×

জাতীয়

সংবিধানে দীর্ঘদিনে জমা জঞ্জাল সরানো দরকার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৩, ০২:২৩ পিএম

সংবিধানে দীর্ঘদিনে জমা জঞ্জাল সরানো দরকার

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, সংবিধানে দীর্ঘদিন ধরে যে জঞ্জাল জমে গেছে তা এখনো দুর করা যায়নি, হয় নাই। সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে যে ইসলাম আনা হয়েছে, তাকে এখনো মুক্ত করতে পারেনি। পার্লামেন্ট ক্রমাগত যে সমুন্নত মান তা ক্ষুন্ন হচ্ছে। এক ঘন্টার পার্লামেণ্টের ভাষণের মধ্যে মাত্র তিন মিনিট সাধারণ জনগণের কথা হয়। আর বেশি সময় ধরে কথা হয় দলীয় নেতাদের গুণকীর্তন। রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে বলেছেন, সংসদে আইনজ্ঞের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। একদিন এমন না হয় আইন পাশ করতে বাইরে থেকে আইনজ্ঞ আনতে হয়।

তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, একদিন তিনি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়বেন, কিন্তু আজকে বাংলাদেশ বৈষম্যপূর্ণ।

শনিবার (৮ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৪৭ বিধিতে উপস্থাপিত প্রস্তাবের উপর আলোচনা অংশ নিয়ে রাশেদ খান মেনন এ মন্তব্য করেন। এ সময় ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

মেনন বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় দেখছি আমাদের পার্লামেণ্টের মান ক্ষুন্ন হচ্ছে। এখানে এক ঘন্টার বক্তব্যের মধ্যে ৩ মিনিট মাত্র গ্রামের সাধারণ মানুষের কথা হয়। বাকি কথা হয় দলের নেতার কথা, নিজের কথা। বাইরে সংসদ এগুতে পারছে না। রাষ্ট্রপতি বলেছেন সংসদে এমন অবস্থা হয়েছে এখানে আইনজীবী না থাকার কারণে ভবিষ্যতে আইন প্রণয়ন করতে আইন প্রণেতাদের বাইরে থেকে আনতে হবে। আজকে রাজনীতি ও নির্বাচনের বাণিজ্যায়নের ফলে সংসদের চরিত্র পাল্টে যাচ্ছে, নতুন চেহারা দাঁড়িয়েছে। আজকে ব্যবসায়ীর সংখ্যা সংসদে অনেক বেশি। যার ফলে ব্যবসায়ীর সংখ্যা বাড়লে তাদের স্বার্থে সংসদের পরিস্থিতি পাল্টে যায়। আজকে প্রয়োজন সংসদের সংস্কার করার প্রয়োজন। সংবিধান পর্যালোচনার প্রয়োজন। আজকে আমাদের বাংলাদেশ গড়তে হলে অসাম্পদায়িক চেতনা সম্পন্ন, মান সম্পন্ন, সেই গুনসম্পন্ন সংসদ গড়তে হবে। বঙ্গবন্ধুর বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন, কিন্তু আজকে বৈষম্যের পাহাড় গড়ে উঠেছে বাংলাদেশে, তারই প্রতিচ্ছতি দেখতে পাই এই সংসদেও। সংসদকে আধুনিক করে গড়ে তোলার আহ্বাণ জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, সত্যিকার অর্থে এই সংসদ হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের ফসল। তবে এই পার্লামেন্ট কখনো মসৃণ ছিল না। এই সংসদে অনেক সময় আঘাত এসেছে বাতিলও হয়েছে, সংসদ ঠুটো জগন্নাথ হয়েছে। ১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে মোস্তাক খুনিদের নিয়ে স্বাধীনতা, বিরোধীদের নিয়ে সরকারকে বৈধতা দেবার চেষ্টা করেন। অবৈধ ক্ষমতাধারী জিয়াউর রহমান সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী এনে সংবিধান পাল্টে দেন, সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুন্ন করেন।

সাবেক মন্ত্রী মেনন বলেন, আমরা জানি ওঝার মৃত্যু সাপের কামড়ে হয়, তাই হয়েছিল। তার পরে আরেক সেনা প্রধান ক্ষমতায় এসে বলেন রাষ্ট্র সংবিধানে সেনা বাহিনীর অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। পরে ক্ষমতা পেয়ে তা ভুলে যান।

রাশেদ খান মেনন বলেন, এই সংসদের আরেকটি কালো অধ্যায় জিয়াউর রহমানের আমলে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি হয়। এরপরে বিএনপির ক্ষমতায় এসে জামায়াতকে নিয়ে ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকরণের দিকে জোর দেন। সংবিধানের চার মূলনীতি ক্ষুন্ন হয়। এরপরে ২০০৬ সালে কিভাবে ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচনে পালাবদল হয়েছিল। সেদিন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ হুমকি দিয়েছিলেন, দলগুলো রাজনৈতিক ঐক্যমতে পৌঁছাতে না পারলে পার্লামেন্ট ভেঙে দেবেন, তিনি পদত্যাগ করবেন। এ হুমকির ফলে বিএনপি শেষ পর্যন্ত পার্লামেন্টারি পার্টিতে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রত্যাবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। এটা ছিল পঞ্চম সংশোধনীর সবচেয়ে উজ্জলতম অধ্যায়। তবে সেদিন আমরা কয়েকটি বিলে ঐক্যমতে আসতে পারিনি- যেমন প্রধানমন্ত্রী হাতে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলাম, আরেকটি ছিল ৭০ বিধির প্রস্তাব বাতিল করা যা করতে পারিনি। এবং সংবিধানের চার গণ্ডিতে প্রত্যাবর্তন করতে ব্যর্থ হই। সেদিন এ প্রশ্নগুলোকে এড়িয়ে গিয়ে এর বদলে বিএনপি ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে উৎসাহিত করে ধর্মের নামে রাজনীতি, সহিংসতা চালু করতে থাকে।

তিনি আরো বলেন, বিএনপি আজকে নতুন করে নিরপেক্ষ সরকার ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলছে। অথচ এটা উচ্চ আদালত কর্তৃক বাতিল করা হয়েছে।

রাশেদ খান মেনন বলেন, ইতিমধ্যে সংবিধানে যে জঞ্জাল জমে গেছে তা এখনো দূর করা যায়নি। সংবিধানের ১২ বিধিতে যে ধর্ম নিরপেক্ষতার সংজ্ঞা রয়েছে তা ভঙ্গ করে কিন্তু সেখানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, এ সাংঘর্ষিক বিষয়টি এখনো বহাল রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আদিবাসীদের স্বীকৃতি দিয়েছেন। কিন্তু আদিবাসী হিসেবে নয় নৃগোষ্ঠী হিসেবে । এসব বিষয়ে তাদের মধ্যে অসন্তোষ দূর হয়নি। পঞ্চদশ সংশোধনীতে সংবিধানের চার মূল নীতিমালা ফিরিয়ে আনলেও এই জঞ্জালগুলো দূর না করলে এই আধুনিক বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App