×

জাতীয়

ছয় মাসের পরিকল্পনায় জঙ্গি ছিনতাই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:৫৯ এএম

ছয় মাসের পরিকল্পনায় জঙ্গি ছিনতাই

ছবি: সংগৃহীত

পলাতকরা দেশেই সোহেলের স্ত্রী ও আশ্রয়দাতা গ্রেপ্তার

পুরান ঢাকার আদালত চত্বর থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার আগে ৬ মাস ধরে পরিকল্পনা হয়। পরিকল্পনার কথা জেলে থাকা জঙ্গিদের কাছে পৌঁছে দেন ফাতেমা তাসনীম শিখা। জঙ্গি ছিনতাইয়ের প্রধান সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেছেন শিখা। তিনি আদালত থেকে পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গির একজন আবু সিদ্দীক সোহেলের স্ত্রী। আদালত চত্বর থেকে ছিনিয়ে নেয়া জঙ্গিরা দেশেই আছেন। ঘটনার পর তারা সদরঘাট হয়ে ‘আনসার হাউজে’ অবস্থান নেন।

গতকাল শনিবার দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, শিখা ও তার আশ্রয়দাতা হুসনা আক্তারকে শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনার চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে।

আসাদুজ্জামান বলেন, শিখাকে গ্রেপ্তারের আগে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা ও পালিয়ে যাওয়ার বিস্তারিত তথ্য জানতে পারছিলাম না। শিখাকে গ্রেপ্তারের পর জানতে পেরেছি, আদালত থেকে জঙ্গিরা সদরঘাট হয়ে একটি শেল্টার হাউসে অবস্থান নেন। সেখান থেকে তারা অন্য জায়গায় পালিয়ে যান। আর আদালত চত্বর থেকে শিখাসহ অন্যরা বিকল্প রাস্তা দিয়ে এলাকা ছাড়েন। তিনি বলেন, আদালত থেকে পালানোর পরও শিখার নারায়ণগঞ্জের বাসায় সোহেলের যাতায়াত ছিল। তিনি ওই বাসায় দুবার গিয়েছিলেন। তবে অভিযানে সোহেলকে সেখানে পাওয়া যায়নি। পলাতক দুই জঙ্গি দেশেই আছেন। সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে তারা দুজন পৃথক স্থানে অবস্থান করছেন।

সিটিটিসি জানিয়েছে, ফাতেমা তাসনীম শিখা ২০১৪ সালে এমআইএসটি থেকে প্রথম শ্রেণিতে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেন। একপর্যায়ে তার ভাই মোজ্জাম্মেল হোসেন সাইমনের মাধ্যমে আনসার আল ইসলামের আদর্শে দীক্ষিত হন। পরবর্তী সময়ে সাইমনের মাধ্যমে আবু সিদ্দিীক সোহেলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। সোহেল আনসার আল ইসলামের সামরিক (আসকারি) শাখার সদস্য ছিলেন। সোহেলের সঙ্গে বিয়ের পর থেকে শিখা আরো গভীরভাবে সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ২০১৭ সালে মুক্তমনা ব্লগার অভিজিত রায়, ফয়সল আরেফিন দীপন ও নীলাদ্রি নিলয় হত্যা মামলার আসামি হিসেবে আবু সিদ্দীক সোহেল গ্রেপ্তার হন।

জানা গেছে, আনসার আল ইসলামের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ১০-১২ জন সদস্য ছিনতাইয়ে অংশ নেন। ৪ জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা থাকলেও তারা দুজনকে ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হন। ছিনিয়ে নেয়া ২ জঙ্গিসহ একটি গ্রুপ চলে যান সদরঘাটে। সেখান থেকে তারা একটি ‘আনসার হাউজে’ গিয়ে অবস্থান নেন। আনসার আল ইসলামের সেফ হাউজকে সাংগঠনিক ভাষায় ‘আনসার হাউজ’ বলা হয়।

এদিকে ছিনতাইয়ের ৬ মাস আগে তারা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ভুয়া এনআইডি ও ভুয়া পরিচয়ে একটি বাড়ি ভাড়া নেন। নেতাদের নির্দেশে সংগঠনের আসকারি বিভাগের প্রধান আয়মানের নেতৃত্বে তারা সেখানে মিটিং করেন। শিখা ময়মনসিংহ থেকে এসে বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকের সব সিদ্ধান্ত জেলখানায় থাকা জঙ্গি সোহেলকে দিতেন শিখা। স্ত্রী পরিচয়ে দেখা করার সুযোগে তিনি সংগঠনের তথ্য ও তাদের ছিনিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা জানান। ঘটনার আগে গত বছরের ১ নভেম্বর শিখা, আয়মানসহ ছিনতাইয়ে অংশ নেয়া প্রত্যেকে আদালত

প্রাঙ্গণে এসে পুরো এলাকা রেকি করেন। তারা কোন পথে পালাবেন, ছিনতাইয়ে ব্যর্থ হলে কী করবেন সেসব নির্ধারণ করেন। ঘটনার দিন ২০ নভেম্বর আয়মান ও শিখা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে পুরো ছিনতাই ঘটনা মনিটরিং করেন। ছিনতাই হওয়া ২ জঙ্গিকে নিয়ে প্রথমে সদরঘাট যান তারা। সেখান থেকে তারা পূর্বনির্ধারিত আনসার হাউজে গিয়ে অবস্থান নেন। আয়মান ও শিখাসহ বাকিরা অন্যপথে গিয়ে সেই আনসার হাউজে গিয়ে মিলিত হন।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২০ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম কোর্ট ভবনের সামনে থেকে মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত এবং মো. আবু সিদ্দীক সোহেলকে ছিনিয়ে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যান জঙ্গিরা। তারা এখনো অধরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App