×

জাতীয়

ঈদ বাজার : ফুটপাতে ভিড় ভেতরে ফাঁকা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:০৭ এএম

ঈদ বাজার : ফুটপাতে ভিড় ভেতরে ফাঁকা

ছবি: ভোরের কাগজ

দরোজায় কড়া নাড়ছে ঈদ। আর ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, বিপণিবিতানে ক্রেতাদের আনাগোনা এবং শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা ততই বাড়ছে। ফুটপাত, অলিগলি হকারদের হাঁকডাকে মুখর হয়ে উঠেছে। সুঁই-সুতা থেকে শুরু করে নারী-পুরুষের সব ধরনের নিত্যসামগ্রী পাওয়া যাচ্ছে ফুটপাতে। দাম কম হওয়ায় ক্রেতার আগ্রহও বেশি। তবে ভিড় দেখে বোঝারই উপায় নেই, আশপাশের মার্কেটগুলো ফাঁকা। দোকান মালিক ও কর্মচারীরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। এমন দৃশ্য অন্যান্য শপিংমলেও। ক্রেতারা মার্কেটে এলেও ঘুরেফিরে আবার চলে যাচ্ছেন। কোনো কোনো দোকানে দিন শেষে সন্ধ্যায় বিক্রি হচ্ছে। এ পরিস্থিতির জন্য দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিকে দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা।

যে কারণে গতবারের চেয়ে এবার বেশি দামেই ঈদ পোশাক কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। কারণ, ইতোমধ্যে গত বছরের তুলনায় পোশাকের দাম ১০-১৫ শতাংশ বেড়েছে। গত বছরও পোশাকের দাম ৫ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছিল। বুটিক হাউস ও ফ্যাশন ব্র্যান্ডের কয়েকজন উদ্যোক্তা জানান, গত এক বছরে পোশাকের জন্য প্রয়োজনীয় কাপড়, সরঞ্জামের দাম ও শ্রমিকের মজুরি সবকিছুই বেড়েছে। বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিক্রয়কেন্দ্রের খরচও বেড়ে গেছে। ফলে সব প্রতিষ্ঠানই বাধ্য হয়ে পোশাকের দাম বাড়িয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানভেদে দাম বেড়েছে ভিন্ন ভিন্ন।

গতকাল বুধবার নিউমার্কেট, আজিজ সুপার মার্কেট, শান্তিনগর টুইন টাওয়ার শপিং কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, এক সময়ের জাঁকজমকপূর্ণ মার্কেটগুলো ঝিমিয়ে পড়েছে। শান্তিনগর টুইন টাওয়ার শপিং কমপ্লেক্সের কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বন্ধ, যা মার্কেটের ইতিহাসে বিরল ঘটনা। এখানকার ব্যবসায়ীরা জানান, মার্কেটের বেচাবিক্রি কমতে থাকায় অনেক দোকানি নিয়মিত সার্ভিস চার্জ দিতে পারছেন না। এতে মার্কেট ব্যবস্থাপনায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। এজন্য শীতাতপ যন্ত্রের ত্রæটি দেখা দিলেও সারানো হচ্ছে না।

ওই এলাকার মৌচাক, আনারকলি, ফরচুন শপিং, আয়শা শপিং কমপ্লেক্সও প্রায় ক্রেতাশূন্য। তবে বেইলি রোডের বিপণিবিতানগুলোতে কিছু ক্রেতা দেখা গেছে। একই চিত্র ইস্টার্ন মল্লিকা, আজিজ সুপার মার্কেটে গিয়ে দেখা গেছে প্রায় একই অবস্থা। এসব মার্কেটের দোকানিরা জানান, এখন ঈদ প্রায় সন্নিকটে। তাদের টুকটাক বিক্রি হচ্ছে। তবে সেই অর্থে মার্কেট জমেনি।

নিউমার্কেটে দেখা গেছে, রাস্তা থেকে হকার সরাতে পুলিশ ডাণ্ডা হাতে থেমে থেমে বাঁশি বাজাচ্ছে। এতে মূল রাস্তায় হকারের অবস্থান কম থাকলেও ফুটপাতে আগের মতোই আছে। এমনকি নিউমার্কেট ও গাউছিয়া মার্কেটের সংযোগ সেতু বা ওভার ব্রিজও হকারের দখলে। নিউমার্কেটের ভেতরের খালি জায়গাগুলোতে ভ্রাম্যমাণ ও খণ্ডকালীন হকার ভরে আছে। যে যার মতো উচ্চস্বরে ক্রেতাদের ডাক দিচ্ছে। এসব ভাসমান দোকানে ক্রেতাও দেখা গেছে বেশ। যদিও তাদের দাবি, এ বছর ক্রেতার উপস্থিতি কম, বিক্রিও কম।

নিউমার্কেটের ভেতরে জেসিমুন শাড়ি নামের একটি দোকানের বিক্রয় প্রতিনিধি নসু আহমেদ টিপু জানান, দোকানে লোকজনই আসছে না। ফুটপাতে মার্কেটিং সেরে চলে যাচ্ছে। গত বছর এমন পরিস্থিতি

ছিল না। ঈদের এমন ভরা মৌসুমে সারা দিনে ১০ হাজার টাকাও বিক্রি হচ্ছে না। যে দুয়েকজন ক্রেতা আসছেন তারা কম দামি পোশাক চান। যে শাড়ির দাম ৫ হাজার টাকা, সে শাড়ির দাম হাঁকছে ৮শ টাকা। অর্থনৈতিক কারণেই এই ধস। এটা মেনে নিতেই হচ্ছে। কিচ্ছু করার নেই। মায়াবি শাড়ির বিক্রয় প্রতিনিধি মো. সেলিম জানান, বাইরে যত হাঁকডাক, বিক্রি নেই ভেতরে। অস্তিত্ব আমাদের শেষ বরং করোনার সময়ই অনেক ভালো ছিল। ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাতে যে ধস নেমেছে সেটা সামলানো যাচ্ছে না।

তবে নিউমার্কেটের ভেতরে মসজিদের পাশের খালি জায়গার দৃশ্য অন্যরকম। সেখানে থ্রিপিস বিক্রি করছেন আব্দুল্লাহ নামের এক বিক্রেতা। এক দামের এসব পোশাকের ক্রেতা থাকলেও কয়েকদিনের মাথায় তারা প্রতি পিসে ৫০ টাকা দাম বাড়িয়েছেন। সে জন্য কাস্টমার কম পাচ্ছেন বলে তিনি জানান। মূল মার্কেটের পাশাপাশি হকারদের অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, মার্কেটের দোকান আর ফুটপাতের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এখানে ধনী-গরিব সবাই কেনাকাটা করতে আসেন। বড়লোকরাও কিনছেন, মধ্যবিত্তরাও কিনছেন, হতদরিদ্ররাও কিনছেন। সবাই কম দামে কিনে খুশি।

এখানে পোশাক কিনতে আসা গার্মেন্টসকর্মী লাইলী বেগম বলেন, আমি একটা গার্মেন্টসে চাকরি করি। কেনাকাটার জন্য ফুটপাতে বসা মার্কেটগুলোই আমাদের ভরসা। বাচ্চাদের পোশাকসহ প্রায় সব ধরনের জিনিসই এখান থেকে কম দামে কিনতে পারি। যদিও এ বছর ফুটপাতের দোকানেও দাম বেড়েছে। তবে, তুলনামূলকভাবে অনেকটা কম দামেই সব পাচ্ছেন বলে জানান তিনি। কাওসার শাহীন নামে আরেক ক্রেতা বলেন, আমি একটি ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে অ্যাকাউন্টসে চাকরি করি। বাচ্চাদের জন্য জামা কিনতে এসেছি। প্রতি বছর এসব জায়গা থেকেই কিনি। ছেলে-মেয়ে ছাড়াও তো পরিবারের অনেকের জন্য কিনতে হয়। কিন্তু এতো দাম বেড়ে গেছে যে, বেতন-বোনাসে টান পড়েছে। তাই কাটছাঁট করেই কেনাকাটা করতে হচ্ছে।

চাঁদনী চক মার্কেট বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল মতিন বললেন, ঈদে অন্তত বাজার ঘুরে দাঁড়াবে এমনটাই প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু তা আর হলো না। পাইকারি বলেন, আর খুচরা ব্যবসায়ী বলুন কারোই অবস্থা ভালো নয়। মানুষ খাবে না গায়ে দেবে। প্রতিদিন যে হারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। তাতে বেচাবিক্রির অবস্থা এরচেয়ে ভালো আর কী করে হবে?

বেচাবিক্রি যদি নাইবা হয় তবে নিউমার্কেট আর গাউছিয়া এলাকায় মানুষের ভিড় কেন? এ প্রসঙ্গে জানতে চাইল তিনি বলেন, রাস্তা দিয়ে গাউছিয়া থেকে চাঁদনী চকে আসতে কষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু মার্কেটের ভেতর দিয়ে যাতায়াত করলে দেখা যাবে, একেবারে পরিষ্কার। কোনো ভিড় নেই। ক্রেতাও নেই। বাইরে থেকে মনে হবে কেনাকাটায় মানুষের ঢল নেমেছে। আসলে দাম বাড়ার কারণে অনেকের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। যাদের বাড়িতে শিশুরা আছে, তাদের জন্য না পারতে কিছু কিছু কেনাকাটা তো করতে হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App