×

জাতীয়

মনিপুর স্কুলের শিক্ষক জাকিরের পুনর্বহাল দাবি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৩, ০৯:০৭ এএম

মনিপুর স্কুলের শিক্ষক জাকিরের পুনর্বহাল দাবি

ছবি: সংগৃহীত

দুই মাস না পেরুতেই আবারো অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে রাজধানীর অন্যতম বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে। গত ৬ মার্চ উচ্চ আদালত এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) নির্দেশে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেন মো. জাকির হোসেন। দায়িত্ব নেয়ার দুই মাস পর তাকে অব্যাহতি দিয়েছে বর্তমান অস্থায়ী পরিচালনা (অ্যাডহক) কমিটি। তার স্থলে গত বুধবার আখলাক আহম্মদ নামে আরেক সহকারী শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয় অ্যাডহক কমিটি। এতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষকরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আন্দোলনরত শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করেছেন। সকালে সরজমিন মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের বালিকা শাখায় গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসের বালিকা শাখায় অবস্থান নিয়েছেন। তারা অ্যাডহক কমিটির বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছেন। তারা চান মো. জাকির হোসেনই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক থাকুন।

আন্দোলনরত শিক্ষকরা বলছেন, রাজধানীর অন্যতম বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ আজ সংকটের মুখে। উচ্চ আদালত এবং মাউশির নির্দেশে দায়িত্ব পাওয়া মো. জাকির হোসেনই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করবেন। তাকে পুনর্বহাল করা না হলে তারা তাদের কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন।

এদিকে দুপুরে মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে বালিকা শাখায় উপস্থিত হয়ে স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেছেন, তিল তিল করে এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। আমার প্রতিষ্ঠানে কোনো জামায়াত-শিবিরের লোক থাকবে না, স্বাধীনতাবিরোধী লোক থাকবে না। আজকে যারা প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেছেন, ক্লাসে না ফিরে বিক্ষোভ করছেন, কর্মবিরতি পালন করছেন, তারা আগামীকাল ক্লাসে না ফিরলে সবার বিরুদ্ধে আমি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব, মামলা করব। এ সময় তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. জাকির হোসেনকে সরিয়ে আখলাক আহম্মদকে দায়িত্ব দেয়ার কথাও জানান। এমনকি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া মো. জাকির হোসেনকে ‘জামায়াত-শিবিরের লোক’ বলেও আখ্যায়িত করেন কামাল আহমেদ মজুমদার।

এদিকে শিক্ষকদের দাবির মুখে দায়িত্ব দেয়ার একদিন পর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন আখলাক আহম্মদ। গত বুধবার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এ কে এম দেলোয়ার হোসেনের সই করা এক চিঠিতে মো. জাকির হোসেনকে অব্যাহতি দিয়ে আখলাক আহম্মদকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হয়। আখলাক আহম্মদকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়ার পর থেকে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন স্কুলের শিক্ষকরা। কিন্তু ম্যানেজিং কমিটি শিক্ষকদের আন্দোলন দমাতে স্থানীয় বহিরাগতদের স্কুল এলাকায় জড়ো করে। এতে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

অন্যদিকে আখলাক আহম্মদ শিক্ষকদের দাবির মুখে অব্যাহতি নিলেও তা আবার প্রত্যাহার করেন। প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে তিনি বলেন, আমি চাই এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা শৃঙ্খলা অব্যাহত থাকুক। আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল কিন্তু শিক্ষকদের আন্দোলন এবং শৃঙ্খলার স্বার্থে আমি ইস্তফা দিয়েছি। তবে তিনি জানান, প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে এবং শিক্ষকদের একাংশের দাবির মুখে তিনি দায়িত্ব থেকে ইস্তফাপত্র প্রত্যাহার করেছেন। শিক্ষকরা চাইলে তিনি এখানে দায়িত্ব পালন করবেন।

মনিপুর স্কুলের প্রশাসনিক সমন্বয়ক মো. রাশেদ কাঞ্চন ভোরের কাগজকে বলেন, জাকির হোসেনের নিয়োগ বৈধ। উচ্চ আদালত এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) নির্দেশে তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেন। তিনি দায়িত্ব নেয়ার দুই মাসের মধ্যেই আমূল পরিবর্তন হয়েছে। মিজানুর রহমান নামে আরেক শিক্ষক বলেন, ভুয়া ভাউচারে স্বাক্ষর করেননি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন। তার অবস্থান শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পক্ষে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে। এজন্যই তাকে সরানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে কমিটির লোকজন।

এ বিষয়ে জানতে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি এ কে এম দেলোয়ার হোসেনের মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার ভোরের কাগজকে বলেন, অ্যাডহক কমিটির এ ধরনের কাজের এখতিয়ার নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App