যা মোট অভিযোগের ২৬ দশমিক ৮১ শতাংশ। ভুক্তভোগীদের ৫৫ শতাংশই দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক আইন সম্পর্কে জানেন না।

প্রতিবেদনে সাইবার অপরাধের শিকার ভুক্তভোগীদের আইনি ব্যবস্থা না নেওয়ার সাতটি কারণ দেখানো হয়েছে। প্রথম কারণ হলো, ২৪ শতাংশ ভুক্তভোগীই জানেন না, কীভাবে আইনি ব্যবস্থা নিতে হয়। দ্বিতীয় কারণ হলো, ২০ শতাংশ ভুক্তভোগীই এ বিষয় গোপন রাখতে চান। তৃতীয়ত, আইনি ব্যবস্থা নিয়ে উল্টো হয়রানির শিকার হওয়ার আশঙ্কা ১৮ শতাংশের। এ ছাড়া অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রভাবশালী হওয়ায় ৫ শতাংশ, অভিযোগ করেও লাভ হবে না ভেবে ১৯ শতাংশ ও সামাজিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে ভেবে ১১ শতাংশ ভুক্তভোগী আইনের আশ্রয় নেন না। আবার আইনি ব্যবস্থা নেয়ার পরও সন্তুষ্ট নন ৮০ শতাংশ ভুক্তভোগী।

তবে এ বিষয়ে ২০২২ সালের জরিপের চেয়ে চলতি বছর বেশ উন্নতি লক্ষ্য করা যায়। ২০২২ সালের জরিপে ৩৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ ভুক্তভোগী সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টি বিষয়ে মন্তব্য করেননি। এবার জরিপে সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির বিষয়ে মন্তব্য না করার হার ছিল চার দশমিক ৪৫ শতাংশ।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে সাইবার প্রতারণাসহ অন্যান্য অপরাধ বেড়েছে ছয় দশমিক ৯১ শতাংশ; যা ২০২২ সালের চেয়ে ২৮১ দশমিক ৭৬ গুণ বেশি। প্রতিবেদনে ২০১৮-২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত পাঁচ বছরের পর্যবেক্ষণ উপস্থাপিত হয়েছে।

সেখানে ১১ ধরনের সাইবার অভিযোগের তথ্য বিশ্লেষণে অন্যান্য অপরাধের মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে বলে দেখানো হয়েছে। বিগত পাঁচ বছরে তুলনামূলকভাবে কমছে সাইবার বুলিং। এ ধরনের অপরাধ ২০২২ সালে ছিল ৫২ দশমিক ২১ শতাংশ। ২০১৭ সালে ছিলো ৫৯ দশমিক ৯০ শতাংশ।

এছাড়া, আইডি হ্যাকিংয়ের ঘটনা এ বছর কমে এলেও আর্থিক প্রতারণা থেমে নেই। ২০২২ সালে ভুক্তভোগীদের ১৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ অনলাইনে পণ্য কেনার নামে প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন। আর আইডি হ্যাকিংয়ের ঘটনার শিকার ২৬ দশমিক ৮১ শতাংশই পুরুষ।

সাইবার অপরাধের শিকার হয়ে ভুক্তভোগীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে যা অভিযোগ করেছেন, তার ফলাফল উদ্বেগজনক। গবেষণার তথ্য বলছে, ২০১৮ সালে অভিযোগকারীর হার ছিল ৬১ শতাংশ; যা চলতি বছর এসে দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৮৩ শতাংশে।

লক্ষ্যণীয় হলো, সাইবার অপরাধের ভুক্তভোগীদের ১৪ দশমিক ৮২ শতাংশের বয়সই ১৮ বছরের নিচে। যা অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় ১৪০ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ফেসবুকসহ অন্যান্য মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি অপপ্রচারের শিকার হয় শিশুরা। ভুক্তভোগীদের মধ্যে ১৪ দশমিক ৮৭ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের নিচে। সর্বশেষ প্রতিবেদনেও ভুক্তভোগীদের ৭৫ শতাংশের বয়সই ১৮-৩০ বছরের মধ্যে। গত পাঁচ বছরে সাইবার অপরাধের সর্বোচ্চ ভুক্তভোগীদের তালিকা তরুণরাই শীর্ষে অবস্থান করছে।

অনুষ্ঠানে বিটিআরসির সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ বলেন, এরই মধ্যে আইএসপিদের প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ব্যবহার ও মোবাইল অপারেটরদের সাইবার প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে শিগগিরই সাইবার সুরক্ষার জন্য একটি বিশেষায়িত কল সেন্টার স্থাপন করতে যাচ্ছে বিটিআরসি। তবে এরই মধ্যে কিশোরদের সাইবার সচেতনতায় ১৩২১৯ নম্বরে কল সেন্টার করা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App