×

জাতীয়

‘কোথায় যাবো আমরা, কার কাছে যাবো’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৩০ পিএম

‘কোথায় যাবো আমরা, কার কাছে যাবো’

ছবি: ভোরের কাগজ

‘কোথায় যাবো আমরা, কার কাছে যাবো’

বাংলাদেশের আদিবাসীরা পানি না পেয়ে আত্মহত্যা করছে। বঞ্চনার মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করছে। জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত তারা। তাই বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) অসহায়ভাবে বলেন, জীবন জন্য কোথায় যাবো আমরা, কার কাছে যাবো আমরা?

আজ শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সম্মেলন আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী বাদ্য ‘মাদল’ বাজিয়ে উদ্ধোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রয়াত প্রবীণ রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্য্যরে প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। শুভেচ্ছা বক্তব্যে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, বাংলাদেশের আদিবাসীরা কঠিন সংকটের মুখেও টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। ভূমি অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আমাদের পিছিয়ে রাখা হয়েছে। কাউকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারে না। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী ও বাঙালিদের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি বিনির্মাণ করতে হবে।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের পঞ্চম জাতীয় সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে সন্তু লারমা এই অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আদিবাসীদের মুক্তি রাজনৈতিক দিকদর্শন দিয়ে খুঁজতে হবে। সে জন্য বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

সম্প্রতি রাজশাহীতে চেষের পানি না পেয়ে সাঁওতাল কৃষক মুকুল সরেনের (৩৫) আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনাটি উল্লেখ করে আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের আহ্বায়ক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বলেন, গত বছরের মার্চে বোরো ধানের জমিতে পানি না পেয়ে এই নিমঘটু গ্রামের কৃষক অভিনাথ মারান্ডি ও তার চাচাতো ভাই রবি মারান্ডি বিষপান করেছিলেন। এতে দুজনেরই মৃত্যু হয়। মূলত তাদের ভূমিতে উচ্ছেদ করা ও পানি না দেয়া একই সূত্রে গাঁথা।

বাংলাদেশের ওর্য়াকার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি বলেন, জাতি রাষ্ট্র গঠনের সময়ে একটা সুন্দর সংবিধান রচনা হয়েছে। কিন্তু সংবিধানে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে পারিনি। বরং তাদেরকে বাঙালি হয়ে যেতে বললাম। দীর্ঘদিন ধরে এ লজ্জ্বা নিয়ে চলেছি।

আদিবাসীদের পরিচয় বিভ্রাটের সমাধানের দাবি জানিয়ে সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু বলেন, আমাদের মধ্যে ভুল বুঝাঝুঝি হয়েছিল। সেটা লাঠালাঠির পর্যায়ে চলে গেছিল। সেই ভুল বুঝাবুঝির অবসান হয়েছিল সন্তু লারমা এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। এই চুক্তির অনেক অংশ বাস্তবায়ন হলেও অনেক কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। চুক্তি হয়েছিল রাষ্ট্রের সাথে আদিবাসী জনগণের। কাজেই যে সরকারই আসুক তা বাস্তবায়ন করা দরকার। তাছাড়া সংখ্যালঘু জাতি সত্ত্বা রক্ষায় সুরক্ষা আইন দরকার ও একটা কমিশন গঠন করা দরকার।

আদিবাসীদের নানাভাবে ব্যবহার করা বলে অভিযোগ করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আদিবাসী সমস্যা শুধুমাত্র আদিবাসীদের একার নয়। এদেশের সমস্যা পীড়িত মানুষদের মধ্যে আদিবাসী সমস্যাও অন্যতম। আদিবাসীদের সমস্যার সমাধানে রাজনৈতিক দলগুলোর নীতিগত সিদ্ধান্ত কী? ভোট দিলে হবে না, এটা আদিবাসীদেরকে বুঝে নিতে হবে। উন্নয়নের নামে দুর্বৃত্তায়নের যে ধারা অব্যাহত আছে এটার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করার আহ্বান জানান তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মেসবাহ কামাল বলেন, দেশে বাংলা ছাড়াও আরো ৪৩টি ভাষা আছে। এই ভাষাগুলোর মধ্যে যে বহুত্ব, সে বহুত্বের স্বীকৃতি চেয়েছিলেন মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা এবং সংগ্রাম করছেন সন্তু লারমা। এই বহুত্বের স্বীকৃতি ছাড়া বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক হতে পারে না।

নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির বলেন, পার্বত্য চট্টগামকে একটি মিলিটারি জোনে পরিণত করা হয়েছে। এই মিলিটারি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ধুদ্ধ নয়। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধান হচ্ছে না এবং পার্বত্য শান্তি চুক্তিও বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

বান্দরবানে ফাইভ স্টার হোটেল নির্মাণের পায়তার ও পাহাড় ধ্বংসের সমালোচনা করে বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বান্দরবানের লামা রাবার কোম্পানি আদিবাসীদের ভূমি দখল করছে। সরকার এত শক্তিশালী যে আমাদেরকে সবসময় তটস্থ থাকতে হয়। কিন্তু একটা রাবার কোম্পানিকে সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। সরকার আসলে নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছেন না।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্র নাথ সরেন প্রমুখ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App