×

জাতীয়

আমি নগরপিতা নই, সেবক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৩, ০৭:৩৫ পিএম

আমি নগরপিতা নই, সেবক

সংবাদ সম্মেলনে মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। ছবি: ভোরের কাগজ

আমি নগরপিতা নই, সেবক

শনিবার গুলশান-২-এ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান কার্যালয়ে মেয়র হিসেবে তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন মো. আতিকুল ইসলাম। ছবিটি তুলেছেন ভোরের কাগজের ফটোসাংবাদিক মো. শাহাদাৎ হোসেন

আমি নগরপিতা নই, সেবক

মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। ছবি: ভোরের কাগজ

আমি নগরপিতা নই, সেবক

মেয়র হিসেবে তিন বছর পূর্তিতে ফুলেল শুভেচ্ছাসিক্ত মো. আতিকুল ইসলাম। মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। ছবি: ভোরের কাগজ

নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী গত তিন বছরে নগরের অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। এখনো অনেক প্রকল্পের কাজ চলমান। বাকি দুই বছরে এর ৮০ শতাংশ কাজ বাস্তবায়ন করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি নিজেকে নগরের সেবক হিসেবে দাবি করে ডিএনসিসির যত সফলতা তার কৃতিত্ব জনগণকে দিয়ে ব্যর্থতাটুকু নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন মেয়র আতিক। সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০২০ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র নির্বাচিত হন মো. আতিকুল ইসলাম।

শনিবার (১৩ মে) গুলশান-২ এ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান কার্যালয়ে মেয়র হিসেবে তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। দায়িত্ব গ্রহণের তিন বছরে ডিএনসিসির অগ্রগতির সার্বিক চিত্র ও আগামী দুই বছরের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন উত্তরের মেয়র।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রি. জে. জোবায়দুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী ব্রি. জে. মো. আমিরুল ইসলামসহ ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কাউন্সিলরা। এসময় ঘূর্ণিঝড় মোকা মোকাবিলায় ডিএনসিসির সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিলসহ জলাবদ্ধতা নিরসনের সব প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন মেয়র আতিক।

[caption id="attachment_430136" align="aligncenter" width="1600"] সংবাদ সম্মেলনে মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

মেয়র বলেন, সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে তিন বছর আগে দায়িত্ব গ্রহণ করি। আমি জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ। নগরের সেবক হিসেবে চেষ্টা করে যাচ্ছি জনগণের জন্য কাজ করতে। তিন বছর আগে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম সেগুলোর মধ্যে অনেকগুলো কাজ করেছি, আবার কিছু কাজ করা সম্ভব হয়নি। তবে ঢাকাকে বাসযোগ্য স্মাট নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে সব প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবো।

স্মার্ট ঢাকা গড়তে কী ধরনের কাজ করছেন তা উল্লেখ করে মেয়র আতিক বলেন, এরই মধ্যে ডিএনসিসিতে অনলাইনে সেবার পরিধি বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স প্রদানের পাইলটিং সম্পন্ন করেছি। কল্যাণপুর রিটেনশন পন্ডে হাইড্রো ইকো পার্ক নির্মাণের লক্ষ্যে বেদখল হওয়া ৩৩ একর জমি উদ্ধার করে খননের কাজ চলছে।

[caption id="attachment_430160" align="aligncenter" width="1600"] মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

সুস্থ ঢাকা ইশতেহারে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এরই মধ্যে আওতাধীন এলাকায় এক হাজার ২৫০ কিলোমিটার ড্র্রেন পরিষ্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে গত বছরে খাল থেকে প্রায় দুই লাখ টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। এছাড়া, ১২৫০ কিলোমিটার বর্জ্য নিয়মিত পরিষ্কার করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বাসাবাড়ির বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নগরের বিভিন্ন এলাকায় ৫২টি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (বর্জ্য রাখার বড় ঘর) তৈরি করা হয়েছে এবং আরো নয়টি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন তৈরি করা হবে। এছাড়া বর্জ্য থেকে বিদুৎ উৎপাদনের কাজ এগিয়ে চলছে বলে জানান তিনি।

মশা নিয়ন্ত্রণে অধিক গূরত্ব দেয়া হচ্ছে জানিয়ে মেয়র বলেন, ডিএনসিসি ৫৪টি ওয়ার্ডে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ছাদবাগান পরিদর্শনে ড্রোন প্রযুক্তির ব্যবহার করে প্রায় ২৮ হাজার বাড়ির ছাদ পরীক্ষা করেছে ডিএনসিসি। এর মধ্যে দুই হাজার ২০০ বাড়িতে ছাদবাগান চিহ্নিত করেছে। ২শ বাড়িতে মশার প্রজনন ক্ষেত্র থাকার মতো পানির উপস্থিতি শনাক্ত করে তা ধ্বংস করা হয়।

এছাড়া, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মশা নিধনে ল্যাব স্থাপনে চুক্তি স্বাক্ষর ও পাঠ্যপুস্তকে এডিস মশা সম্পর্কে শিশুদের সচেতনতার বিষয় অন্তর্ভক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে ডিএনসিসি।

[caption id="attachment_430161" align="aligncenter" width="1600"] মেয়র হিসেবে তিন বছর পূর্তিতে ফুলেল শুভেচ্ছাসিক্ত মো. আতিকুল ইসলাম। মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

কাউন্সিলরদের সঙ্গে নিয়ে আমরা উন্মক্ত স্থান ও পার্কগুলো ব্যবহার উপযোগী ও দখলমুক্ত করতে কাজ করে যাচ্ছেন জানিয়ে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র বলেন, অনেকগুলো এরই মধ্যে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। এগুলো করতে অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল, আমরা সেগুলো রিকভার করেছি। আমি নির্দেশনা দিয়েছি পার্কের উন্নয়ন কাজ করতে গিয়ে যেন একটিও গাছ না কাটা হয়। গাছগুলো রেখেই আরো নতুন নতুন গাছ লাগানোর মাধ্যমে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা সে অনুযায়ীই কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, বরাদ্দ না থাকলেও নতুন ১৮ ওয়ার্ড উন্নয়নে ডিএনসিসির নিজস্ব অর্থায়নে কাজ করে যাচ্ছি। ৫৪টি ওয়ার্ডে প্রাইমারি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন, কমান্ড সেন্টার আধুনিকায়ন, কবরস্থান উন্নয়ন, ই-ট্রেড লাইসেন্স, ক্যাশলেস লেনদেন ব্যবস্থাসহ ঢাকাকে আধুনিকায়ন করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।

রাস্তার সিগন্যাল গুলোকে অটো করা যায় কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে এখন আর সিগন্যাল হাতে চলে না। শুধুমাত্র আমাদের দেশের সিগন্যাল হাতে চলে। ট্রাফিক সিগন্যাল ইস্যু নিয়ে চলতি মাসে মিটিংয়ে বসবো। সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে নিয়ে টেকনিক্যাল সমাধান নিয়ে কাজ করব। আমরাও অখুব শিগগিরই ট্রাফিক সিগন্যালকে ডিজিটালে নিয়ে আসবো।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, বিদেশ থেকে একটি সফটওয়্যার নিয়ে এসেছি। লেন ভিত্তিক কাজ পরিচালনার জন্য এ সফটওয়্যার কাজ করবে। যদি কেউ লেন অমান্য করে অথবা অতিরিক্ত গতিতে যদি গাড়ি চালায় তাহলে তার গাড়ির নম্বর পর্যালোচনা করে তার বাড়ির ঠিকানায় জরিমানার স্লিপ চলে যাবে। উন্নত দেশের মতো এমন সিস্টেম উত্তর সিটিতে দ্রুত চালু হবে।

মিরপুর ১০ নম্বর শেওড়াাপাড়া ও কাজীপাড়া এলাকায় ফুটপাতে চাঁদাবাজির বিষয়ে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া এমন প্রশ্নের জবাবে আতিকুল ইসলাম বলেন, চাঁদাবাজি তথ্য পেলে সে যেই হোক তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে। কোনো চাঁদাবাজি চলবে না। আমি ইতিমধ্যে ডিএমপির সঙ্গে আলাপ করেছি। কারো নামে যদি কোনো অভিযোগের প্রমাণ পাই সে যেই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।

প্রসঙ্গত, গত ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে উত্তর সিটি কর্পোরেশনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন আতিকুল ইসলাম। সেখানে নির্বাচিত হয়ে ডিএনসিসির মেয়র হন তিনি। পরে ওই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন আতিকুল ইসলাম। পরবর্তীতে একই বছরের ১৩ মে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App