×

জাতীয়

মে মাসে যত ঘূর্ণিঝড়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৩, ০৮:০৭ পিএম

বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হেনেছে বাংলাদেশের উপর। এতে যেমন উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তেমনি প্রাণহানিও কম হয়নি। বিভিন্ন সময় মে মাসে ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ের তথ্য নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সরকারের একসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রাম (এটুআই)।

বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় : ঐতিহাসিক ওভারভিউ এবং প্রভাব (মে ১৯৪১-২০২২) শীর্ষক এই প্রতিবেদনের তথ্য বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শনিবার (১৩ মে) গণমাধ্যমে পাঠিয়েছে এটুআই।

এটুআই বলছে, বাংলাদেশে মে মাসে ঘূর্ণিঝড়ের অভিজ্ঞতার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এই ঘূর্ণিঝড়গুলো ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি করেছে, যার ফলে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি, অবকাঠামো ধ্বংস এবং ফসল ও গবাদিপশুর ক্ষতি হয়েছে।

প্রতিবেদনটিতে মে মাসে দেশে আঘাত হানা বড় ঘূর্ণিঝড়ের একটি কালানুক্রমিক বিবরণ দেয়া হয়েছে। এটুআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৪১ সালের মে মাসে ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান ছিলো মেঘনা নদীর পূর্ব মোহনা। তবে ওই সময় কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনো অজানা। ১৯৪৮ সালে ৭ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান ছিলো চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর মধ্যবর্তী ব-দ্বীপ। প্রায় ১২’শ মানুষ ও ২০ হাজার গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছিলো সেই প্রাকৃতিক দুর্যোগে।

১৯৫৮ সালের ১৬ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত চলা ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান ছিলো পূর্ব বরিশাল ও নোয়াখালী, মেঘনা নদীর মোহনা। ওইসব এলাকার ৮৭০ জনের প্রাণহানি, সাড়ে ১৪’শ গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছিলো। মাঠের ফসলও নষ্ট হয়েছিলো সেই সময়। ১৯৬১ সালে বাগেরহাট ও খুলনা অঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের সর্বোচ্চ গতি ছিলো প্রতি ঘণ্টা ১৬১ কি. মি.। প্রায় সাড়ে ১১ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলো। মৃত্যু হয়েছিলো ২৫ হাজার গবাদি পশুর।

১৯৬৩ সালে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কক্সবাজার এবং উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় বয়ে গিয়েছিলো ২৮ ও ২৯ মে। সেই সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিলো প্রতি ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ২০৩ কি. মি. ও কক্সবাজারে ১৬৪ কি. মি.। প্রাণহানি হয়েছিলো ১১ হাজার ৫২০ জনের। ১৯৬৫ সালের ঘূর্ণিঝড় বরিশাল ও বাকেরগঞ্জ এলাকায় আঘাত করেছিলো ১১ ও ১২ মে। এই ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের সার্বোচ্চ গাতিবেগ ছিলো ঘণ্টায় ১৬২ কি.মি.। ১৯ হাজার ২৭৯ জনের প্রাণহানি হয়েছিলো সেই সময়। ১৯৭৫ সালে ভোলা, কক্সবাজার ও খুলনা অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় হয়েছিলো ৯ থেকে ১২ মে। যার বাতাসের সর্বোচ্চ গতি ছিলো ঘণ্টায় ৯৬ দশমিক ৫ থেকে ১১২ দশমিক ৬ কি. মি.। এই ঘূর্ণিঝড়ে ৫ জন মারা গিয়েছিলো। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী এবং উপকূলীয় অঞ্চলে ১৯৮৫ সাইক্লোন (উরিচর সাইক্লোন) আঘাত হেনেছিলো ২৪ ও ২৫ মে। উপকূলের ১১ হাজার ৬৯ জন বাসিন্দা প্রাণ হারিয়েছিলো সেই সময়। ১ লাখ ৩৫ হাজারেরও বেশি গবাদি পশু মারা গিয়েছিলো। সেই সময় আনুমানিক ৯৫ হাজার ঘরবাড়ি, ৭৪ কিলোমিটার রাস্তা এবং বাঁধ ধ্বংস হয়েছিলো।

ঘূর্ণিঝড় নার্গিস ২০০৮ সালের ৩ মে বার্মার উপকূল (মিয়ানমার) আঘাত হানে। এ সময় বাংলাদেশে খুব একটা প্রভাব পড়েনি। ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলা আঘাত করেছিলো পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূলীয় এলাকায়। প্রতি ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ ছিলো সর্বোচ্চ ৭০ থেকে ৯০ কি.মি.। বাংলাদেশে ১৯৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছিলো। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে প্রায় ৩ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিলো। ঘূর্ণিঝড় মহাসেন নোয়াখালী-চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত করেছিলো ২০১৩ সালের ১৬ মে। এসময় ১৭ জনের মৃত্যু হয়। ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত এনেছিলো ২০১৬ সালের ২১ মে। এতে চট্টগ্রামে ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছিলো। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলো লক্ষাধিক পরিবার।

ঘূর্ণিঝড় মোরা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল এলাকায় আঘাত করেছিলো ২০১৭ সালের ৩০ মে। প্রতি ঘন্টায় বাতাসের গতি ছিলো ১১০ কি.মি.। মোরার প্রভাবে উপকূলে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। ২০১৯ সালের ২ ও ৩ মে ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয় আর প্রাণ হারায় ৯ জন। ফণী ভারতের ওড়িশা উপকূলে আঘাত হানে এবং পরে কলকাতা ও বাংলাদেশের উপর দিয়ে চলে যায়। ২০২০ সালে সুপার সাইক্লোন আম্ফান বাংলাদেশে আঘাত হানে ২০ মে। এতে উল্লেখযোগ্য ধ্বংস এবং প্রাণহানি ঘটেছিলো। ২০২১ সালের ২৬ মে হয়েছিলো সাইক্লোন ইয়াস। ২০২২ সালে মে মাসে ঘূর্ণিঝড় আসানিতে প্রাথমিকভাবে অন্ধ্রপ্রদেশ প্রভাবিত হয়েছে। বাংলাদেশে কম ক্ষতি হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App