×

জাতীয়

চোখে অন্ধকার দেখছেন বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৩, ০১:২৮ পিএম

চোখে অন্ধকার দেখছেন বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা

ফাইল ছবি

প্রতি বছর ঈদের আগে ক্রেতাদের কোলাহলে মুখর থাকত বঙ্গবাজারের প্রতিটি দোকান। ঈদকেন্দ্রিক এই বেচাকেনার জন্য আলাদা প্রস্তুতিও রেখেছিলেন সবাই। কিন্তু সর্বনাশা আগুনে ব্যবসায়ীরা এখন নিঃস্ব। আপাতত তারা অস্থায়ীভাবে দোকান বসিয়েছেন চৌকির ওপর। কিন্তু তাতে সিকিভাগ লাভও হচ্ছে না।

প্রচণ্ড রোদ আর গরমে খোলা আকাশের নিচে বসানো দোকানগুলোয় মিলছে না ক্রেতা। এতে চোখে অন্ধকার দেখছেন ব্যবসায়ীরা। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কীভাবে ঈদ পার করবেন সেই চিন্তা ভর করেছে তাদের মনে। অস্থায়ীভাবে বসানো এসব দোকানের প্রায় অর্ধেক চৌকি ফাঁকা পড়ে আছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেচাকেনা একদমই নেই, এ কারণে অনেকেই বসছেন না।

বঙ্গবাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভস্মীভূত বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের ১ দশমিক ৭৯ একর খোলা জায়গায় অস্থায়ীভাবে চৌকি বসিয়ে বিভিন্ন ধরনের পোশাক বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। মাথার ওপর ছাতা থাকলেও তীব্র গরমে সেটি খুব একটা কাজে আসছে না। গরমে ঘেমে তারা অলস সময় পার করছেন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পণ্য না থাকা, তীব্র গরম ও মানুষ না জানার কারণে ক্রেতারা বঙ্গবাজার আসছেন না। যারা আসছেন তারাও পণ্যের দাম ঠিকমতো দিতে চাচ্ছেন না। মূলত দোকানের জায়গা যাতে অন্য কেউ দখল করে না নেয় এবং আপাতত থাকা-খাওয়ার খরচ যেন ওঠে, সেজন্যই এই তীব্র গরমের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে বসেছেন এসব হতভাগ্য ব্যবসায়ীরা। দৈনিক খরচের টাকা তুলতেই তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে অভিযাত্রিক নামের ২২৩৩ নম্বর দোকান ছিল মো. মিজানের। আগুনে ২৫-৩০ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও একটি সুতাও দোকান থেকে বের করতে পারেননি তিনি। পুঁজি হারিয়ে এখন ধার-দেনা করে কিছু লুঙ্গি নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসেছেন তিনি। মিজান বলেন, ব্যাংকে কিছু টাকা জমানো ছিল, সেখান থেকে ৭ হাজার টাকা দিয়ে এবং বাকিতে আরো ২২ হাজার টাকা দিয়ে মালামাল কিনে খোলা আকাশের নিচে বসেছি। গরমে প্রতিদিন কষ্ট করছি। কিন্তু ক্রেতা একেবারে নেই। ঈদের আগে যেখানে আমরা প্রতিদিন ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতাম, এখন সেখানে ১০ হাজার টাকাও বিক্রি করতে পারছি না। তিনি আরো বলেন, বাড়িতে বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান আছে। সামনে ঈদ তাই কষ্ট করে হলেও গরমের মধ্যে বসে আছি। কিন্তু ক্রেতা না থাকায় কোনো কোনো দিন তো খরচের টাকাটাও উঠছে না। ছেলেমেয়েকে এবার ঈদে কিছু কিনে দেয়ার সামর্থ্যটুকুও পর্যন্ত নেই।

কথা হয় ভূঁইয়া গার্মেন্টসের মালিক ফরিদ হোসেন ভূঁইয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, দিনের বেলা বসে থেকেও ক্রেতার দেখা পাইনি। একদিন সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বসে ছিলাম চৌকিতে। মাত্র হাজার টাকার মাল বিক্রি হয়েছে। ক্রেতা নেই, বিক্রি নেই, ঈদে চলতেই কষ্ট হবে। অনেকে সরকারি তহবিলের কিছু টাকা সহায়তা পেয়েছে শুনেছি। অনেকের বিকাশ নম্বর ভুল হওয়ায় টাকা আসেনি। আবার অনেককে দেয়া হয়নি এখনো। ঈদের আগে সবাই সহায়তা পেলে ভালো হতো।

উল্লেখ্য, গত ৪ এপ্রিল ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যায় বঙ্গবাজার। আগুন নেভাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিট। যোগ দেয় বিমান, নৌ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরাও। প্রায় ৬ ঘণ্টা পর আগুনের লেলিহান শিখা নিয়ন্ত্রণে আনলেও, পুরোপুরি নির্বাপন করতে সময় লেগে যায় ৭৫ ঘণ্টা। এই ঘটনায় বঙ্গবাজারের ৪টি মার্কেট পুরোপুরি ও আশপাশের ৩টি মার্কেট অংশিক পুড়ে যায়। বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির হিসাবে অগ্নিকাণ্ডে ৩ হাজার ৮৪৫ জন ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App