×

জাতীয়

ভারত মহাসাগর অঞ্চলে শান্তি রক্ষায় একমত বিশ্ব নেতারা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৩, ০৯:৩২ পিএম

ভারত মহাসাগর অঞ্চলে শান্তি রক্ষায় একমত বিশ্ব নেতারা

ছবি: পিএমও

ভারত মহাসাগর অঞ্চলে শান্তি রক্ষায় একমত বিশ্ব নেতারা
ভারত মহাসাগর অঞ্চলে শান্তি রক্ষায় একমত বিশ্ব নেতারা

ভারত মহাসাগর অঞ্চলে আফ্রিকা থেকে দক্ষিণ এশিয়া পর্যন্ত প্যাসিফিক আইল্যান্ডসহ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় বিশ্ব নেতারা ঐক্যমত প্রকাশ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ভিয়েতনাম, ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ ৪০টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা গত শুক্রবার থেকে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হওয়া দুই দিনব্যাপী ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনে অংশ নিয়ে এমন ঐক্যমত প্রকাশ করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি জানায় যে দেশটি এই অঞ্চলে আঞ্চলিক মেরিটাইম নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ এবং শ্রীলঙ্কার সঙ্গে কাজ করছে এবং ছয় মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। এছাড়া বিবিআইএনের (বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল) উদ্যোগে আবার যোগ দেয়ার তথ্য জানিয়েছেন ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

বাংলাদেশে আয়োজন করার মাধ্যমে আঞ্চলিক রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে ভারত মহাসাগরীয় উপকূলবর্তী দেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের অংশীদারত্ব সুদৃঢ় হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন ভূরাজনীতি ও ভূঅর্থনীতি নিয়ে বাংলাদেশের যে গুরুত্ব তা অতিথিরা স্বীকার করে নিয়েছেন। তারা আশা করেছেন, বাংলাদেশের অবস্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়। তাদের গুরুত্ব বাড়ার ফলে সামনের দিনে বাংলাদেশ আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এটাই হয়তো এই সম্মেলনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির সাফল্য।

শুক্রবার থেকে ঢাকায় শুরু হওয়া দুইদিনব্যাপী ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গত শুক্রবার ৪টি প্রাক-সম্মেলন সেশন ও শনিবার সারাদিনব্যাপী মন্ত্রী পর্যায়ের ৪টি থিমেটিক সেশন অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে আমন্ত্রিত মন্ত্রী ও মন্ত্রীপর্যায়ের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। গতকাল শনিবার ষষ্ঠ সম্মেলন শেষ হয়েছে। এবারের সম্মেলনে ৪০টি দেশের দেড়শ জন অতিথি অংশ নিয়েছেন। সপ্তম সম্মেলন আগামী বছর অস্ত্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে।

বিশ্ব নেতাদের মতে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ২.৭ বিলিয়ন লোকের বাস, যা বিশ্বের অন্যতম জনবহুল অঞ্চল, এই অঞ্চলের অর্থনীতিও প্রচুর সম্ভাবনাময়, কিন্তু এখানে জলবায়ু পরিবর্তনসহ একাধিক ঝুঁকি রয়েছে, যা সকলে মিলে মোকাবিলা করলে এই চ্যালেঞ্জগুলো থেকে উত্তরণ সম্ভব।

স্টেট ডিপার্টমেন্ট এর ডেপুটি সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শেরম্যান সম্মেলনে শনিবার ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে যুক্ত হয়ে বলেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যা ঘটবে তার মধ্য দিয়েই অনেকাংশে বিশ্বের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে। ডেপুটি সেক্রেটারি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সক্রিয়তা সম্প্রসারণে অঙ্গীকারবদ্ধ। এ অঞ্চলে যা ঘটবে তার মধ্য দিয়েই অনেকাংশে বিশ্বের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে। এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক তাৎপর্যকে বাড়িয়ে বলার কিছু নেই।

শেরম্যান বলেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নির্মাণের দিকে আমাদের সবার আগ্রহ রয়েছে। বিশ্বের আসন্ন ভবিষ্যৎ এই অঞ্চলের উপরই নির্ভর করছে। কেননা এই অঞ্চলে বিশ্বের ২.৭ বিলিয়ন লোকের বাস, তেল বহনকারী বৈশ্বিক জাহাজ গুলোর ৮০ শতাংশ এই অঞ্চলে চলাচল, এই অঞ্চলে অনেক সম্ভাবনার পাশাপাশি চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল অবাধ এবং রুল বেসড হলে সকলেই উপকৃত হবে। যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে আঞ্চলিক মেরিটাইম নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ এবং শ্রীলংকার সঙ্গে কাজ করছে এবং ছয় মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।

অস্ট্রেলিয়ার সহকারি মন্ত্রী টিম ওয়াটস, এমপি শনিবার বলেন, এই অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং রুল বেজড অর্ডার প্রতিষ্ঠায় অস্ট্রেলিয়া সরকার এখানে প্রচুর বিনিয়োগ করবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিসহ এই অঞ্চলের প্রচুর চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কিন্তু সকলে মিলে কাজ করলে এসব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে এই অঞ্চলের যে সম্ভাবনা রয়েছে সেগুলো কাজে লাগানো যাবে। এখানে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা আরো প্রয়োজন। বাংলাদেশ যে ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক প্রকাশ করেছে তা গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ।

রোহিঙ্গা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অস্ট্রেলিয়ার সহকারি মন্ত্রী টিম ওয়াটস বলেন, রোহিঙ্গা সংকট এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে জটিল করছে। বাংলাদেশ এই সংকটে কঠিন সময় পার করছে। স্বেচ্ছায়, সম্মানের সঙ্গে পূর্ণ নাগরিকত্ব নিয়ে রোহিঙ্গাদের নিজের দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাওয়াই এই সংকটের একমাত্র সমাধান। এ জন্য মিয়ানমারকে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তান্ডি দরজি শনিবার সম্মেলনে বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের সংসদে যখন বিবিআইএন নিয়ে বিতর্ক চলছিল, তখন অপর্যাপ্ত ও অপ্রতুল অবকাঠামোর জন্য ভুটানের সংসদ সদস্যরা দেশের রাস্তাগুলোর চলাচলের উপযুক্ততা এবং অভ্যন্তরীণ পরিবহনের সামর্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু এবার আমাদের সরকার সবার স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আলোচনাটি পুনরায় শুরু করার। আমরা আশা করছি আমরা পুনরায় বিবিআইএন এ সম্পৃক্ত হবো।

নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নারায়ণ প্রকাশ সাউদ শনিবার বলেন, সংযুক্তি ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমাদের পাহাড়ের সঙ্গে সমুদ্রের এবং পণ্যের সঙ্গে বাজারের সংযোগ ঘটাতে হবে। আমাদের জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা আছে এবং আমরা ওই বিদ্যুৎ দিতে প্রস্তুত। নেপালের বাণিজ্যের জন্য আমরা বঙ্গোপসাগরের ওপর নির্ভরশীল। আমাদেরকে স্থলভাগের সঙ্গে সংযোগ হতে হবে।

‘ভূ-রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান সুসংহত হয়েছে’ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্স বাংলাদেশে আয়োজন করার মাধ্যমে আঞ্চলিক রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে ভারত মহাসাগরীয় উপকূলবর্তী দেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের অংশীদারত্ব সুদৃঢ় হয়েছে। পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ- অর্থনৈতিক বাস্তবতার নিরিখে এই সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশেষ অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুসংহত হয়েছে বলে জানান তিনি।

শনিবার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্স আয়োজন শেষে এই প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। এতে ভার্চ্যুয়ালি বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

ড. মোমেন জানান, সম্মেলনে ১৭টি দেশের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী যোগ দিয়েছেন। সবমিলিয়ে ৪০ দেশের প্রতিনিধি ১৫৫ জন বিদেশি অতিথি অংশ নেন। সম্মেলন ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিয়ে হলেও সামগ্রিকভাবে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সম্মেলনে সমুদ্র নিরাপত্তা, বাণিজ্য, সামুদ্রিক সম্পদে জোর দেয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানান, সম্মেলনে চীনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। চীনা থিংক ট্যাংককেও আমন্ত্রণ করা হয়েছে। এখানে চীনা দূতাবাসের দুজন ছিলেন।

প্রতিমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ এই রিজিয়নে শান্তি বজায় রাখতে চায়। এখানে অংশগ্রহণকারী সকলেই এটা চায়। এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এটা একটি শুভ সূচনা হলো। প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এই কনফারেন্স উদ্বোধন করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App