×

জাতীয়

নানান সংকটের মধ্যে উৎসবের প্রস্তুতি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:৪৭ এএম

নানান সংকটের মধ্যে উৎসবের প্রস্তুতি

ফাইল ছবি

বাংলাদেশের আকাশে আজ শুক্রবার শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল শনিবার পবিত্র ঈদুল ফিতর। চাঁদ দেখা না গেলে ঈদ হবে রবিবার। সেই হিসাবে দুয়ারে কড়া নাড়ছে ঈদ। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় ‘রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’।

ঈদকে ঘিরে সাজ সাজ রব সারাদেশে। খুশির ঈদ ভাগাভাগি করার অপেক্ষায় স্বজনরা। আত্মত্যাগের মহিমায় নিজেকে শানিত করে ধনী-গরিব এক কাতারে এনে দাঁড় করানো ও একই আনন্দে হারিয়ে সাম্যের নিদর্শন স্থাপনের নামই ঈদুল ফিতর। এক মাস সিয়াম সাধনার পর আসে মুসলিম উম্মাহর অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর।

এমন এক সময়ে ঈদ সামনে এসে হাজির হয়েছে যখন মানুষ জর্জরিত নানান বৈশ্বিক সংকটে। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে বিশ্ব যখন স্বাভাবিক হওয়ার দৌড়ে তখনই সামনে এসে হাজির রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। শুরু হয় বিশ্ব রাজনীতিতে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি, টালমাটাল হতে শুরু করে বিশ্ব অর্থনীতি। মানুষের সামনে এসে হাজির হয় অর্থনৈতিক সংকট। সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও শুরু হয় কৃচ্ছ্রসাধন প্রক্রিয়া। দ্রব্যমূল্য বাড়তে থাকে হু হু করে- যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ছেদ পড়েছে।

এরপরও অনাবিল আনন্দ ও উল্লাসের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হতে যাচ্ছে ঈদুল ফিতর। এরই মধ্যে ঈদুল ফিতরের নামাজের জামাতের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ ময়দান, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়াসহ দেশের বড় বড় মসজিদ ও ঈদগাহ। অনেকেরই ঈদ আনুষঙ্গিক কেনাকাটাও প্রায় শেষ। এখন অপেক্ষা ‘শাওয়াল’ মাসের চাঁদের। আকাশের পশ্চিম কোণে খুশির বারতা নিয়ে দেখা দেবে একফালি রুপালি চাঁদ। তাতে ঝরতে থাকবে খুশির জ্যোৎস্না। শুরু হবে খুশির ঈদ- আনন্দ উৎসব।

রমজান একমাস ধরে যে সংযমের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে তার চূড়ান্ত রূপ হলো ঈদুল ফিতর। ইসলামী বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, ঈদের ইবাদতে শরিয়ত নির্দেশিত কিছু বিধিবিধান রয়েছে- যা পালনে সামাজিক জীবনে পারস্পরিক আন্তরিকতা, সহমর্মিতা ও বন্ধন সুসংহত হয়। এ ছাড়া ঈদের নামাজের আগে যাকাত ও ফিতরা আদায় করা, ঈদগাহে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা, খুতবা শোনা এবং উচ্চস্বরে তাকবির পাঠ করা শরিয়তের বিধান।

চাঁদ দেখার জন্য সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি রয়েছে। কিন্তু কমিটির মতামত না নিয়েই আজ শুক্রবার শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাবে এবং ২২ এপ্রিল শনিবার ঈদুল ফিতর উদযাপন হবে এমন বার্তা দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গত বুধবারের দেয়া সেই বার্তা সংশোধন করে এখন ‘চাঁদ দেখার সম্ভাবনা’ আছে এমন নতুন বার্তা দিয়েছে অধিদপ্তর। এদিকে ঈদুল ফিতর উদযাপনের তারিখ নির্ধারণে আজ শুক্রবার রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে (বাদ মাগরিব) ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বায়তুল মুকাররম মসজিদের সভাকক্ষে এই সভা বসবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। বাংলাদেশের আকাশে কোথাও পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে তা নিম্নোক্ত টেলিফোন ও ফ্যাক্স নম্বরে অথবা সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক অথবা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। টেলিফোন নম্বর : ০২-২২৩৩৮১৭২৫, ০২-৪১০৫০৯১২, ০২-৪১০৫০৯১৬ ও ০২-৪১০৫০৯১৭।

এবার জাতীয় ঈদগাহে ৩৫ হাজার মুসল্লির জন্য ঈদের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ঢাকাবাসীর সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করবেন। সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, সচিব ও কূটনীতিকরা ঈদের জামাতে অংশ নেবেন। সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এবার ঈদগাহে নান্দনিক আয়োজন করা হয়েছে। খাবার পানির যথেষ্ট ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, এই গরমে কেউ যেন কষ্ট না পায়। যদিও তাপদাহ চলছে, তারপরও হঠাৎ করে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সৃষ্টি হলে ঈদগাহ ময়দানে যেন পানি জমতে না পারে, সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ঈদগাহ ময়দান পুরোটা ত্রিপল দিয়ে ঢাকা হয়েছে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত ফ্যানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গতবারের তুলনায় স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র বেশি রাখা হয়েছে। বেশি করে চিকিৎসকও রাখা হয়েছে। সিভিল সার্জনসহ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আলাদা চিকিৎসাসেবা বুথ থাকবে।

ঈদগাহ ময়দানের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে। যেহেতু রাষ্ট্রপতি আসবেন, তাই এসএসএফ নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা করবে। তীব্র তাপদাহ থাকায় আগুন জ্বলতে পারে এমন কোনো বস্তু সঙ্গে না আনার আহ্বান জানিয়েছেন মেয়র তাপস।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ২০০ মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে এ বছর পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে ৪ দফায় ২০০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেছেন। এসব মডেল মসজিদে এবার পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আয়োজন করা হবে বলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App