×

জাতীয়

মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৪৮ এএম

মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি

ছবি: সংগৃহীত

মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি

ছবি: ভোরের কাগজ

মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি

ছবি: ভোরের কাগজ

‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি’

বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধারণ করে কূপমণ্ডুকতা আর গোঁড়ামির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে দেখা হয় পহেলা বৈশাখকে। এবারো বছরের প্রথম দিনের সকালে সারা বছরের মঙ্গল আর যুদ্ধ-বিগ্রহের বিশ্বে শান্তির বার্তা কামনায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান ‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে চলছে মঙ্গল শোভাযাত্রা ১৪৩০ বঙ্গাব্দের প্রস্তুতি। প্রতিবারের মতো এবারো প্রায় ১৫ দিন আগে শুরু হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন। এ আয়োজনে যুক্ত রয়েছে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী।

সেই আলোকে বর্ণিল আয়োজনে ১৪৩০ বঙ্গাব্দকে বরণ করে নিতে শোভাযাত্রার নানা অনুষঙ্গ তৈরি করছেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা। ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ এ শোভাযাত্রা বাঙালির অসা¤প্রদায়িক চেতনাকে বহন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে এখন সাজ সাজ রব। এবারের শোভাযাত্রায় বিশ্বব্যাপী শান্তির আহ্বান জানানো হবে। তবে রমজান মাস হওয়ায় শোভাযাত্রা হবে সংক্ষিপ্ত, চারুকলা থেকে শাহবাগ ঘুরে আবার চারুকলা পর্যন্ত।

গতকাল শনিবার বিকালে সরেজমিনে চারুকলা অনুষদে দেখা যায়, ছবি আঁকা, শিল্পকর্ম তৈরিতে ব্যস্ত আয়োজকরা। তার পাশেই চলছে মঙ্গল শোভাযাত্রায় প্রদর্শনীর জন্য বিভিন্ন মুখোশ, পেঁচা, ঘোড়া, মূর্তি, ট্যাপা পুতুল, নকশি পাখি, বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি।

[caption id="attachment_421566" align="aligncenter" width="1600"] ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

প্রতি বছর শোভাযাত্রার আয়োজনের দায়িত্বে থাকে চারুকলা অনুষদের দুটি ব্যাচ। এ বছর দায়িত্বে আছে অনুষদের ২৪ ও ২৫তম ব্যাচ। এ আয়োজনের জন্য কোনো স্পন্সর গ্রহণ করে না কর্তৃপক্ষ। অনুষদের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে কর্মশালায় আঁকা ছবি ও বিভিন্ন শিল্পকর্ম বিক্রি এবং বিশ্বজবিদ্যালয় থেকে আর্থিক অনুদানের অর্থে আয়োজন করা হয় এই মঙ্গল শোভাযাত্রা।

চারুকলার শিক্ষার্থীরা জানান, প্রতিদিন নিজেদের ক্লাস, পরীক্ষার ফাঁকে দুপুর আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এই প্রদর্শনী ও আঁকার কাজ। বাঙালির ইতিহাস স্বীকৃত এই ঐতিহাসিক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে আনন্দিত তারা। নিজেদের কাজ মনে করেই এসব কাজ করেন বলে জানান তারা। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। শোভাযাত্রার কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত চারুকলার ৭০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সংগ্রামী মোহন বিশ্বাস বলেন, এবার মঙ্গল শোভাযাত্রায় প্রতিকৃতি হিসাবে এবার থাকছে হাতি, বাঘ, টেপা পুতুল, নীলগাই ও ময়ূর। এবারের প্রতিপাদ্যের বিষয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা উদযাপন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অচিন্ত্য সাহা রায় বলেন, আমরা চাই পৃথিবীতে যুদ্ধ নয়, বৃষ্টির মতো করে শান্তি বর্ষিত হোক। তিনি বলেন, শোভাযাত্রায় মায়ের কোলে সন্তান থাকবে। এর মাধ্যমে আমরা তুলে ধরতে চাই- মায়ের কোলে সন্তান যেমন নিরাপদ, তেমনই এই পৃথিবী প্রতিটি মানুষের জন্য নিরাপদ আশ্রয় হয়ে উঠুক।

ড্রয়িং ্এন্ড প্রিন্টিং বিভাগের শিক্ষার্থী শিমুল কুম্ভকার বলেন, বাঙালির অন্যতম একটি উৎসব এই বাংলা বর্ষবরণ। এটি ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব বাঙালির প্রাণের উৎসব। আর উৎসবের প্রধান অনুষঙ্গ এই মঙ্গল শোভাযাত্রা। ইতোমধ্যে এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে সত্যি আনন্দিত। শুধু আমিই না, এখানে যারা আছে, সবার কাছেই গর্বের। সবাই এটাকে নিজের কাজই মনে করি।

গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, এই আয়োজনের জন্য আমরা কারো কাছ থেকে টাকা-পয়সা নিই না। বিভাগের সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ছবি আঁকি, মুখোশসহ বিভিন্ন পোর্ট্রেট তৈরি করি। এগুলো বিক্রি করে সেই আয় দিয়েই শোভাযাত্রার আয়োজন করি। এখানে আমাদের প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার মতো খরচ হয়। কাজটি আমরা উপভোগ করি।

[caption id="attachment_421569" align="aligncenter" width="1600"] ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি’ প্রতিপাদ্য প্রসঙ্গে নববর্ষ উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, প্রতিবছর আমরা বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই প্রতিপাদ্য ঠিক করি। বর্তমানে মানুষের মাঝে হানাহানি, অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। চরম মাত্রায় পৌঁছেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এর ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও চরম ধস নেমেছে। তাই আমাদের এবারের কামনা পৃথিবীতে শান্তি নেমে আসুক। সেজন্যই এই প্রতিপাদ্য।

আশির দশকে সামরিক শাসনের অর্গল ভাঙার আহ্বানে পহেলা বৈশাখে চারুকলা থেকে যে শোভাযাত্রা বের হয়েছিল; সেটিই পরে মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম নেয়। ২০১৬ সালে ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতিও পায় এ কর্মসূচি।

কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি : বাংলা নববর্ষ উদযাপনের কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার উদ্দেশে সভায় প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদকে আহ্বায়ক করে ২৪ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন এই কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন।

শৃঙ্খলা উপকমিটি : কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়াও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নববর্ষ উদযাপনের লক্ষ্যে দুটি উপকমিটি গঠন করা হয়। এগুলো হচ্ছে শৃঙ্খলা উপকমিটি ও মঙ্গল শোভাযাত্রা উপকমিটি। ১২ সদস্যবিশিষ্ট শৃঙ্খলা উপকমিটির আহ্বায়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী এবং সদস্য সচিব সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. লিটন কুমার সাহা।

শোভাযাত্রা উপকমিটি : ৩২ সদস্যবিশিষ্ট মঙ্গল শোভাযাত্রা উপকমিটির আহ্বায়ক চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন এবং সদস্য সচিব সহকারী প্রক্টর মো. নাজির হোসেন খান। উৎসবপ্রিয় বাঙালির প্রাণের উৎসব বাংলা বর্ষবরণ। প্রতিবছর বাংলা বছরের প্রথম দিনটিকে বরণ করে নিতে বাঙালিরা মুখিয়ে থাকে। আর এর প্রধান অনুষঙ্গ হলো মঙ্গল শোভাযাত্রা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App