×

জাতীয়

বাস্তবায়ন না হওয়ায় পাহাড় ‘৯৭-এ ফিরছে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৩, ০৫:৪৫ পিএম

বাস্তবায়ন না হওয়ায় পাহাড় ‘৯৭-এ ফিরছে

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে মতবিনিময় সভার আয়োজন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন। ছবি: ভোরের কাগজ

খারাপ উদ্দেশ্যে পাহাড়ে সেটেলারদের নিয়ে যাওয়া হয়। ফলে সংঘাত বেড়েছে। তাই পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি করা হয়। কিন্তু মৌলিক বিষয়গুলো এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে প্রতিদিন পাহাড়ে রক্ত ঝরছে। ক্রমাগত ‘৯৭ পূর্ববর্তী সময়ে ফিরে যাচ্ছে। পাহাড়ে সিভিল প্রশাসন কাজ করতে পারে না। কাজ করে সামরিক প্রশাসন। এটা শুধু অন্যায় না, এটা অসাংবিধানিক এবং অঘোষিত। তাই গণতন্ত্রের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন খুবই জরুরি।

‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে দেশবাসীর দায় ও করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন আজ শনিবার (৮ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: নিজামুল হক নাসিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান, ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডা. মুশতাক হোসেন প্রমুখ। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন এর যুগ্ম সমন্বয়কারী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. খায়রুল ইসলাম চৌধুরী।

পার্বত্য চুক্তি নিয়ে পাহাড়ের মানুষ ঐক্যবদ্ধ বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম বলেন, এই চুক্তি পাহাড়িদের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ থাকলেও মৌলিক কোনো বিভেদ নাই। পাহাড়ের সকল মানুষ চুক্তি বাস্তবায়ন চায়।

অসদুদ্দেশ্যে পাহাড়ে সেটেলারদের নিয়ে যাওয়া হলে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, পাহাড়ে যে বাঙালি সেটলারকে নেয়া হয়েছে, তাদের পাহাড়ীদের জায়গায় ভাগ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু যাদেরকে নেয়া হয়েছে তার পেছনে উদ্দেশ্যই ছিল খারাপ। উদ্দেশ্য ছিল পাহাড়ীদের চেয়ে বাঙালিদের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়া। আনোয়ারুল হককে (পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের চেয়ারম্যান) জিজ্ঞেস করেছিলাম কমিশনের খবর কী? তিনি বলেছিলেন, পাহাড়ে তো যেতেই পারি না। গেলেই হরতাল ডাকে, অবরোধ দেয়। তাকে মিটিংগুলো ঢাকায় করার পরামর্শ দিয়েছিলাম। আমি জানিনা, তারা করতে পারবে কিনা।

অধ্যাপক ড. এমএম আকাশ বলেন, তৎকালীন সরকার পাহাড়ে বাঙালিদের মেজোরিটি বানিয়ে পাহাড়ীদের সঙ্গে সংঘাত বাধিয়ে দেয়। এই সংঘাত থেকে মুক্তির জন্য যে চুক্তি হয়েছিলো তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। চুক্তির ২৫ বছর পরেও পাহাড়ে সংঘাত আরো বেড়েছে। পাহাড়ি-পাহাড়ির মধ্যেও সংঘাত বেড়েছে, পাহাড়ি- বাঙালিদের মধ্যে বিরোধ বেড়েছে। এখন আবার দ্বন্ধ বেড়েছে। এই দ্বন্ধ নিরসনে ছয়টি সুপারিশ করবো।

তিনি এই দ্বন্দ্ব নিরসনে পাঁচটি সুপারিশ করেন- গণতান্ত্রিক সুষ্ঠু নির্বাচন করে প্রকৃত প্রতিনিধি নির্বাচন করা, পাহাড়ী এলাকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও শিল্পের সুষম বিকাশ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা, ধর্ম-সংস্কৃতি-ভাষার বিকাশ সাধন এবং ভূমি মালিকানা ও ব্যবহারে নীতিমালা প্রণয়ন করা, ভারত প্রত্যাগত শারণার্থী ও শান্তিবাহিনীর সদস্যদের পুর্ণবাসনে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া।

পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাটা শুধু পাহাড়ের সমস্যা নয় বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল। তিনি বলেন, পাহাড় ক্রমাগত ‘৯৭ পূর্ববর্তী ধারায় ফিরে যাচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকলে দেশের ভয়াবহতা তৈরি হবে। এখন পার্বত্য সমস্য একটা জাতীয় সমস্যা। এই সমস্যার নিষ্পত্তি রাজনৈতিকভাবে করতে হবে।

পাহাড়ে যত বেশি আর্মি ক্যাম্প ও ক্যান্টনমেন্ট কমবে তত বেশি শান্তি ফিরবে বলে দাবি করে এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, পাহাড়ে সিভিল প্রশাসন কাজ করতে পারে না। কাজ করে সামরিক প্রশাসন। এটা শুধু অন্যায় না, এটা অসাংবিধানিক এবং অঘোষিত। যদি কোনো জরুরি অবস্থা তৈরি হয় তখন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সরকার সামরিক আইন ঘোষণা করতে পারে। কিন্তু পাহাড়ে তো অঘোষিতভাবেই এটা চলছে। দেশের গণতন্ত্রের জন্য বড় হুমকি। তাই চুক্তি বাস্তবায়ন গুরুত্বপূর্ণ।

কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, গতকাল পাহাড়ে সাতজন মানুষ খুন হয়েছে। বলা হচ্ছে কুকী-চিন নামের একটি ‘জঙ্গি গোষ্ঠী’র সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে। কিন্তু এই সংঘাতের পেছনে সরকারের কোনো গোষ্ঠী জড়িত তা যদি আমরা বুঝতে না পারি তাহলে চুক্তি বাস্তবায়নের সীমাবদ্ধতাগুলো চিহ্নিত হবে না। পাহাড়ে কত বুদ্ধিজীবি, পেশাজীবী, রাজনৈতিক নেতা জমি কিনে ভূমি দখল করছে তারও তালিকা করা জরুরি। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে বলেও মনে করেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App