×

জাতীয়

নাজেহাল ক্রেতা : মসলার বাজার দুর্বার গতিতে ছুটছে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ মে ২০২৩, ১০:৩৭ এএম

নাজেহাল ক্রেতা : মসলার বাজার দুর্বার গতিতে ছুটছে

ছবি: সংগৃহীত

বেশ কিছুদিন ধরে নিত্যপণ্যের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। চিনির দাম গত কয়েক মাসে দফায় দফায় বেড়ে শেষ পর্যন্ত রেকর্ড ছুঁয়েছে। কমছে না সবজি, মাছ-মাংসের দাম। এর মধ্যে পাগলা ঘোড়ার মতো দুর্বার গতিতে ছুটছে মসলার দাম। বিশেষত আদা ও জিরার দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক মাত্রায়। আদা উঠেছে ৪০০ টাকায়, জিরার দাম কেজিতে বেড়েছে ৩০০ টাকা। নিত্যপণ্যের অতিরিক্ত দামে এরই মধ্যে নাজেহাল সাধারণত ক্রেতারা। বিশেষত নিন্ম ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ বেশি বেকায়দায় পড়েছেন। সংসার চালাতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিক্রেতারা এসব পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে আমদানি বন্ধ ও নানা ধরনের সংকটের কথা বললেও ক্রেতারা তা মেনে নিতে নারাজ। আমদানি বন্ধের অজুহাতে বাজার সিন্ডিকেট ইচ্ছামতো পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে বলে ক্রেতাদের অভিযোগ।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, মাত্র একদিনের ব্যবধানে বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। ৩০০ টাকা কেজির কমে মিলছে না আদা। চীন থেকে আমদানি করা ভালোমানের আদার দাম উঠেছে কেজিপ্রতি ৪০০ টাকায়। অথচ মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই এ পেঁয়াজ ও আদার দাম ছিল বর্তমান দামের অর্ধেক। রমজানের ঈদের আগে বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫ টাকায় এবং আদা ১৮০ টাকায়। অন্যদিকে এ সময়ের ব্যবধানে আমদানি করা রসুনের দাম কেজিপ্রতি ৪০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। মসলার বাজারে কাঁচামরিচের দামও এখন আকাশছোঁয়া। বাজারে কাঁচামরিচের কেজি এখন ২০০ থেকে ২২০ টাকা। কয়েক দিনের ব্যবধানে জিরার দাম কেজিপ্রতি ৩০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়।

মালিবাগ কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আমিন উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাজারে কিছুই কেনার পরিস্থিতি নেই। যা কিছু কিনতে যাই আগুন জ্বলা দাম! এক হাজার টাকা নিয়ে গেলেও বাজার হয় না। চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ বা মরিচ কিছুই কেনার মতো পরিস্থিতি নেই। বাজারে এলেই টাকা হাওয়ার মতো উড়ে যাচ্ছে। সবকিছুর দাম বাড়লেও আয় তো বাড়েনি। একইভাবে সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা ফার্মাসিস্ট রহিমা খাতুন বলেন, এক শ্রেণির অসাধু সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে গোটা বাজার ব্যবস্থা। সামনে কোরবানির ঈদ, সেজন্য এখন মসলা ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াতে শুরু করেছেন। তা না হলে দেখতে দেখতে মসলার দাম দ্বিগুণ হয়ে যায় কী করে? বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ দাবি করে তিনি বলেন, এসব সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে সরকারের উদাসীনতা রয়েছে। তারা দেখেও দেখে না। বরং কিছু ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের আরো বেপরোয়া হতে উৎসাহ জোগানো হয়।

সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে কোনো সবজির দাম কমেনি। বরং এ বছর চড়া দামের সবজির তালিকায় যোগ হয়েছে সচরাচর স্থিতিশীল থাকা আলু ও পেঁপে। এখন অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বাড়তি দামে আলু কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। বাজারে আলুর দাম আরো বেড়ে এখন প্রতি কেজি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা দুদিন আগেও ছিল ৩৫ টাকা। রোজার ঈদের পর থেকেই ধীরে ধীরে আলুর দাম বাড়তে শুরু করে। তখন এ পণ্যটির দাম ছিল প্রতি কেজি ২৫ টাকা। অর্থাৎ এক মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে আলুর দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ১৫ টাকা। শুধু আলু নয়, বাজারে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে পেঁপের দামও। সারাবছর এ সবজিটি ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে কেনা গেলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাজারে অন্যান্য সবজিও প্রতি কেজি ৬০ টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে। আলুর দাম বাড়ার বিষয়টি উঠে এসেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যেও। সংস্থাটি বলছে, বাজারে গত এক মাসের ব্যবধানে আলুর দাম ২৯ শতাংশ বেড়েছে। আর বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে প্রায় ৭৪ শতাংশ। গত বছর এ সময়ে প্রতি কেজি আলুর দাম ছিল ১৮ থেকে ২৫ টাকা, যা এখন ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সবজির পাশাপাশি উত্তাপ ছড়াচ্ছে মাছের বাজারও। হুট করে সব ধরনের মাছের দাম কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ৬০০ টাকা কেজির কমে কেনা যাচ্ছে না টেংরা, কই, শিং ও চিংড়ি মাছ। চাষের রুই-কাতলা বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকার বেশি দামে। দুই কেজি বা তার চেয়ে বড় হলে দাম কেজিতে আরো ১০০-২০০ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে। এমনকি ছোট আকারের পাঙাশ-তেলাপিয়া মাছের দামও এখন কেজিপ্রতি ২৪০-২৫০ টাকা। যা স্বাভাবিক সময়ে ২০০ টাকা কেজি বা তারও কমে পাওয়া যেতো। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মুদি দোকানগুলোতে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৯০ টাকা ও চিনি ১৩০-১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে এখনো চিনির সংকট কাটেনি। অধিকাংশ দোকানে পাওয়া যাচ্ছে না প্যাকেটজাত চিনি। এছাড়া ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি দরে। ফার্মের মুরগির ডিমের দাম বেড়ে হয়েছে ১৫০ টাকা ডজন। গরুর মাংসের দাম রমজানের পর থেকে দুই দফা বেড়ে এখন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App