×

জাতীয়

ব্যাংকসহ সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানেই নজর আইএমএফের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৩৮ এএম

ব্যাংকসহ সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানেই নজর আইএমএফের

ফাইল ছবি

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঢাকায় সফররত প্রতনিধিদল প্রথমবারের মতো ব্যাংকের পাশাপাশি বিমা, মিউচ্যুয়াল ফান্ড, ক্ষুদ্র ঋণসহ সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডাটাভিত্তিক হালনাগাদ তথ্য জানতে চেয়েছে। আর সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমানো এবং ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের পরিচালকদের ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে প্রয়োজনীয় আইন সংস্কারের অনমনীয় মনোভাব দেখিয়েছেন আইএমএফের সদস্যরা। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের অফসাইট, অনসাইট ও পরিসংখ্যান বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা তাদের চলমান কার্যক্রম উপস্থাপন করেন বলে বৈঠক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

বাংলাদেশকে ঋণ দেয়ার আগে বেশ কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। ঋণের প্রথম কিস্তি পাওয়ার পর শর্তগুলোর অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে সফরে আসে সংস্থাটির প্রতিনিধিদল। সংস্থাটির ঢাকা সফরকারী স্টাফ কনসালটেশন মিশন গত মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করার পর ফের গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের উচ্চ খেলাপি ঋণ পুরো খাতে সমস্যা তৈরি করছে বলে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে আইএমএফের প্রতিনিধিদল। তবে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করার উদ্যোগ নেয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে সংস্থাটি।

বৈঠকে অংশগ্রহণকারী একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, খেলাপি ঋণের বিষয়ে আইএমএফ খুবই সংবেদনশীল। তারা খেলাপি ঋণ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চলমান কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চায়। তখন তাদের সামনে উপস্থাপন করা হয় যে, বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণ কমাতে নিয়মিত তদারকি করছে। আর সরকারি ব্যাংকগুলোতে বাড়তি নজরদারি রেখেছে। এসব ব্যাংকের ঋণ কমাতে তাদের সঙ্গে এমওইউ করা হয়েছে। সেখানে কোন বছর কত অর্থ আদায় হবে সেটিও উল্লেখ রয়েছে। আর ব্যাংকের পরিচালকদের ক্ষমতার অপব্যহার কমাতে আইনের সংস্কার চেয়েছে। এছাড়া ব্যাংকের পাশাপাশি বিমা কোম্পানি, মিউচ্যুয়াল ফান্ড, ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ডাটাভিত্তিক হালনাগাদ তথ্য, পরিদর্শন প্রতিবেদন এবং নিরীক্ষা প্রতিবেদন সম্পর্কে তথ্য চেয়েছে। তাদের জবাবে জানানো হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিমা নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন সংস্থা (আইডিআরএ), ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ন্ত্রক অথরিটি এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন যৌথভাবে তাদের চাহিদামাফিক তথ্য সরবরাহ করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেন, আইএমএফ এর স্টাফ ভিজিট একটি নিয়মিত কাজ। সদস্য সব রাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তির আলোকে সংস্থাটি সংস্কার নিয়ে বৈঠকের মাধ্যমে নিয়মিত তদারকি করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অর্থনৈতিক সূচকগুলোর হালনাগাদ তথ্য নিয়ে আলোচনা করেন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে অগ্রগতি অর্জন সম্ভব হবে বলে জানানো হয়েছে। তবে আশার বিষয় যে আমাদের নিজস্ব প্রয়োজনে কিছু রিফর্ম (সংস্কার) নিয়ে কাজ করছি। এতে আইএমএফের চাহিদাও অনেকাংশে মিটে যাবে বলে আশা করা যায়।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, গতকাল ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ ও ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন আইএমএফের প্রতিনিধিদল। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ডেপুটি গভর্নর এ কে এম সাজেদুর রহমান খান ও আবু ফরাহ মো. নাছের। বৈঠকে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি, প্রভিশন, বাণিজ্যিক ব্যাংক, সহযোগী প্রতিষ্ঠান, ইক্যুইটি বাজার-সা¤প্রতিক ক্রিয়াকলাপ এবং ঝুঁকিবিষয়ক আপডেট, ১০টি ব্যাংকের সঙ্গে পাইলট প্রকল্প, ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি উন্নতি ও ব্যবস্থাপনা এবং অন্যান্য সংস্কারের অগ্রগতি জানতে চায় আইএমএফ। এছাড়া বৈঠকে ব্যাংকখাতের তারল্য পরিস্থিতি, বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের তারল্য সংকটের বর্তমান অবস্থা এবং এ সংকট কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশ ব্যাংকের তারল্য ও ডলার সহায়তা দেয়ার বিষয়গুলো জানতে চায় আইএমএফ। বৈঠকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের উচ্চ খেলাপি ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটা ব্যাখ্যা দেয়া হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্য এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আইএমএফের ঋণের শর্ত পূরণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার চাপ রয়েছে। এ অবস্থায় খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা আইএমএফকে জানানো হয়েছে। সেই উচ্চ খেলাপি ঋণের পরিমাণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে একটা ব্যাখ্যাও তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৬ হাজার ৪৬০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, যা ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণের ২০ দশমিক ২৮ শতাংশ। এর মধ্যে মন্দমানের ঋণই রয়েছে ৫৩ হাজার ২১১ কোটি টাকা বা ৯৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। মন্দঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। প্রভিশন রাখতেও ব্যর্থ হয় এ খাতের কিছু ব্যাংক। তাই প্রভিশনের বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চায় সংস্থাটি।

সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইন মন্ত্রিসভায় পাশ হওয়ার অগ্রগতি সম্পর্কেও সংস্থাটিকে অবহিত করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, স¤প্রতি মন্ত্রিসভার বৈঠকে সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইন-২০২১ পাস হয়েছে। আগামী দেড় মাসের মধ্যে তা সংসদে উত্থাপন করা হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আইএমএফকে জানানো হয়েছে। ব্যাংক কোম্পানি আইন মন্ত্রিসভায় পাস হওয়া ও চলতি বছরই তা সংসদে উত্থাপনের সম্ভাবনা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে দাতা সংস্থাটি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App