×

জাতীয়

নিম্ন আদালত: ভরসার আঙিনায় ভোগান্তি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ মে ২০২৩, ০৮:২৭ এএম

নিম্ন আদালত: ভরসার আঙিনায় ভোগান্তি

ছবি: ভোরের কাগজ

** ভুয়া আইনজীবীর প্রতারণা ** ঘাটে ঘাটে বকশিশ ** পানি, টয়লেট-বিশ্রামাগার সংকট ** বছরের পর বছর ঝুলছে মামলা ** নিরাপত্তা সংকট, স্বাস্থ্যঝুঁকি

রাজধানীর পুরান ঢাকার জনাকীর্ণ এলাকায় অবস্থিত দেশের অন্যতম বৃহত্তম বিচারালয় ঢাকা জজকোর্ট। প্রতিদিন প্রায় অর্ধলাখের বেশি মানুষ আসেন এ আদালতে। তবে নানান অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনায় এখানে প্রতিনিয়তই ভোগান্তিতে পড়তে হয় বিচারপ্রার্থীদের। পেশকার, জিআরও, পুলিশ, পিয়ন ঘুষ ছাড়া কোনো কাজই করে না- এটা অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। এছাড়া নানা সময় ভুয়া আইনজীবীদের খপ্পরে পড়তে হয় সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের। আদালতে নেই পর্যাপ্ত টয়লেট। প্রায় অধলাখের বেশির মানুষের জন্য মাত্র তিনটি পাবলিক টয়লেট আছে। এছাড়া বিচারপ্রার্থীদের জন্য নেই খাবার পানির তেমন কোনো ব্যবস্থা। নারী ও শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রামাগার নেই। শুধু তাই নয়, বসার জন্য এজলাস কক্ষের বাইরে নেই পর্যাপ্ত বেঞ্চও।

অন্যদিকে নড়বড়ে নিরাপত্তায় একপ্রকার ঝুঁকি নিয়েই আসতে হয় বিচারপ্রার্থীদের। মাদকসেবী, ছদ্দবেশী পাগল ও অপ্রয়োজনীয় মানুষের অবাধ চলাফেরায় আদালত প্রাঙ্গণের পরিবেশ ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে। ইতোমধ্যে জঙ্গি ছিনতাইসহ নানা সময় আসামি পলায়নের মতো ঘটনাও ঘটেছে। ফলে প্রতিদিনই বিচারপ্রার্থী, আইনজীবী ও সংশ্লিষ্টদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আইনজীবী সমিতি, কোর্ট প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সমন্বিত উদ্যোগ নিলে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি কমানো সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

টাউট আইনজীবীদের প্রতারণা : অসাধু আইনজীবীদের মাধ্যমে নি¤œ আদালতের বিচারপ্রার্থীদের প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। এসব ভুয়া আইনজীবীদের ‘টাউট’ নামে আখ্যায়িত করে মাঝেমধ্যে ঢাকা আইনজীবী সমিতি থেকে অভিযান চালানো হয়। তবুও থেমে নেই টাউট আইনজীবীদের প্রতারণা। আদালতে ওৎ পেতে থাকে ভুয়া আইনজীবীরা। ভুক্তভোগী পরিবার না বুঝে খপ্পরে পড়ে যান। অভিভাবকের স্বাক্ষর জালিয়াতি করেও আসামির পরিবারকে ফাঁদে ফেলে এসব অসাধুচক্র মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এমনই এক ভুক্তভোগী পরিবার আসামি শামিম হোসেনের (৩৫)। রাজধানীর কাফরুল থানায় ২০১২ সালের পর্নোগ্রাফি আইনের ৮(১)(২) ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। এ মামলার আইনজীবী পরিচয় দিয়ে আসামির পরিবারের সদস্যদের ফোন করে টাকা পাঠাতে বলেন এক ব্যক্তি এবং টাকা না পাঠালে আসামির ক্ষতি হবে বলেও জানান। ছেলে রাসেলকে মাদক মামলায় জামিন নেয়ার জন্য ভুয়া আইনজীবীর খপ্পরে পড়েন রোকেয়া নামে এক দোকানী। ৩০ হাজার টাকা দেয়ার পর রোকেয়া বুঝতে পারেন আইনজীবী ভুয়া। এভাবে প্রতিনিয়ত আসামির পরিবারের সদস্যদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে আইনজীবী পরিচয়ধারী একশ্রেণির টাউট।

মামলার ঘাটে ঘাটে বকশিস : মামলা হওয়ার পর এজাহারের কপি তোলা, জামিনের কপি নেয়া, চার্জশিটের কপি নেয়া থেকে শুরু করে মামলার কাজে যেকোনো নথি নিতে গেলে আদালতের জিআরও, পেশকারদের বকশিস দিতে হয়। এটা নি¤œ আদালতের প্রচলিত নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে। সবার সামনেই দেদারসে নেয়া হয় এই বকশিস। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিচারপ্রার্থীদের কাছ থেকে বখশিশের নামে টাকা নিয়ে আইনজীবী নথি দেন।

অনেক সময় বিচারপ্রার্থীদের কাছ থেকে বকশিসের জন্য ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা নিয়ে জিআরও-পেশকারদের ১০০ থেকে ২০০ টাকা দিয়ে নথি নেন আইনজীবীরা। এদিকে শুধু নথি নিতেই নয়; আসামি আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে নিয়জিত পুলিশকেও বকশিস দিতে হয়। এছাড়া আসামিকে খাবার পৌঁছে দিতে, আসামিদের সঙ্গে কথা বলতে হলেও পুলিশকে বকশিস দিতে হয় স্বজনদের। এভাবে ঘাটে ঘাটে বকশিস দিতে গিয়ে মামলায় সর্বশান্ত হওয়ার নজির কম নেই। জঙ্গি ছিনতাইয়ের পর এই প্রবণতা কিছুটা কমলেও বর্তমানে আগের অবস্থা ফিরে এসেছে। গত ১ মে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনে খাবার হাতে অপেক্ষা করছিলেন রোকেয়া নামে হাতিরঝিলের এক দোকানী। কারণ তার ছেলেকে মাদক মামলায় কারাগার থেকে আদালতে হাজিরার জন্য আনা হয়েছে। রোকেয়া ভোরের কাগজকে বলেন, আমার ছেলে রাসেলের (২৪) কাছে কিছু পায়নি। পুলিশ ধরে এনে মাদক মামলা দিয়েছে। এরপর ছেলেকে ছাড়াতে গিয়ে আমি সর্বশান্ত হয়ে গেছি। প্রথমে এক ভুয়া আইনজীবীর খপ্পরে পড়েছিলাম। জামিনের কথা বলে ৩০ হাজার টাকা নেয়। কিন্তু জামিন করাতে পারেনি। ভুয়া ছিল আইনজীবী। এরপর নতুন আইনজীবীকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি, তাও জামিন পাইনি। এছাড়া কোনো কাগজ নিতে গেলেই টাকা লাগে। ছেলেকে খাবার দিতে সকালে এখানকার পুলিশকে ২০০ টাকা দিয়েছি। আরো কিছু দিব বলে অপেক্ষা করছি। এছাড়া কয়েকজন আইনজীবী বলেন, জিআরও, পেশকারদের কাছ থেকে মামলার কোনো নথি নিতে গেলেই আমাদের টাকা দিতে হয়। টাকা ছাড়া এসব কাজ হয় না। এটাই এখানে নিয়ম।

পানি, টয়লেট-বিশ্রামাগার সংকট : আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী মিলে প্রদিতিন ৫০-৬০ হাজারের বেশি মানুষ আদালত প্রাঙ্গণে এলেও নেই পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত টয়লেট সুবিধা। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ৬ তলা ভবনে বিচার প্রার্থীদের জন্য তৃতীয়, চতুর্থ ও ষষ্ঠ তলায় তিনটি টয়লেট সচল রয়েছে। ঢাকা জেলা জজ আদালতের পাশে মসজিদের সামনে নতুন করে একটি গণশৌচাগার স্থাপন করা হলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেখানে এমনই দুর্গন্ধ, প্রবেশ করাই দুরূহ। এছাড়া ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন আদালতের নীচ ও দ্বিতীয় তালায় দুইটি ছাড়া আর কোথাও পাবলিক টয়লেট নেই। এছাড়া সমগ্র কোর্ট প্রাঙ্গণে বিচার প্রার্থীদের জন্য বিশ্রামাগার নেই বললেই চলে। নারী ও শিশু বিচার প্রার্থীদের জন্য একটি বিশ্রামাগার থাকলেও সেখানে তেমন লোকজন যান না। এছাড়া প্রত্যেক এজলাসের বাইরে বসার জন্য পর্যাপ্ত বেঞ্চ নেই। কিছু জায়গায় বসার বেঞ্চ থাকলেও ভেঙ্গে গেছে। তাই এজলাসের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের বেশ ভোগান্তিতেই পড়তে হয়। এছাড়া পুরো আদালত জুড়ে কোনো বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেই।

নিরাপত্তা সংকট : গত বছরের ২০ নভেম্বর আদালত চত্বরের নড়বড়ে নিরাপত্তার কারণে দুই জঙ্গি আসামি ছিনতাই হয়। এরপর কোর্ট প্রশাসনের টনক নড়ে। কিছুদিন আদালত প্রাঙ্গণে জোরদার নিরাপত্তা দিতেও দেখা যায়। তবে বর্তমানে সরেজমিন আদালত ঘুরে দেখা যায়, আদালতে প্রবেশপথগুলোর নিরাপত্তা আবারও অনেকটাই ঢিলেঢালা। গত রবিবর ঢাকা জজকোর্টে খোলা ৩ প্রবেশপথের প্রধান গেটে ২ জন পুলিশ ছাড়া বাকি দুই গেটে কোনো পুলিশ পাহারা দিতে দেখা যায়নি। কোনো তল্লাসি ছাড়াই অবাধে ঢুকছে মানুষ। চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রধান গেটে একজন আনসার ও দুইজন পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। অন্য প্রবেশপথে নেই কোনো গেট বা পুলিশ পাহারা। এছাড়া সিজেএম আদালতের প্রধান গেট ফাঁকা রেখে দূরে তিনজনকে পুলিশকে বসে পাহারা দিতে দেখা যায়। অবাধে ঢুকছে মানুষ। দায়িত্বরত কনস্টেবল রুহুল ভোরের কাগজকে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ জঙ্গি আসামী এলে ও গাড়ি আসার যাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা রাস্তা ক্লিয়ার করি। দেহ তল্লাশি করার জন্য আমাদের কাছে কোনো আর্চওয়ে নেই।

এদিকে পুরো কোর্ট এলাকায় নেই পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা। ফলে ছিনতাইকারীসহ অস্ত্র নিয়ে যে কেউ চাইলেই আদালত প্রাঙ্গণে ঢুকতে পারে। তাই গুরুত্বপূর্ণ বড় মামলায় সাক্ষী দিতে একপ্রকার ঝুঁকি নিয়েই আসতে হয় বিচারপ্রার্থীদের। নানা সময় এমন অভিযোগ আদালতে করতে দেখা যায় তাদের। যে কোনো সময় অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটতে পারে বলেও আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। এছাড়া, পাগলবেশী মাদকসেবী, ভবঘুরে সেজে থাকা পকেটমার, ছিনতাইকারী, ভুয়া আইনজীবীসহ নানা চক্র ওৎ পেতে থাকে। বছরের পর বছর ঝুঁলে আছে মামলা : এদিকে বিচারপ্রার্থীদের সবচেয়ে বড় ভোগান্তি- বছরের পর বছর ধরে ঝুঁলে থাকা মামলা। রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে না পারায় বিচার শেষ হতে এতো বছর লাগছে বলে মনে করেন আইনজীবীরা। কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় আত্মীয়ের বিয়ে খেতে এসে অস্ত্র মামলায় ২৫ বছর আগে গ্রেপ্তার হন মো. হোসেন। সম্প্রতি এ মামলার রায়ে তাকে খালাস দেয়া হয়। তার বিরুদ্ধে পুলিশ ছাড়া কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। কিন্তু সাক্ষী হাজির করতে বছরের পর বছর সময় নেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। এতে কুষ্টিয়া থেকে আসামিকে ঢাকার আদালতে হাজিরা দিতে ভোগান্তি পেতে হয়েছে ২৫ বছর। মো. হোসেন বলেন, বিনা দোষে এতো বছর ধরে ভোগান্তি পেলাম। দ্রুত বিচার শেষ হলে এতো ভোগান্তি পেতে হতো না। একইভাবে প্রায় ৩৫ বছর ধরে ঝুঁলে আছে সগিরা মোর্শেদ হত্যা মামলার বিচারকাজ। সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে থাকা মামলাটির বিচারকাজ দ্রুত শেষ করার দাবি আসামী ও বাদী উভয়পক্ষের।

মাদক পোড়ানোর চুল্লিতে অস্বস্তি : ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রাঙ্গণে হাজতখানার সঙ্গে রয়েছে জব্দ মাদক পোড়ানোর চুল্লি। মাদক পুড়িয়ে ধ্বংস করার সময় মাদকের ধোঁয়া পুরো আদালত প্রাঙ্গণে ছড়িয়ে পড়ে। এতে আদালত প্রাঙ্গণের বিচারক, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা অস্বস্তিতে পড়েন। মাঝেমধ্যে গাঁজার গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে আদালত পাড়ায়। এতে বিচারপ্রার্থী ছাড়াও আদালতে নিয়মিত আসা আইনজীবী, কোর্ট স্টাফ, পুলিশ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েন। অনেকে বাধ্য হয়ে নাক ও মুখ ঢেকে রাখেন। বিচারপ্রার্থী তাহেরা বেগম বলেন, স্বামী মামলায় হাজিরা দিতে এলে আমিও আসি। কিন্তু প্রায়ই গাঁজা পোড়ানোর ধোঁয়ায় এ এলাকায় চলাচল করা কষ্ট হয়ে যায়। মাদক নিধন চুল্লির পাশে আদালতের হাজতখানার গেটে কর্মরত কনস্টেবল রাজিব বলেন, মাঝেমধ্যে ম্যাজিস্ট্রেট এসে মাদক পুড়িয়ে দিয়ে যান। পুলিশও সঙ্গে থাকে। মাদকের ধোঁয়া লাগলেও করার কিছু নেই। কাজ তো করতে হবে।

ময়লার ভাগাড় : এছাড়া আদালত চত্বরের বিভিন্ন জায়গায় আবর্জনার স্তূপে দুর্গন্ধের সঙ্গে গড়ে উঠেছে মশার অভয়ারণ্য। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রবেশের ফটকের সামনেই রয়েছে আবর্জনার স্তূপ। ময়লা-আবর্জনা ফেলা হলেও তা দেখার কেউ নেই। এ ছাড়া অন্য আদালত ভবনগুলোর চারপাশে রয়েছে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ।

নেই পর্যাপ্ত পার্কিং ব্যবস্থা : এছাড়া আদালত প্রাঙ্গণে নেই পর্যাপ্ত পার্কিংয়ের জায়গা। এতে বিচার পেতে আদালতে গাড়ি নিয়ে এলে বড় রকমের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অনেকসময় ফুটপাত ও রাস্তায় যত্রতত্রভাবে মোটরসাইকেল এবং গাড়ি পার্কিং করা হয়। এতে গাড়ি চুরি হওয়ার মতো ঘটনাও অহরহ ঘটছে।

বিচার প্রার্থীদের সামগ্রিক ভোগান্তির বিষয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু ভোরের কাগজকে বলেন, টাউট-ভুয়া আইনজীবীদের বিরুদ্ধে আইনজীবী সমিতি অভিযান পরিচালনা করে। মামলাও করা হয়। তবে আইনজীবী ভুয়া নাকি সঠিক- সে বিষয়ে সেবা প্রার্থীদের সচেতন থাকতে হবে। সামগ্রিকভাবে কোর্টে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রাখা জরুরি। এছাড়া কোর্টে পর্যাপ্ত জায়গা নেই বলে বেশি টয়লেট স্থাপন করা সম্ভব হয় না। এজলাসের বাইরে বেশি বেঞ্চ থাকলে চলাচলের সমস্যা হয়। কোর্টের বড় সমস্যা হলো একজনের সঙ্গে ৫ জন আসে। এতে কোর্টে মানুষের চাপ পড়ে। মাদক পোড়ানোর চুল্লির বিষয়ে তিনি বলেন, কোর্টের পাশেই মাদক পোড়ানোর চুল্লি থাকার কথা। আমাদের আর কোনো জায়গা নেই। তাই বাধ্য হয়ে ওখানেই পোড়াতে হয়।

বকশিসের বিষয়ে আব্দুল্লাহ আবু বলেন, কোর্টে পেশকার বা পিওনদের বকশিস দেয়া অলিখিত বিষয়। অনেকে খুশি হয়ে দেয়। ব্রিটিশ সময় থেকে এটা চলে আসছে। তবে কেউ যদি চেয়ে বা জোর করে নেয় সেটা অন্যায়। মামলা ঝুঁলে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করার দায় সবার। একা রাষ্ট্রপক্ষের নয়। তদন্ত কর্মকর্তা, সাক্ষী, আইনজীবী, রাষ্ট্রপক্ষ সবাইকে বিচারকাজ দ্রুত শেষ করার জন্য কাজ করতে হবে। এছাড়া একেকটি আদালতে মামলা বেশি থাকলেও সময় লাগে বেশি। সর্বোপরি আইনজীবী সমিতি, কোর্ট প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সমন্বিত উদ্যোগ নিলে প্রতারণাসহ অন্যান্য সমস্যার সমাধান করে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি কমানো সম্ভব বলে মনে করেন রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী।

এদিকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক মো. আব্দুল হাকিম বলেন, টাকার বিনিময়ে আসামিদের খাবার দেয়া বা দেখা করার সুযোগ আমাদের কোর্টে নেই। আসামি আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তাও জোরদার রয়েছে।

ঢাকা কোর্টের পুলিশ উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) আনিসুর রহমান বলেন, আমরা কোর্টের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তা দেখি। নিরাপত্তা সবসময় জোরদার থাকে। প্রবেশ গেটের নিরাপত্তা লালবাগ ডিভিশন দেখে। ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার জাফর ওয়াজেদ বলেন, কোর্ট আমাদের বিভাগের সবচেয়ে বড় প্রায়োরিটির জায়গা। আমরা সবসময় নিরাপত্তা জোরদারের চেষ্টা করি। যেদিন অন্য স্থানে প্রোগ্রাম থাকে সেদিন হয়তো আদালতে পুলিশ ফোর্স কম থাকে। তবে গুরুত্বপূর্ণ আসামি এলে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। আর্চওয়ের বিষয়টি আমরা দেখব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App