×

জাতীয়

এসডিজির পাহাড়সম চ্যালেঞ্জ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:৪৫ এএম

এসডিজির পাহাড়সম চ্যালেঞ্জ

ফাইল ছবি

করোনা, জলবায়ু পরিবর্তন ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব লক্ষ্য অর্জনে কৌশলী সরকার

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) আওতায় ১৭টি মূল অভীষ্ট থেকে ৩৯টি সূচককে বাংলাদেশের জন্য ‘এসডিজি অগ্রাধিকার ক্ষেত্র’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রতিটি জেলার বাস্তবতা বিবেচনায় একটি করে অতিরিক্ত সূচক নির্ধারিত রয়েছে। ২০১৫ সালে শুরু হওয়া এসডিজি মহাপরিকল্পনার ইতোমধ্যে সাত বছর পার হয়েছে; যার বাস্তবায়ন গতি কোভিড-১৯ মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কিছুটা হলেও হুমকির মুখে পড়েছে। ক্ষুধা-দারিদ্র্য হ্রাসের পরিবর্তে এখন তা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অর্থনীতি স্থিতিশীল ও টেকসই হওয়ার পরিবর্তে আর্থিকভাবে দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতেও রয়েছে অর্ধশতাধিক দেশ। তবে ২০৩০ সালের মধ্যে অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে কৌশল বাস্তবায়ন করছে সরকার যার সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে জাতিকে।

এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে দুটি লক্ষ্য দারিদ্র্য নিয়ে। প্রথমটি দারিদ্র্য শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা এবং দ্বিতীয়টি কোনো মানুষ অভুক্ত থাকতে পারবে না। সেই সঙ্গে শান্তি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে টেকসই উৎপাদন ও অংশীদারিত্ব তৈরিও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ ২০২০ সালে সবশেষ অগ্রগতি পর্যালোচনা প্রতিবেদন করেছিল। ওই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এসডিজির ১৭টি অভীষ্টের মধ্যে চারটি টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে সঠিক পথে ও ছয়টি অভীষ্ট অর্জনে বাংলাদেশ পরিমিত রূপে উন্নতি করেছে। এসডিজির তিনটি অভীষ্ট অর্জনে বাংলাদেশের অবস্থান অপরিবর্তিত ও দুটির মূল্যায়নের জন্য উপাত্তে ঘাটতি রয়েছে।

একসঙ্গে কাজ করলে ২০৩০ সালের আগেই এসডিজি অর্জন সম্ভব বলে মনে করছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বছরের ১৬ মে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এসডিজির বাস্তবায়ন পর্যালোচনার জন্য দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এসডিজি অর্জনে নীতি সহায়তা ও অর্থের জোগান অব্যাহত রাখবে সরকার। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে আমাদের সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আমরা জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও সচেষ্ট আছি। এরই মধ্যে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) বাস্তবায়নে আমাদের সাফল্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। উন্নয়নের এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে জাতিসংঘ ঘোষিত ‘এজেন্ডা-২০৩০’ তথা এসডিজি বাস্তবায়নে আমাদের সরকার বদ্ধপরিকর।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে আন্তঃসংযোগ চ্যালেঞ্জ যেমন- করোনা ভাইরাস মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তন ও ইউক্রেন সংকট প্রভাব ফেলেছে। এছাড়া বিশ্বব্যাপী সংঘাত, অসমতা, অসহিষ্ণুতা, সন্ত্রাসবাদ ও জোরপূর্বক স্থানচ্যুতি বিভিন্ন দেশের অগ্রগতিকে হুমকির মধ্যে ফেলেছে।

এসডিজি বাস্তবায়নকে সামনে রেখে বাংলাদেশ সরকার অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা করেছে। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ভোরের কাগজকে বলেন, করোনা মহামারির আগে এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশ সঠিক পথে ছিল। করোনা মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশ ২০২০ সালের এসডিজির দ্বিতীয় স্বেচ্ছাসেবী জাতীয় পর্যালোচনা (ভিএনআর) জমা দিয়েছে। এখন আমরা মহামারির প্রভাব থেকে বের হয়ে টেকসই পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে রয়েছি।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, সম্প্রতি বৈশ্বিক খাদ্য, জ্বালানি ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলো এসডিজি অর্জনের সব লক্ষ্যমাত্রা কার্যকরভাবে বাস্তবায়নে আরো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত তহবিল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বৈশ্বিক পর্যায়ে এসডিজি সফলভাবে বাস্তবায়নে অবকাঠামোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়নের ব্যবস্থা করাটা প্রকৃতপক্ষে বৃহত্তম চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে একটি সর্বজনীন, বৈষম্যহীন এবং ন্যায়সংগত বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউটিও) সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। বেসরকারি খাত থেকে টেকসই বিনিয়োগও অত্যন্ত জরুরি। তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে।

এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ভোরের কাগজকে বলেন, কোভিড, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে আর্থিক অবস্থা, সরকারি, বেসরকারি কার্যক্রম কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে- এটা সত্যি। কোভিড মোকাবিলায় সফল হয়েছে বাংলাদেশ। তবে যুদ্ধের গতি কমলে এসডিজি উন্নয়ন এগিয়ে যাবে। এখনো সময় আছে। ১৭টি অভীষ্টের মধ্যে সবগুলো না হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সফলভাবে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। জলবায়ু মোকাবিলায় বাংলাদেশ সব সময় সোচ্চার। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহায়তার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এসডিজি অর্জনে সরকারি, বেসরকারি, প্রাইভেট ও নাগরিক পার্টনারশিপ প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ভোরের কাগজকে বলেন, শান্তি-ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা বড় চ্যালেঞ্জ। সুশাসনের ক্ষেত্রে উল্টো পথে বাংলাদেশ। অভীষ্ট-১৬ এর আওতায় সবার জন্য বৈষম্যহীনভাবে ন্যায়বিচার, অংশগ্রহণমূলক সুশাসন, প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও কার্যকারিতা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধমূলক লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়ন অনেক কঠিন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App