×

জাতীয়

মশক নিধন কার্যক্রম শুরু করছে ডিএনসিসি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৪৪ এএম

মশক নিধন কার্যক্রম শুরু করছে ডিএনসিসি

ফাইল ছবি

মশা মারবে ব্যাকটেরিয়া

কীটনাশক, ক্র্যাশ প্রোগ্রাম, চিরুনি অভিযান, ড্রোন, গাপ্পি মাছের দাওয়াই দিয়েও নিয়ন্ত্রণে আসছে না মশা। এবার এডিস ও কিউলেক্স মশার লার্ভা ধ্বংস করতে ব্যাকটেরিয়ার দারস্থ হচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ‘ব্যাসিলাস থুরিনজিয়েনসিস ইসরাইলেন্সিস (বিটিআই) নামের এই ব্যাকটেরিয়া লার্ভিসাইটের মাধ্যমে লার্ভা ধ্বংস করা হয়। ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, বিটিআইয়ের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শেষে শতভাগ কার্যকর ফলাফল পাওয়া গেছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই ৪-৫ টন বিটিআই মজুত করা লক্ষ্যে ই-টেন্ডারে যাচ্ছে ডিএনসিসি। আগামী দুই মাসের মধ্যেই ব্যাকটেরিয়া বিটিআই লার্ভিসাইটের মাধ্যমে মশক নিয়ন্ত্রণে মাঠপর্যায়ে প্রয়োগ শুরু হবে।

বিজ্ঞানীদের মতে, ব্যাসিলাস থুরিনজিয়েনসিস ইসরাইলেন্সিস (বিটিআই) প্রাকৃতিক, সাশ্রয়ী এবং টেকসই। এটি মূলত পেটের বিষক্রিয়াসহ মাইক্রোবায়াল উৎসের একটি নিম্ন-বিষাক্ত কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এই ব্যাকটিরিয়াটি বড় টক্সিন তৈরি করতে পারে, যথা এন্ডোটক্সিন (সহ স্ফটিক) এবং এক্সোটক্সিন, যা পোকার খাওয়া বন্ধ করে দেয়।

জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার ভোরের কাগজকে বলেন, বিটিআই একটি ব্যাকটেরিয়া। এটি সারা বিশ্বে নিয়মিত মশা নিয়ন্ত্রণ এবং এগ্রিকালচারে ব্যবহৃত হয়। এর সবচেয়ে ভালো দিক হলো- গন্ধ নেই। খুবই আধুনিক একটি কার্যকর একটি প্রোডাক্ট। পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর কিছুই নেই। তিনি বলেন, ডিএনসিসিতে অনেকদিন ধরেই লার্ভিসাইট হিসেবে ‘টেমিফস’ ব্যবহৃত হচ্ছে। অনেক দিন ধরে যখন একটি লার্ভিসাইট একটানা ব্যবহৃত হয় এতে মশা সহনশীল হয়ে যায়। তখন এটি পরিবর্তন করে নতুন কিছু প্রয়োগ করা খুবই জরুরি। এ কারণেই আমরা অনেক বিবেচনা করে ব্যাকটেরিয়া (বিটিআইটি) সিলেক্ট করেছি।

ডিএনিসিসির স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বিটিআই লার্ভাকে খুব সহজেই ধ্বংস করে দিতে সক্ষম। জমে থাকা পানি, জলাধার বা ড্রেনে অর্থাৎ মশার লার্ভার জন্মস্থানে লার্ভিসাইটের মাধ্যমে বিটিআই প্রয়োগ করা হয়। এর ফলে লার্ভা ব্যাকটেরিয়াগুলো খেয়ে ফেলে। বিটিআই যখন লার্ভার পরিপাকতন্ত্রে যায়, এর বিষক্রিয়া লার্ভার পরিপাকতন্ত্র ধ্বংস করে ফেলে। লার্ভা পরবর্তীতে আর কিছুই খেতে পারে না। এক পর্যায়ে না খেয়েই লার্ভাগুলো মরে যায়।

ডিএনসিসি জানায়, প্রায় ২ বছর ধরেই ব্যাকটেরিয়া বিটিআই দিয়ে মশার লার্ভার ধ্বংস করার বিষয়ে বিভিন্ন কীটতত্ববিদদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সংস্থাটির স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামি শহর পরিদর্শনে গিয়ে গত ২১ জানুয়ারি ঢাকায় মশা নিধনের পদ্ধতিতে ভুল রয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানান ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। মেয়র বলেছিলেন, আমরা এত দিন ভুল পদ্ধতি ব্যবহার করেছি। তাতে মশা তো ধ্বংস হয়নি, বরং অর্থের অপচয় হয়েছে। তিনি এও বলেছিলেন, ফগিংয়ে অর্থ অপচয় না করে লার্ভিসাইটিংয়ে (মশার লার্ভা নিধনে ওষুধ ছিটানো) মনোযোগী হতে হবে।

পরে মেয়র আতিক মিয়ামির মশক নিধন কার্যক্রম নিয়ে স্বাস্থ্য কর্মকতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। মিয়ামিতে বিটিআই দিয়ে লার্ভা ধ্বংসের চিত্র তুলে ধরে তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের ব্রিফিং করেন এবং অতি দ্রুত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিটিআই মাঠপর্যায়ে লার্ভিসাইটিংয়ের জন্য প্রস্তত করার নির্দেশ দেন। এর পরেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে প্রথমে বিটিআইয়ের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। ২২ ফ্রেব্রুয়ারি ল্যাব পরীক্ষায় এর শতভাগ কার্যকারিতার রিপোর্ট পাওয়া যায়। পরে ১২ থেকে ১৯ মার্চের মধ্যে গুলশান লেক, উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের লেক ও বারিধারায় একটি ড্রেনে লার্ভিসাইটিং করে ৩ দফায় এর কার্যকারিতা ফের পরীক্ষা করা হয়। এসব জায়গায় ট্রায়ালের পরেও শতভাগ সাফল্য পাওয়া যায়।

মশা নির্মূল কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিশেষ ধরনের এ ব্যাকটেরিয়া বিটিআই ব্যবহার করে মশার বংশ বিস্তার সহজেই রোধ করা যাবে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমান। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, বিটিআই পরিবেশের কোনো ধরনের ক্ষতি ছাড়াই মশার লার্ভা ধ্বংস করবে। মশার বায়োলজিক্যাল কন্ট্রোলের জন্য বিভিন্ন দেশে খুবই কার্যকরভাবে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা লার্ভা ধ্বংসে আরেকটি বিষ প্রয়োগ করি- ক্লোরিলিজ ট্যাবলেট, যার নাম ‘নোভালিউরন’। এটিও বেশ কার্যকর। এখন নতুন করে বিটিআইটি ব্যবহার করব, আশা করছি এতে আমার কার্যকরভাবে মশক নিয়ন্ত্রণ করতে পারব।

জানতে চাইলে ডিএনসিসির উপপ্রধান স্বাস্থ্য কর্মকতা লে. কর্নেল মো. গোলাম মোস্তফা সারওয়ার ভোরের কাগজকে বলেন, বিটিআই ট্রায়ালের আগে প্রথমেই আমরা দেখেছি লার্ভা জন্মানোর সম্ভাব্য স্থানগুলোয় লার্ভা আছে কি না। পরে সেখানে বিটিআই প্রয়োগ করলাম। সকাল বেলা প্রয়োগের পর বিকালে দেখেছি সেখানে কোনো লার্ভা নেই। তিনি বলেন, বিটিআই সম্পর্কে আমরা আগে থেকেই জানতাম। সারা পৃথিবীতেই মশক নিয়ন্ত্রণে বিটিআই ব্যবহার করা হয়। বিটিআই বিষ হলেও এটা অন্যান্য প্রাণীর জন্য হুমকি নয়।

মোস্তফা সারওয়ার বলেন, বিটিআই টেন্ডারের জন্য মেয়রের অনুমোদন হয়ে গেছে। সব কার্যক্রম গুছিয়ে আনতে মাস দুয়েক লাগবে। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই আমরা ই-টেন্ডারে যাব, সেখানে অনেক কোম্পানি অংশ নেবে। প্রথমে কী পরিমাণ বিটিআই মজুত করা হচ্ছে- জানতে চাইলে ডিএনসিসির এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ৪-৫ টন নিয়ে শুরু করা হবে। পাশাপাশি লার্ভিসাইটের জন্য আগে যে টেমিফস ব্যবহার করা হতো সেটা বিটিআইয়ের পাশাপাশি ব্যবহার করা হবে। এক জায়গায় টেমিফস দিলে আরেক জায়গায় বিটিআই প্রয়োগ করা হবে। এভাবে আস্তে আস্তে যদি দেখি টেমিফসের চেয়ে বিটিআই বেশি কার্যকর হচ্ছে তখন টেমিফস বন্ধ করে দেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App