×

জাতীয়

কমেছে সঞ্চয়পত্রের আবেদন: বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ মে ২০২৩, ০১:৩১ পিএম

কমেছে সঞ্চয়পত্রের আবেদন: বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন

মানুষের সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগের খাত হিসেবে পরিচিত সঞ্চয়পত্রের আবেদন কমে গেছে। মূলত- মূল্যস্ফীতির চাপ, সুদের হার হ্রাস এবং সঞ্চয়পত্র কেনার সীমা থাকায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে সঞ্চয়পত্রে নতুন করে জমা হয়েছে ৬২ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা এবং উত্তোলন করা হয়েছে ৬৬ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে যতটা বিনিয়োগ করেছে তারচেয়ে ৪ হাজার ১৬০ কোটি টাকা বেশি তুলেছেন বিনিয়োগকারীরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে- অর্থ উত্তোলনের এ প্রবণতা ২০২৩ অর্থবছর জুড়েই ছিল। অথচ ২০২২ অর্থবছরের একই সময়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ প্রায় ১৬ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা বাড়ে। সে সময় ৬৪ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা উত্তোলন করেন গ্রাহকরা। বিনিয়োগ করেন ৮১ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা। জানা গেছে, দেশে দীর্ঘ সময় ধরে চলা ডলার সংকট পণ্যের আমদানি মূল্য বাড়িয়েছে। তাই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য মানুষকে আগের তুলনায় বেশি টাকা খরচ করতে হচ্ছে।

বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী- খাদ্য মূল্যস্ফীতি মার্চ মাসে বেড়ে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ হয়েছে, যা ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। অন্যদিকে মার্চে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ফেব্রুয়ারির ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ থেকে সামান্য কমে হয়েছে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। এদিকে মার্চ মাসে মজুরি বৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ১৮ শতাংশে পৌঁছেছে, যা আগের মাসে ৭ দশমিক ১১ শতাংশ ছিল। মার্চে মুদ্রাস্ফীতি ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশে পৌঁছেছে, যা সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এদিকে সরকার ২০২৩ অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে সরকারের সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম। উল্টো ব্যাংক ঋণ বাড়াচ্ছে সরকার।

এ ব্যাপারে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, নি¤œ আয়ের মানুষ দৈনন্দিন জীবনের খরচ চালানোর জন্য নিজেদের সঞ্চয় ভাঙতে বাধ্য হচ্ছে। আসলে সরকারই চাইছে না সঞ্চয়পত্র বাড়–ক। কারণ প্রতি বছর বাজেটের সুদ বাবদ সরকারকে অনেক টাকা খরচ করতে হয়। এতে সরকারের ওপর চাপ বাড়ে বলেও জানান তিনি।

তিনি জানান, আমরা অনেক আগেই সরকারকে সঞ্চয়পত্র কমানোর জন্য বলেছিলাম। তবে সরকারি কর্মকর্তারা অবসরের পর সঞ্চয়পত্র কিনে রাখেন। তাই তারাও চান না এটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাক। সঞ্চয়পত্রে জনগণের বিনিয়োগ এখন যেভাবে কমছে, তাতে খুব দ্রুত হয়তো ভালো রেজাল্ট পাওয়া যাবে না। তবে আগামী কয়েকবছরের মধ্যেই সঞ্চয়পত্র বিক্রয় কমা সরকারকে স্বস্তি দেবে। সঞ্চয়পত্র কমে যাওয়ার কারণে সরকারকে বাজেট ঘাটতি পূরণে সংকটে পড়তে হবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।

আহসান এইচ মনসুর আরো বলেন, গ্রাহকরা এখন সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ পূরণ হলে টাকা তুলে ব্যাংকে জমা করছেন। এটি দেশের ব্যাংক খাতে ডিপোজিট বাড়াচ্ছে। এখন অনেক ব্যাংক ও এনবিএফআই গ্রাহকদের ডিপোজিটের বিপরীতে বেশ ভালো সুদ অফার করছে। আর সরকারও চাইলে ব্যাংক খাত থেকে টাকা ধার করা বাড়াতে পারে। ব্যাংক থেকে লোন নিলে সরকারের সুদ খরচ অনেক কম হয় বলে জানান তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App