×

জাতীয়

স্বস্তির ঈদযাত্রায় শঙ্কার কাঁটা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:১৭ এএম

স্বস্তির ঈদযাত্রায় শঙ্কার কাঁটা

ফাইল ছবি

উত্তরবঙ্গে ভোগান্তির আশঙ্কা ৩৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ সড়কের অবস্থা খারাপ

এবারের ঈদযাত্রায় উত্তরবঙ্গের যাত্রীদের ঘরে ফিরতে বিড়ম্বনায় পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প স্বস্তির ঈদযাত্রায় গলার কাঁটা হবে। পদ্মা সেতু ও বঙ্গবন্ধু সেতুর টোলপ্লাজায় এবারো দীর্ঘ যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। এই দুই স্থানে যানজটের প্রভাব আশপাশের সড়কেও পড়বে। তবে সড়কের অবস্থা ভালো থাকায় কিছু জায়গায় হাইওয়ে পুলিশের ব্যবস্থাপনা ভালো হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের যাত্রীরা স্বস্তিতেই ঘরে ফিরতে পারবেন।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, মহাসড়কের ৬৫ শতাংশের বেশি মহাসড়ক ভালো অবস্থায় আছে। মহাসড়কের ভাঙ্গাচোরা ও খানাখন্দ ঈদযাত্রা শুরুর আগেই মেরামত হয়ে গেলে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হবে না।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের মহাসড়ক ব্যবস্থাপনা বিভাগের (এইচডিএম) সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় সড়ক ও মহাসড়কের উন্নতি হয়েছে, অবস্থা ভালো আছে। দেশের ৩৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ মহাসড়কের অবস্থা ভালো না। আবার এর সঙ্গে জেলা সড়ক যুক্ত করলে মোট ভাঙাচোরা সড়কের পরিমাণ ৩৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ হয়। যেসব মহাসড়ক চারলেনে উন্নয়নের কাজ চলমান রয়েছে সেইসব মহাসড়কের কোনো কোনো স্থানের অবস্থা ভালো না। অন্যসব এলাকার মহাসড়কের অবস্থা ভালো। গত বছর ঈদুল ফিতরের সময় ৪৩ শতাংশ সড়ক-মহাসড়ক ভাঙাচোরা ছিল। বেহাল মহাসড়কের পরিমাণ ছিল ৩২ শতাংশ। কিন্তু এবারে বেশিরভাগ সড়ক মহাসড়ক ভালো অবস্থায় রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার হচ্ছে সিরাজগঞ্জ। আর মাত্র ১০ দিন পরেই ব্যস্ততম এই মহাসড়কে আসন্ন ঈদযাত্রা শুরু হবে। তবে সিরাজগঞ্জ-রংপুর মহাসড়ক চারলেনের উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় উত্তরের ১৬ জেলা এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আরো ৬ জেলার যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে। এই মহাসড়কের সেতুর পশ্চিমে কড্ডার

মোড়, মুলিবাড়ি, নলকা মোড় ও নলকা সেতু এলাকা, পাঁচলিয়া, হাটিকুমরুল গোলচত্বর, হাটিকুমরুল বাজার, দাদপুর বাজার, ঘুড়কা বাজার, ভুইয়াগাতী বাজার ও চান্দাইকোনা বাজারসহ ১৪ থেকে ১৬টি স্থানের সড়কের অবস্থা ভালো না। উন্নয়ন কাজ চলার কারণে ঈদযাত্রা উপলক্ষে এই স্থানগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই সড়ক ঈদযাত্রায় যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়াবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কড্ডা এলাকায় ফ্লাইওভার, নলকা ব্রিজ ও মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। এজন্য দুই পাশে মাটি ভরাটের কাজ চলছে। ফলে যানবাহন ধীর গতিতে চলতে হয়। নলকা সেতুর ঢাকামুখী লেন বন্ধ থাকায় পুরাতন সেতু হয়ে যানবাহন চলাচল করছে। ঈদযাত্রা শুরুর আগে এই লেন খুলে না দেয়া হলে এখানেও যানজট সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের বিভিন্ন জোনের কর্মকর্তারা বলছেন, ঈদযাত্রা শুরুর আগেই সব মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ অংশের সংস্কার কাজ শেষ হবে। সাসেক-২ প্রকল্পের আওতায় সিরাজগঞ্জ-রংপুর মহাসড়কের চারলেনের কাজ চলছে। প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. মাহবুবুর রহমান রাসেল জানিয়েছেন, ঈদযাত্রা শুরুর আগেই মহাসড়কে নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য সড়কের সংস্কার কাজ একেবারেই শেষ পর্যায়ে রয়েছে। নলকা সেতুও খুলে দেয়া হবে। এদিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পটি এবারো ঈদযাত্রায় গলার কাঁটা হবে। এখন স্বাভাবিক অবস্থায় এই ব্যস্ততম সড়কে যাত্রী ও যানবাহনকে দেড় ঘন্টা থেকে আড়াই ঘণ্টা পর্যন্ত আটকে থাকতে হয়। ঈদযাত্রা শুরু হলে এই সড়কে দীর্ঘ যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। সেক্ষেত্রে বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও আশপাশের জেলাগুলোর মানুষকে ঘরে ফিরতে বিকল্প উপায় খুঁজে বের করতে হবে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলরত যাত্রীরা উত্তরের যাত্রীদের তুলনায় অনেকটাই স্বস্তিতে যাবেন। তবে সড়ক ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে নেয়া না হলে এই সড়কের কোথাও কোথাও যানজটের ও যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হতে পারে। এই মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি অংশের বারপাড়া এলাকায় চার লেনের সংস্কারকাজ চলছে। এতে মহাসড়কের প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকায় প্রায়ই যানজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়া মদনপুর এলাকায় ইউটার্নের কারণেও দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। দ্রুত সংস্কার কাজ শেষ না হলে এবং ইউ টার্নের সঠিক ব্যবস্থাপনা না হলে ঈদযাত্রার শুরুতেই এই সড়কে যানজটের সৃষ্টি হতে পারে।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুর থেকে নরসিংদীর ভুলতা-গাউছিয়া পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার অংশেও প্রতিদিন যানজট হচ্ছে। মহাসড়ক দখল করে যানবাহনের স্ট্যান্ড ও অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে সড়ক আগের চেয়ে বড় হওয়ার পরও যানজট হচ্ছে। তারাব চৌরাস্তায় মহাসড়কের ওপর গড়ে তোলা লেগুনাস্ট্যান্ডের কারনেও ঈদযাত্রায় যানজটের আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহযোগী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ বলেন, ঈদযাত্রায় স্বস্তি ফেরাতে হলে সড়ক-মহাসড়কে অবাধে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এই নিশ্চিত করার দায়িত্ব পুলিশ ও সওজের। সড়কের ভাঙ্গাচোরা ও খানাখন্দে ভরা অংশ দ্রুততম সময়ের মধ্যে মেরামত করতে হবে। কোথায় কোথায় যানজটের সৃষ্টি হতে পারে, এবং কেন যানজট হয় তার কারণ খুঁজে বের করে পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। আনফিট ও ধীরগতির যানবাহন সড়কে চলতে দেয়া যাবে না।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এবারের ঈদে ঢাকা থেকে এক কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করবে। এছাড়া এক জেলা থেকে অপর জেলায় আরো প্রায় ৫ কোটি মানুষ যাতায়াত করবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্য ও পরিবহন নেতাদের চাঁদাবাজি এবং বিভিন্ন টোলপ্লাজায় ধীরগতির কারণে জাতীয় মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট হয়। এসব এলাকা যানজট মুক্ত রাখতে না পারলে ঘরমুখো যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App