×

জাতীয়

সড়ক ও নৌপথে স্বস্তিতেই ঘরে ফিরছে মানুষ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:১৩ এএম

সড়ক ও নৌপথে স্বস্তিতেই ঘরে ফিরছে মানুষ

ছবি: সংগৃহীত

স্বস্তি নিয়েই নৌ ও সড়ক পথে ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল থেকেই যাত্রীরা গন্তব্যে যাওয়ার জন্য রেলস্টেশন ও লঞ্চ টার্মিনালের দিকে ছুটতে শুরু করে। আজ মঙ্গলবার রাত থেকে সড়ক পথে আনুষ্ঠানিক ঈদযাত্রা শুরু হলে ভিড় বাড়তে থাকবে। দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের জন্য আগে থেকেই নৌযানগুলো প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। লঞ্চগুলো ধোয়া-মোছা ও নতুন করে রংয়ের প্রলেপের পর চকচকে অবস্থায় ঈদযাত্রা শুরু করেছে। এরই মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ কেবিন বুকিং হয়েছে। এদিকে নৌপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গত রবিবার থেকে বালুবাহী বাল্কহেড চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। লঞ্চ মালিকরা জানিয়েছেন, সোমবার থেকেই নদীপথের ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের ৪৩টি রুটে দেশের প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট থেকে যাত্রীবাহী নৌযান যাতায়াত করে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর নৌপথে যাত্রীর সংখ্যা কমে যায়। লোকসান কমাতে সব রুটের নৌযানের সংখ্যা কমিয়ে দেয়া হয়। এবার ঈদকে সামনে রেখে ঢাকা-পটুয়াখালী, ঢাকা-বরিশাল, ঢাকা-মাদারীপুর, ঢাকা-হুলারহাট-ভান্ডারিয়া, ঢাকা-ভোলা, ঢাকা-রাঙ্গাবালী, ঢাকা-চরমন্তাজ, ঢাকা-হাতিয়াসহ দক্ষিণাঞ্চলে চলাচলরত লঞ্চগুলো লোকসান কিছুটা কাটিয়ে ওঠার প্রস্তুতি নিয়েছে। কুয়াকাটা-২ লঞ্চের মালিক আবুল কালাম খান জানিয়েছেন, অনেকদিন ধরেই লঞ্চ মালিকরা লোকসান গুনছে। তবে আশার বিষয় হলো সোমবার থেকেই নৌপথে ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে। যাত্রীরা এবার নৌপথের প্রতি আবার আগ্রহ দেখাচ্ছে। ১৯ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে ছুটি শুরু হবে। তবে আমরা দুদিন আগেই ঈদযাত্রা শুরু করেছি। মঙ্গলবার থেকে নদীপথে পুরোদমে ঈদযাত্রা শুরু হবে। সড়ক পথের চেয়ে নৌপথের ভাড়া এখনো অনেক কম হওয়ায় ঈদের আগে নৌপথের চাহিদা রয়েছে। বাসভাড়া বেশি হওয়া এবং সড়কে যানজটের আশঙ্কা থাকায় এবার নৌপথে যাত্রীর সংখ্যা বাড়বে বলে আশা করছি। প্রতিদিন প্রায় ১০০টি লঞ্চ বিভিন্ন রুটে চলাচল করবে। এরই মধ্যে লঞ্চগুলোর কেবিন প্রায় ৯০ শতাংশ বুকিং হয়েছে। তবে যে হারে যাত্রী আশা করছি তা পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। আবহাওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে সতর্কতা ও নিরাপত্তার জন্য বাড়তি সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এমভি পারাবত লঞ্চের সুপারভাইজার সেলিম মিয়া জানান, প্রায় সব কেবিন বুকিং হয়ে গেছে। এটা খুবই আশাব্যঞ্জক। লঞ্চের ডেকে যাত্রী কিছুটা কম থাকলেও সমস্যা নেই। রোজার শুরু থেকেই লঞ্চের কেবিন বুকিং শুরু হয়েছে। আগামী ২১ তারিখ পর্যন্ত বুকিং শেষ। এবার ডেকের যাত্রীর সংখ্যাও বাড়বে। গরমের কারণে অনেকেই এবার লঞ্চে যাতায়াত করবে। তবে যাত্রী বাড়লেও এখনও পর্যন্ত ভাড়া বাড়ানো হয়নি। আগের ভাড়াতেই যাত্রী পরিবহন করা হবে। সুন্দরবন-১৬ লঞ্চের স্টাফ শরীফুল ইসলাম জানান, ঈদ উপলক্ষে সুন্দরবন গ্রুপের সব লঞ্চ চলাচল করবে। প্রায় শতভাগ কেবিন এরই মধ্যে বুকিং হয়েছে। কেবিন বুকিংয়ের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে, অধিকাংশ কেবিন এরই মধ্যে বুকড হয়ে গেছে। এবার নৌপথে ঈদযাত্রায় আশাব্যঞ্জকহারে যাত্রী পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। এডভেঞ্চার লঞ্চের স্টাফ শামীম জানান, ঈদ উপলক্ষে ঢাকা-বরিশাল রুটে আগের মতোই এডভেঞ্চার গ্রুপের সব লঞ্চ যাত্রী পরিবহনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। লঞ্চের অধিকাংশ কেবিন বুকিং হয়ে গেছে। সামান্য কিছু কেবিন খালি আছে, এগুলো দুএকদিনের মধ্যেই ভাড়া হয়ে যাবে। তবে লঞ্চের ডেকে আগের মতো পর্যাপ্ত সংখ্যক যাত্রী আর পাওয়া যাবে না, কারণ সড়ক পথেই লোকজন অল্প সময়ে যেতে বেশি আগ্রহী। বাল্কহেড চলাচল নিষিদ্ধ : নৌপথে দুর্ঘটনা এড়াতে রবিবার রাত থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত বালুবাহী বাল্কহেড চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে। নৌপথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং দুর্ঘটনা এড়াতে নৌপুলিশ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নৌযাত্রা নিরাপদ করতে সদরঘাটসহ দেশের সব নদীবন্দরে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ঈদযাত্রা নির্বিঘœ ও নিরাপদ করতে নৌপুলিশের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত তৎপর থাকবে। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় কোনো লঞ্চ টার্মিনাল ত্যাগ করতে দেয়া হবে না। লঞ্চে মোটরসাইকেল বহন নিষিদ্ধ : যাত্রী নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে কোনো লঞ্চেই মোটরসাইকেল বহন করা যাবে না। লঞ্চের ডেকে মালামাল পরিবহনও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় অনেকেই লঞ্চে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় মোটরসাইকেল নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এবার লঞ্চে মোটরসাইকেল পরিবহন করা যাবে না। নৌ প্রতিমন্ত্রী খালেদ মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, শিমুলিয়া ফেরিঘাট হয়ে মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারবে। বিআইডব্লিউটিএ ও বিআইডব্লিউটিসি মোটরসাইকেল পারাপারের ব্যবস্থা নেবে। তবে যাত্রীবাহী লঞ্চে মোটরসাইকেল বহন করা যাবে না। বিআইডব্লিউটিএর প্রস্তুতি : নৌপথে ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে বিআইডব্লিউটিএ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানা গেছে। বিআইডব্লিউটিএর ঢাকা বন্দরের যুগ্ম পরিচালক কবীর হোসেন জানান, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিআইডব্লিউটিএ নৌপথে ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। দুই দফা বৈঠকের পর লঞ্চ মালিক-শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে। এবার টার্মিনালে একাধিক মনিটরিং টিমের তৎপরতা থাকবে। ফিটনেসবিহীন লঞ্চ যেন চলাচল করতে না পারে সেদিকে নজরদারি চলবে। সব নৌযানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, বয়া, লাইফ জ্যাকেট মজুত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন জানিয়েছেন, ঈদকে সামনে রেখে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ১৯ এপ্রিল থেকেই চাপ বাড়বে। যাত্রী ও যানবাহন পারাপারের জন্য ২০টি ফেরি চালু থাকবে। পাশাপাশি ৩টি ঘাটের ৬টি পকেট চালু থাকবে। সড়কেও স্বস্তি : এদিকে সড়ক পথেও মানুষ ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে। নিয়মিত চলাচলরত দূরপাল্লার বাসগুলো যাত্রী নিয়ে সকাল থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছে। প্রায় সব কোম্পানির বাসেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যাত্রী ছিল। কোনো রুটের সড়ক-মহাসড়কেই যানবাহনের তেমন চাপ ছিল না এবং যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ নৌরুট দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটেও ফেরিগুলো যানবাহনের জন্য অপেক্ষায় ছিল। ঘাট এলাকায় যানবাহনের কোনো সিরিয়াল লাগেনি এবং ভোগান্তি নেই। ব্যস্ততম ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক স্বাভাবিক সময়ের মতোই ফাঁকা ছিল। দূরপাল্লার বাসের চাপ ছিল না। ঢাকা-মাওয়া সড়কেও বাসের চাপ কম থাকায় স্বস্তিতেই লোকজন বাড়ি ফিরছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কেও যানবাহনের ঈদের চাপ না থাকায় কোনো যানজটের সৃষ্টি হয়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App