×

জাতীয়

তীব্র গরমে বাড়ছে রোগবালাই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:০৩ এএম

তীব্র গরমে বাড়ছে রোগবালাই

ছবি: সংগৃহীত

স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত কৃষিকাজে ক্ষতির আশঙ্কা ৩ বিভাগে বৃষ্টির আভাস

দেশব্যাপী চলছে তীব্র তাপদাহ। চৈত্রের বিদায়বেলায় শুরু হওয়া চলমান এই তাপদাহে দেশজুড়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। গ্রাম থেকে শহর, সবখানেই হাঁসফাঁস অবস্থা। বাতাসে আর্দ্রতা অস্বাভাবিক কম থাকায় গরম প্রকৃত তাপমাত্রার চেয়ে বেশি পোড়াচ্ছে মানুষকে। পবিত্র রমজানে রোজা রেখে এই তাপদাহে সবার মধ্যেই এক অস্বস্তি ও অস্থিরতা বিরাজ করছে। প্রচণ্ড এই গরমে বেশি বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। গরমের তীব্রতায় বাড়ছে বিভিন্ন রোগবালাই। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রে বাড়ছে ডায়রিয়া, জ্বর, চর্মরোগ, কাশি, মাথা ব্যথা ও টাইফয়েড রোগীর সংখ্যা। এমন গরমে দীর্ঘ সময় রোদে থাকলে হিটস্ট্রোক হয়ে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে লোকজন। শিশু ও বয়স্কদের জন্য এই ঝুঁকি আরো বেশি।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন- প্রচণ্ড গরমে মানুষের শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মানুষের শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যখন বাইরের তাপমাত্রা মানুষের শরীরের চেয়ে বেশি মনে হবে এবং বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকবে তখন একটু পর পর বেশি বেশি তরল খাবার ও পানি খেতে হবে। গরমে মানুষের শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়ায় বমি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই বেশি বেশি বিশুদ্ধ খাবার পানি পান করতে হবে। যেহেতু এখন রমজান মাস, অনেকেই রোজা রাখেন, তাদের অবশ্যই ইফতারের পর থেকে সেহ্রি পর্যন্ত প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন- জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে তাপদাহের ওপর প্রভাব পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ গ্রিনহাউস গ্যাসের সমস্যা। অতিরিক্ত জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন, মিথেনসহ নানা ধরনের ক্ষতিকারক গ্যাস বেড়ে যায় এবং এই গ্যাসগুলো বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে চলেছে। অনাবৃষ্টি তাপদাহকে দিন দিন আরো ভয়ংকর করে তুলছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারের তাপদাহ অনেক তীব্র, অনেক শক্তিশালী। তীব্র এই তাপদাহ থেকে মুক্তি মিলবে ভারি বর্ষণ হলে। তবে সহজেই মুক্তি মিলছে না জলবায়ু পরিবর্তনের এই সমস্যা থেকে।

এদিকে, গত কয়েকদিনে দেশে অসহনীয় তাপমাত্রা বাড়ার ফলে জীবনযাত্রার মান যেমন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, সে সঙ্গে কমছে কর্মঘণ্টাও। একই সঙ্গে গরমের তীব্রতার সঙ্গে খরার প্রকটতাও যেন বেড়েই চলেছে। অনাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আবাদি জমি। এবারের খরার প্রভাবে বিভিন্ন সবজি ও ফলের ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তীব্র এই তাপদাহে দিশাহারা দেশের বিস্তীর্ণ এলাকার চাষিরা। গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে গরমে ঝলসে যাচ্ছে বোরো ধান। গভীর নলকূপ ও পাম্প থেকে সেচ দিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না। জমিতে পানি দিলেও নিমেষে তা মাটির গভীরে চলে যাচ্ছে। তীব্র রোদে ঝরে যাচ্ছে গাছের আম, লিচু, লেবু ও কাঁঠাল।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে আবহাওয়ার এমন পরিবর্তন ভাবাই যাচ্ছে না। বোরো ধানের সঙ্গে সবজি চাষের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। রোজই বিভিন্ন এলাকা থেকে চাষিরা টেলিফোন করছেন।

ভ্যাপসা গরম ও অতিরিক্ত আর্দ্রতাযুক্ত আবহাওয়ায় শ্রম ও উৎপাদনশীলতা হারাচ্ছে বিশ্বের অনেক দেশ। সেই তালিকায় শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের নাম আছে বলে গত বছর এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ হয় এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ লেটার্স জার্নালে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়- আবহাওয়ার এমন বিরূপ পরিস্থিতিতে প্রতি বছর ৩ হাজার ২০০ কোটি কর্মঘণ্টা হারাচ্ছে বাংলাদেশ। মূলত খোলা স্থানে কায়িক শ্রম দেয়া মানুষের কর্মঘণ্টা কমার বিষয়টি উঠে আসে এতে।

গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে- ২০০১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে এই ভ্যাপসা গরমের জন্য মানুষের বাইরে কাজ করা ক্রমেই কঠিন এবং বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।

এদিকে রাজধানী ঢাকাসহ কিছু অঞ্চলে এরই মধ্যে তাপমাত্রা নতুন রেকর্ড তৈরি করেছে। ১৯৬৫ সালে ঢাকায় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। এরপর এই প্রথম ঢাকায় ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে গত রবিবার। এছাড়া টানা ১৫ দিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে চুয়াডাঙ্গা জেলায়। গতকাল সোমবার বিকাল ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর আগে গত শনিবার এই জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে- সারাদেশে বয়ে যাওয়া তীব্র এই তাপদাহ আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে। এতে গরমে মানুষের অস্বস্তি আরো বাড়বে। তবে এর মধ্যেও কিছুটা সুখবর দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

সংস্থাটির পক্ষ থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে- আজ মঙ্গলবার থেকে দেশের তিন বিভাগের দুয়েক জায়গায় ঝড়বৃষ্টি হতে পারে। তবে সীমিত পরিসরে ঝড়বৃষ্টি হলেও আপাতত গরম থেকে মুক্তি মিলছে না।

আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার চিত্র তুলে ধরে জানান, গতকাল (সোমবার) সকাল ৯টা থেকে আজ (মঙ্গলবার) সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। তবে বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময়ে সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

এছাড়া খুলনা বিভাগসহ ঢাকা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী ও পাবনা জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপদাহ বয়ে যাচ্ছে এবং দেশের অন্যত্র মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপদাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানান আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক।

আগামী তিন দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে তিনি জানান- এ সময়ের শেষের দিকে সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে।

বৃষ্টির জন্য রাজধানীতে ইস্তিসকার নামাজ আদায়: তীব্র তাপদাহ থেকে মুক্তি ও প্রশান্তির বৃষ্টির জন্য রাজধানীতে ইস্তিসকার নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা। গতকাল (সোমবার) সকাল ১০টায় আফতাবনগর এল ব্লক খেলার মাঠে ইস্তিসকার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সহস্রাধিক মুসল্লি অংশ নেন। নামাজে ইমামতি করেন জনপ্রিয় ইসলামী আলোচক মুফতি শায়খ আহমদুল্লাহ। নামাজ শেষে বৃষ্টির জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে ফরিয়াদ জানিয়ে দোয়া পরিচালনা করেন তিনি। এছাড়া মোনাজাতে চলমান বৈশ্বিক সংকট থেকে মুক্তির দোয়াও করা হয়।

নামাজে অংশ নেয়া মুসল্লিরা জানান, দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় মানুষ খুব বিপদে আছে। বৃষ্টি বা পানির জন্য আল্লাহ নামাজের মাধ্যমে চাইতে বলেছেন। বৃষ্টির জন্য এই নামাজ আদায় করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত। তাই আমরা সবাই একত্র হয়ে এ নামাজ আদায় করেছি।

এদিকে অনাবৃষ্টি ও তীব্র তাপদাহ থেকে রক্ষা পেতে গত রবিবারও রাজধানীর মিরপুরের ডিওএসএস মসজিদ এলাকাতেও বিশেষ নামাজ (সালাতুল ইস্তিস্কা) আদায় করা হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App