×

জাতীয়

তিন পথেই স্বস্তির ঈদযাত্রায় সবাই খুশি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:৫৬ এএম

তিন পথেই স্বস্তির ঈদযাত্রায় সবাই খুশি

ফাইল ছবি

মহাসড়কে যানবাহনের চাপ থাকলেও যানজট নেই সময়মতোই ছাড়ছে ট্রেন পর্যাপ্ত যাত্রী পেয়েছে লঞ্চও

সড়ক-মহাসড়কে রাজধানী থেকে বহির্মুখী যানবাহনের চাপ থাকলেও যানজট নেই। তবে কোথাও কোথাও ধীরগতি আছে। বহু বছর পর ঈদে স্বস্তিতে ঘরে ফিরছে মানুষ। এতে যাত্রী ও যানবাহনচালক- সবাই খুশি। বাস, লঞ্চ ও ট্রেনগুলো নির্ধারিত সময়েই গন্তব্যে রওনা হয়েছে। পদ্মা সেতুতে চলাচলের অনুমতি দেয়ায় বাইকাররা উচ্ছসিত। প্রতিটি মহাসড়কেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর থাকায় কোথাও বিশৃঙ্খলা দেখা যায়নি। গতকাল বৃহস্পতিবার গাবতলী এলাকার দূরপাল্লার বাস কাউন্টারগুলো একেবারেই ফাঁকা ছিল। পরিবহন কোম্পানিগুলোর লোকজন যাত্রী না পেয়ে অলস সময় পার করেছে। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে বাসগুলো যাত্রীপূর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রওনা দিয়েছে।

মহাখালী বাস টার্মিনালে ক্ষণে ক্ষণে ভিন্ন চিত্র ফুটে উঠেছে। কখনো যাত্রীর চাপ দেখা গেছে, আবার কখনো ছিল ফাঁকা। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীর চাপ থাকলেও অন্য সময়ের মতো ভোগান্তি হয়নি।

ঢাকা-টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ-রংপুর, ঢাকা-গাজীপুর, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েসহ সব মহাসড়ক দিনভর যানজটমুক্ত থাকায় যাত্রী ও চালকরা স্বস্তিতেই গন্তব্যে পৌঁছেন।

রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতে গতকাল সকাল থেকেই ঘরমুখো মানুষের চাপ বেড়েছে। আগে থেকেই টিকেট থাকায় যাত্রীরা নির্দিষ্ট সময়ে বাসে গন্তব্যে রওনা হয়েছেন।

হানিফ পরিবহনের বাসচালক কামাল হোসেন জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কোথাও যানজট নেই। যানজট না থাকায় যাত্রী ও চালকরা স্বস্তিতে এবার ঈদযাত্রা করছেন। পথের ভোগান্তি নেই বললেই চলে। গাড়ির শিডিউল বিপর্যয় হয়নি। অল্প সময়ে রংপুর ট্রিপ নিয়ে গেছি এবং ফিরেও এসেছি। এলেঙ্গায় আগে ১৫ কিলোমিটার যানজট হতো। এবার যানজট নেই। বহু বছর এত স্বস্তিতে মানুষ ঈদ করতে যেতে পারেনি। তবে এই সড়কে বাস সংকট রয়েছে, অনেক যাত্রী বাসের জন্য রাস্তায় অপেক্ষা করছেন। বগুড়ার যাত্রী মেসকাত হোসেন জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে রংপুর পর্যন্ত মহাসড়কের কোথাও যানজট

নেই বলে শুনেছি। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যে এবং স্বস্তি নিয়েই প্রিয়জনদের কাছে যেতে পারব। ঈদ শেষে ফিরতি পথে একই ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হলে আরো বেশি ভালো লাগবে।

এদিকে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে সরাসরি মোটরসাইকেল চালানোর অনুমতি মেলায় দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের যাত্রীদের মধ্যে ঈদের আগেই ঈদের খুশি ঝিলিক দিয়েছে। সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মোটরসাইকেল শর্ত মেনেই পদ্মা সেতু পার হয়েছে। পদ্মা সেতু পার হওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের সার্ভিস লেনে ভোর থেকে মোটরসাইকেলের দীর্ঘ সারি শুরু হয়।

মোটরসাইকেলচালক ইব্রাহিম আলী জানিয়েছেন, তিনি সেহরি খাওয়ার পর রওনা দিয়েছেন। ভোরের দিকে সার্ভিস লেনে দীর্ঘ জটে পড়েন। কিন্তু ৬টায় চলাচল শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জট কমতে থাকে। মাত্র ১০০ টাকা টোল পরিশোধ করে ১০ মিনিটে পদ্মা সেতু পার হয়ে ওপারে চলে গেছেন। পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল অব্যাহত থাকলে মানুষের ভোগান্তি কমবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চালু হওয়ায় শিমুলিয়া ফেরিঘাটে আর কোনো মোটরসাইকেলের দেখা নেই। এ কারণে দুটি ফেরি থেকে একটি ফেরি সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

ঢাকা-মাওয়া বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহনের চাপ কয়েক গুণ বেড়েছে, তবে গত বছরের মতো এবার টোল প্লাজা থেকে যানজটের সৃষ্টি হয়নি। দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রীরা এই মহাসড়ক হয়েই ঘরে ফিরছেন। তবে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এই মহাসড়কের ষোলঘর এলাকায় বাস-ট্রাকের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনার পর কিছুক্ষণের জন্য যানবাহনের গতি কমে যায়। স্থানীয় পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে রাস্তা ক্লিয়ার করায় আবার স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন চলাচল করছে বলে জানা গেছে। টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসওয়ের চালক মোতাহার হোসেন জানান, যানজট না থাকায় ২ ঘন্টায় তিনি গোপালগঞ্জ পৌঁছে গেছেন।

ঢাকা-গাজীপুর মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়লেও বিকাল পর্যন্ত কোথাও যানজট হয়নি। দুপুরে আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়ক পরিদর্শন করেছেন। গাজীপুর সড়কে এবারের ঈদযাত্রায় কোনো ধরনের ভোগান্তি হয়নি। ঢাকা-শেরপুর রুটের এনা পরিবহনের স্টাফ সাইফুল জানান, গত দুই দিনে এই সড়কের কোথাও যানজট না হওয়ায় বাসের শিডিউল বিপর্যয় হয়নি।

গাজীপুরের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, গত বছর ঈদের সময় বিআরটি প্রকল্পের রাস্তার নিচের অংশের কাজের বেহাল অবস্থা ছিল। কিন্তু এবার নিচের অংশের কাজ অনেকটাই শেষ হওয়ায় এবং ঈদ উপলক্ষে নিচের রাস্তা কিছুটা সংস্কার করায় স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন চলাচল করতে পারছে। কোথাও ভোগান্তি হচ্ছে না।

যানবাহনের চাপ বেড়েছে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে। চন্দ্রা থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত যানবাহনের চাপ বাড়লেও যানজট নেই। বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ভোর থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে সব ধরনের গাড়ির চাপ বেড়েছে। তবে কোথাও যানজট হয়নি। যানজট এড়াতে উত্তরবঙ্গ থেকে আসা ঢাকাগামী পরিবহনগুলো সেতুর গোল চত্বর থেকে আঞ্চলিক সড়কে ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছে। এ কারণে এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়কে যানবাহনের চাপ কমে যাওয়ায় যানজট এড়ানো সম্ভব হয়েছে। মানুষ স্বস্তি নিয়েই ঘরে ফিরছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কোথাও যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। এই মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে হাইওয়ে পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের ৪০টি টিম বিভিন্ন পয়েন্টে সম্মিলিতভাবে অবস্থান নিয়ে যানবাহনের গতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কেও যানজট নেই। ফলে স্বস্তি নিয়ে নির্বিঘ্নেই ঘরে ফিরছে যাত্রীরা।

নৌপথ : সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালেও যাত্রীর চাপ বাড়লেও ভিড় নেই। দক্ষিণাঞ্চলের নৌরুটে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হয়েছে। গত সোমবার থেকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীর চাপ বাড়লেও কোথাও ভোগান্তি হয়নি। লঞ্চের যাত্রীদের কাছে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক বলে মনে হয়েছে। প্রতিটি লঞ্চ যাত্রীপূর্ণ হয়ে টার্মিনাল ছেড়েছে। ঈদযাত্রার শেষ দিনে শুক্রবার যাত্রীর চাপ আরো বাড়বে বলে আশা করছেন নৌপরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। এডভেঞ্চার-১০ লঞ্চের যাত্রী মিতালি জানিয়েছেন, লঞ্চে ফিরতে কোনো ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে না। লঞ্চের ভাড়াও বাড়েনি। এই লঞ্চের স্টাফ রফিক জানান, এবার যাত্রীর চাপ আছে, তবে উপচেপড়া ভিড় নেই।

রেলপথ : এদিকে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ‘সোনারবাংলা এক্সপ্রেস’ ট্রেন ছাড়া অন্য সবগুলো ট্রেন শিডিউল অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে যাত্রী নিয়ে ঈদযাত্রা করেছে। সকাল ৭টার দিকে সোনারবাংলা ট্রেনটি যাত্রী নিয়ে কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার আগে যান্ত্রিক ত্রæটি দেখা দেয়। কোরিয়ান কোচের রেক আটকে যায়। পরে ১০টা ২৭ মিনিটে ট্রেনটি ঢাকা স্টেশন ছেড়ে গেছে। অন্যসব ট্রেন কমলাপুর থেকে নির্দিষ্ট সময়ে ছেড়েছে। ট্রেনযাত্রীরা স্বস্তি নিয়েই প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে ঘরে ফিরেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App