×

জাতীয়

বরিশাল সিটি নির্বাচন: মাঠে সরব আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৩০ এএম

বরিশাল সিটি নির্বাচন: মাঠে সরব আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি

ফাইল ছবি

বরিশাল সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচনের মাঠে সরব রয়েছেন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী। প্রার্থী ঘোষণা করলেও এখনো নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেনি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। অন্যদিকে শেষ মুহূর্তে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেয়ার গুঞ্জন থাকলেও দলটির বরিশালের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, এই সরকারের অধীনে তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন না। এর আগে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) বরিশালের সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত) নির্বাচনী মাঠে সরব রয়েছেন। প্রতিদিনই জেলা, মহানগর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে সভা করছেন। বরিশালের রাজনীতির সঙ্গে তার তেমন একটা সম্পৃক্ততা না থাকায় প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরন ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম এমপির অনুসারী নেতাকর্মীরাই আপাতত তার ভরসা। কারণ, মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে নগর রাজনীতির দৃশ্যপটে আপাতত নেই মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ও তার অনুসারীরা। কেন্দ্রের চাপে শেষ পর্যন্ত মাঠে নামলেও তাদের ওপর বিশ্বাস রাখা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এক্ষেত্রে ২০১৩ সালের নির্বাচনে তখনকার জনপ্রিয় মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত হোসেন হিরনের পরাজয়ের উদাহরণ সামনে আনা হচ্ছে। এসব নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। নির্বাচনের আগে মহানগর কমিটি বিলুপ্ত করার গুঞ্জনও আছে। খোকন সেরনিয়াবাতের সমর্থকরাও জোরালোভাবে একই দাবি জানাচ্ছেন।

এদিকে মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার পর বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ তার অনুগত ৩০টি ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভায় চাচা খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে কাজ করার ঘোষণা দেন। তবে গত কয়েক দিনের প্রচারণায় সাদিক অনুসারীদের মাঠে দেখা যায়নি। এ বিষয়ে নেতাকর্মীরা বলছেন, বর্ধিত সভার পরই তারা নৌকার পক্ষে মাঠে নামবেন। আর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ যৌথসভা ডেকে দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে মাঠে নামবেন। তবে কবে নাগাদ সেই সভা অনুষ্ঠিত হবে তা নিশ্চিত করতে পারেনি কেউ। এমন পরিস্থিতিতে নৌকার প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ১৪ দলীয় সমন্বয়ক আলহাজ আমির হোসেন আমু এমপির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নেতাকর্মীদের একত্রিত হয়ে কাজ করার দিকনির্দেশনা দেন।

নৌকার প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতের সমর্থক মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন বলেন, ওয়ার্ড নেতাদের সহযোগিতা পাওয়া নিয়ে আমরা সন্দিহান। আরেক সমর্থক বিএম কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মঈন তুষার বলেন, যারা নগরবাসীকে শোষণ করছে, চাঁদাবাজি করছে তাদের নেতৃত্বে মহানগর কমিটি থাকতে পারে না। এই কমিটি থাকলে সিটি নির্বাচনে তৃণমূল নেতাকর্মীরা স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারবেন না। ৩০টি ওয়ার্ডের নেতাকর্মীকে চাপের মুখে রেখেছেন সাদিকের লোকজন। মহানগর যুবলীগের সদস্য মিজানুর রহমান মিল্টন বলেন, বিভিন্ন ওয়ার্ডে সাধারণ কর্মীদের প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতের বাসায় না যেতে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। ২০১৩ সালের নির্বাচনে শওকত হোসেন হিরনের পরাজয়ের পেছনে সাদিক পরিবারের ষড়যন্ত্র ছিল। মহানগর ও ওয়ার্ড কমিটি বহাল রেখে নির্বাচন করলে খোকন সেরনিয়াবাতও ঝুঁকিতে থাকবেন।

এদিকে গত কয়েক দিন ধরে বরিশালে গুঞ্জন রয়েছে, শেষ মুহূর্তে বরিশাল সিটি নির্বাচনে প্রার্থী দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং দলের যুগ্ম মহাসচিব সাবেক মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ার মেয়র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে নামবেন। তবে এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সরোয়ার জানিয়েছেন, তিনি মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক জানিয়েছেন, কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনে তারা কোনো নির্বাচনে অংশ নেবেন না। শুধু মেয়র পদেই নয়, কাউন্সিলর পদেও দলীয় পদধারী কেউ নির্বাচন করলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অন্যদিকে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও বরিশাল মহানগরের সদস্যসচিব ইকবাল হোসেন তাপস দীর্ঘদিন নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। ইতোমধ্যে তার দলের নেতাকর্মীরা একাধিক মিছিল-মিটিং করে তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। ইকবাল হোসেন তাপস গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মানুষ আমাকে ভোট দেবে। কারণ বরিশাল সিটি করপোরেশন হওয়ার পরে নগরবাসীর একটা প্রত্যাশা ছিল, বরিশাল শহরটা একটা আধুনিক শহর হবে। কিন্তু কোনো মেয়রই সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। যদিও খানিক সময়ের জন্য মরহুম শওকত হোসেন হিরন চেষ্টা করেছেন এবং তিনি কিছুটা উন্নয়নও করেছেন। তারপরে যারা এসেছেন তারা জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। মানুষ যদি ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে তাহলে আমরা বিজয়ী হব।’

প্রসঙ্গত, বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ১৬ মে, মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১৮ মে, মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল ১৯ থেকে ২১ মে, আপিল নিষ্পত্তি ২২ থেকে ২৪ মে, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৫ মে। প্রতীক বরাদ্দ ২৬ মে এবং ভোটগ্রহণ হবে ১২ জুন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App