×

জাতীয়

আলোচনায় ঘুরপাক রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:৫৩ এএম

মিয়ানমারের সামরিক সরকার চলতি এপ্রিল মাসেই বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা নেয়ার শুরুর কথা প্রচার করলেও বাংলাদেশ সরকার বলছে, প্রত্যাবাসনের দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের নিজভূমে ফেরাতে খুব চেষ্টা করছে। এজন্য চীন, মিয়ানমার ও আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। কূটনৈতক চ্যানেলে হয়তো আলোচনার ফলাফল জানা যাবে। কিন্তু এখনো পুরো বিষয়টি নিয়ে কিছু জানা যায়নি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন এ তথ্য জানান। ওই ব্রিফিংয়ে ইন্দো-প্যাসিফিকে বাংলাদেশের অবস্থান ও খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত আরাভ খানকে দুবাই থেকে দেশে ফেরানোর বিষয়েও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।

প্রসঙ্গত, গত ১৪ মার্চ চীনা দূতাবাসে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক সংলাপে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছিলেন, মিয়ানমারে শিগগিরই প্রথম ধাপে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু হবে বলে আশা করছে চীন। তিনি কোনো তারিখ উল্লেখ না করলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জুনে শুরু হওয়া বর্ষার আগেই ১ হাজার রোহিঙ্গার একটি দলকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করা হতে পারে। ইয়াও ওয়েন বলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে চীন মধ্যস্থতা করার পরও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়াটা খুবই দুঃখজনক। তবে করোনা মহামারি এবং মিয়ানমারে সামরিক শাসক ক্ষমতায় আসার কারণে প্রক্রিয়াটি দ্রুত এগোয়নি।

চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সাহায্য করতে কখনোই হাল ছাড়ব না।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আগামী ২৪ এপ্রিল আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গা সংক্রান্ত মামলা নিয়ে শুনানি রয়েছে। এদিন মিয়ানমার জবাব দেয়ার কথা। তার আগেই মিয়ানমার রোহিঙ্গা ফেরত নেয়ার ব্যাপারে কথা বলা শুরু করেছে। শুধু কথাই নয়, প্রায় ১ হাজার ৫০০ রোহিঙ্গাকে ফেরত নেয়ার পাইলট প্রকল্পও হাতে নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে বাংলাদেশে এসে ১৬৮টি পরিবারের ৪৮০ জন রোহিঙ্গাকে যাচাই-বাছাইয়ের কাজও করে গেছেন মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা। এ বিষয়টি টেনে এনে মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ফেরাতে নানামুখী আলোচনা চললেও ফিরে যাওয়ার দিনক্ষণ ঠিক হয়নি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ১২ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে ১ হাজার ৫০০ জনকে ফেরত নেয়ার কথা বলা মিয়ানমারের সরকারের দায় ও চাপ এড়ানোর কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। বিশেষত এপ্রিল মাসে আন্তর্জাতিক বিচার ট্রাইব্যুনালের শুনানিতে সুবিধাজনক অবস্থান পেতেই এই তৎপরতা শুরু করেছে মিয়ানমারের সামরিক সরকার। মিয়ানমারের জান্তা সরকারের এই পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর প্রক্রিয়ায় আস্থা নেই বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের। রোহিঙ্গাদের দেখভাল করা জাতিসংঘসহ পশ্চিমা দাতাদেশগুলোর এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোরও। বাংলাদেশ সরকার প্রকাশ্যে এ বিষয়ে কিছু না বললেও টেকসই প্রত্যাবাসন ছাড়া রোহিঙ্গাদের ইচ্ছার বাইরে কোনো ধরনের জোর না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কূটনীতিকরা বলছেন, চীনের মধ্যস্থতায় প্রায় তিন বছর আগে নির্দিষ্ট গ্রাম ধরে পরিবারভিত্তিক রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আলোচনা শুরু হয়। কিন্তু করোনা মহামারি ও মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের জেরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া একেবারেই থেমে গিয়েছিল। দীর্ঘ বিরতির পর এখন মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে তৎপর হতে দেখা যাচ্ছে। এ তৎপরতার আসল উদ্দেশ্য কী বা এই প্রক্রিয়ায় প্রত্যাবাসন শুরু আদৌ সম্ভব কিনা, এসব প্রশ্ন চলে এসেছে। চীন হঠাৎ কেন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টিতে এত জোর দিচ্ছে, সেই প্রশ্নও উঠছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, প্রত্যাবাসন শুরু হলে মিয়ানমারের সামরিক সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ কমবে বলে মনে করছে চীন। পাশাপাশি জান্তা সরকারের কিছুটা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হতে পারে বলে মনে করছে দেশটি। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলায় মিয়ানমারের পাল্টা যুক্তি উপস্থাপনের সময়সীমা আগামী ২৪ এপ্রিল নির্ধারণ করা হয়েছে। মিয়ানমারের জান্তা সরকারের হঠাৎ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে তোড়জোড়ের সঙ্গে এ বিষয়ের কোনো সম্পর্ক রয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নও উঠছে।

সূত্র জানায়, মিয়ানমারের এটা পুরনো কৌশল। বহুদিন ধরেই মিয়ানমারকে চাপ দেয়ার পরও কাজ হয় না, কিন্তু আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতের শুনানির দিনক্ষণ এলেই এ ধরনের লোক দেখানো তৎপরতা মিয়ানমার আগেও দেখিয়েছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতেও এমন হয়েছিল। তখন হঠাৎ করেই বাংলাদেশের সঙ্গে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে খুব আগ্রহ দেখিয়ে চলে এসেছিল মিয়ানমার। সেখানেও এই প্রত্যাবাসন শুরুর কথা নিয়ে আলোচনা করে এবং সেই কথা আদালতে উপস্থাপন করে। এবারও ২৪ এপ্রিল আইসিজে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা নির্যাতনে গাম্বিয়ার করা মামলার শুনানি হবে। আর এর আগে আদালতের মনোভাব নিজেদের পক্ষে রাখতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায় মিয়ানমার। কারণ গত জুলাই মাসে মিয়ানমারের চারটি আপিলই খারিজ করে দিয়ে মামলা চালু করার রায় দিয়েছিলেন আদালত। এবার প্রত্যাবাসন শুরু করে আদালতকে মিয়ানমার দেখাতে চায় তারা খুবই ইতিবাচক। যেন আদালতের মনোভাবও মিয়ানমারের দিকে নরম হয়।

র‌্যাব নিয়ে ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন ভিত্তিহীন বলছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় : বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‌্যাব) নিয়ে জার্মানিভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন এ দাবি করেন। প্রতিবেদনটি ভিত্তিহীন উল্লেখ করে সেহেলী সাবরীন বলেন, র‌্যাবকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয় না। প্রতিবেদনটিতে র‌্যাবের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে অভিযোগ তোলা হয়। উচ্চপদস্থ রাজনীতিবিদরা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করতে এই এলিট বাহিনীকে ব্যবহার করছেন এমন অভিযোগও তোলা হয়- যার সবই ভুয়া।

প্রতিবেদনে বেশির ভাগ তথ্যই পুরনো এবং সেকেলে দাবি করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, নিজস্ব অনুসন্ধানের এ প্রতিবেদনটি অসঙ্গত এবং অভিযোগগুলো অসত্য। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বাংলাদেশের ‘ডেথ স্কোয়াডের’ ভেতরের কথা শীর্ষক একটি ডকুমেন্টরি প্রচার করে ডয়েচ ভেলে। নেত্র নিউজের সঙ্গে যৌথভাবে অনুসন্ধানী তথ্যচিত্রটি প্রকাশ করে তারা। এ ছাড়া সংবাদ মাধ্যমটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র‌্যাবের সংগঠিত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের দিকে নতুন করে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। দুজন হুইসেলব্লোয়ার দাবি করেছেন, উচ্চপদস্থ রাজনীতিবিদরা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনে এই অভিজাত বাহিনীকে ব্যবহার করছেন।

আরাভের ফাইল আমিরাতের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ মিশন : পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানকে দেশে ফেরাতে তার ফাইল সত্যায়িত করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ মিশন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন এ তথ্য জানান। সাংবাদিকরা আরাভের দেশে ফেরানোর অগ্রগতি জানতে চাইলে মুখপাত্র জানান, আরাভ খানকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য যে ফাইল বা কাগজপত্রগুলো রয়েছে, সেগুলো সত্যায়িত করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ মিশন। আরাভ সংশ্লিষ্ট কোনো অগ্রগতি থাকলে পরবর্তী সময়ে গণমাধ্যমকে জানানোর কথা বলেন মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App