×

জাতীয়

বিদেশির সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে খুন হন মিতু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৫৫ এএম

বিদেশির সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে খুন হন মিতু

‘কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত বিদেশি এক নারীর সঙ্গে বাবুল অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। ওই নারীকে নিয়ে হোটেলেও রাতযাপন করেন। এ বিষয়টি মিতু জানার পর তাদের সংসারে অশান্তি শুরু হয়। মিতু স্বামীর অনৈতিক সম্পর্ক মেনে নিতে না পেরে তিনবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে। প্রতিবারই তাকে সেখান থেকে ফিরিয়ে এনেছি। কিন্তু বাবুল বিদেশি নারীর প্রতি এতটাই আসক্ত হয়ে পড়েন, তিনি স্ত্রীকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেন। বাবুল তাঁর বিশ্বস্ত সোর্স মুছাকে অস্ত্র দিয়ে মিতুকে খুন করার নির্দেশ দেন। বাবুলের নির্দেশে মুছা ও তাঁর সঙ্গীরা মিতুকে সড়কের ওপর গুলি ও ছুরিকাঘাত করে খুন করেন।’

দেশজুড়ে আলোচিত চট্টগ্রামের মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ডের সাত বছর পর প্রথম সাক্ষ্যতে এভাবেই বাবুল আক্তার ও অন্য আসামিদের বিষয়ে জবানবন্দি দেন নিহতের বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন। তার সাক্ষ্যের মাধ্যমে মিতু খুনে সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারসহ সাত আসামির বিচার শুরু হয়।

রবিবার (৯ এপ্রিল) চট্টগ্রাম তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জসিম উদ্দিনের আদালতে সাক্ষ্য দেন মোশাররফ। প্রায় দুই ঘণ্টার সাক্ষ্যে মিতু খুনে বাবুলের সম্পৃক্ত থাকার বিষয়ে নানান তথ্য তুলে ধরেন তিনি।

তবে সাক্ষ্য শুরুর আগে বাবুল আক্তারের আইনজীবী জানান, হাইকোর্টে অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে রিট শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। তাই ঈদের পর সাক্ষ্য নিতে আবেদন করেন তিনি। রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরোধিতা করে। প্রায় ৪৫ মিনিট উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করতে আদেশ দেন। দুপুর ১টার দিকে সাক্ষ্য শুরু হয়ে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত চলে।

গত ১৩ মার্চ আদালত বাবুল আক্তারসহ সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পিবিআই সাতজনকে আসামি করে আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর পিপি আবদুর রশিদ। বাবুল আক্তারের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ।

পিপি আবদুর রশিদ বলেন, স্ত্রী মিতু খুনে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ত থাকার বহু তথ্য তুলে ধরেন মোশাররফ হোসেন। গতকাল তাঁর সাক্ষ্য শেষ হয়নি। পরের শুনানিতে তিনি বাকি জবানবন্দি তুলে ধরবেন।

বাবুলের আইনজীবী মুরাদ বলেন, পিবিআই চার্জশিটে যেভাবে বিদেশি নারীর সঙ্গে বাবুলের সম্পর্কের গল্প তুলে ধরেছেন, সাক্ষীও একই গল্প হুবহু আদালতে তুলে ধরেন। তার সাক্ষ্য শেষ হয়নি। সাক্ষ্য শেষে তাকে জেরা করা হবে।

২০১৬ সালে মিতু খুন হওয়ার পর তার স্বামী সাবেক এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরের পাঁচলাইশ থানায় জঙ্গিদের দিকে আঙুল তুলে একটি খুনের মামলা করেন। পরে নানা নাটকীয়তা শেষে পিবিআই জানায়, বাদীই খুনে সম্পৃক্ত। তার পর বাবুলকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। বাবুল আক্তার এখন এ মামলার প্রধান আসামি।

মামলার অন্য আসামিরা হলো- মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, এহতেশামুল হক ভোলা, শাহজাহান মিয়া, কামরুল ইসলাম শিকদার মুছা ও খায়রুল ইসলাম। সাক্ষ্য গ্রহণ উপলক্ষে কারাবন্দি বাবুলসহ পাঁচ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। অন্য দুই আসামি কালু পলাতক, মুছা রয়েছেন নিখোঁজ। জামিনে থাকা আসামি ভোলাও আদালতে হাজিরা দেন।

২০১৬ সালের ৫ জুন চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় মিতুকে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এসপি বাবুল এর কিছুদিন আগেই চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশে ছিলেন। বদলি হয়ে তিনি ঢাকায় কর্মস্থলে যোগ দিতে যাওয়ার পরপরই চট্টগ্রামে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। হত্যাকাণ্ডের পর মিতুর পরিবার বাবুলের পক্ষে থাকলেও ২০১৭ সালে বাবুলের জড়িত থাকার সন্দেহ প্রকাশ করেন মোশাররফ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App