×

জাতীয়

গণপরিবহনে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২৩, ০৩:১৩ পিএম

গণপরিবহনে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ

ছবি: প্রতীকী

গণপরিবহনে নারীদের জন্য আলাদা সিট থাকলেও প্রায় দেখা যায় ব্যবহার করছে পুরুষ। এতে প্রতিবাদ করলে তারা রাগারাগি করেন। এমনকি গণপরিবহনে যৌন হয়রানি বা কোনো অশালীন আচরণের প্রতিবাদ করলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নারীর পক্ষে কোনো বাসযাত্রী এগিয়ে আসে না। গণপরিবহনে নারীর প্রতি এই আচরণ উদ্বেগজনক।

ভুক্তভোগীদের তথ্যমতে, বাসে ওঠার সময় নারীর গায়ে হাত দেয় দরজায় দাঁড়ানো চালকের সহকারী। এছাড়া বাসে ওঠার পর বসার সিট না পেলে দাঁড়িয়ে যাওয়ার সময় পাশপাশ থেকে নোংরা কথা শুনতে হয়। এছাড়া রাজধানীর বাসে নারীর আসন রাখা হয়েছে চালকের কাছে ইঞ্জিনের পাশে। যা তুলনামূলক গরম জায়গা। যা গণপরিবহনে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের বর্হিপ্রকাশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইঞ্জিনের পাশের এসব সিটে বসে দীর্ঘদিন যাতায়াত করতে গিয়ে নানা ধরনের মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন নারীরা।

এদিকে, ইউএনডিপি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও সেন্টার ফর ইনফরমেশন-এর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত অনলাইন জরিপে উঠে এসেছে, গণপরিবহনে ৩৬ শতাংশ নারী নিয়মিত যৌন হয়রানির শিকার হন। এছাড়াও গণপরিসরে ৮৭ শতাংশ নারী জীবনে অন্তত একবার যৌন সহিংসতার শিকার হন। আর ৬৬ শতাংশ নারী কয়েকবার এবং ৭ শতাংশ নারী বারবার নানা ধরনের যৌন হয়রানির শিকার হন। সব মিলিয়ে গণপরিবহনে উদ্বেগজনক হেনস্তার শিকার নারী। তবে হয়রানির শিকার ৩৬ শতাংশ নারী প্রতিবাদ করেছেন।

পুরান ঢাকার কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সুমাইয়া মিতু বলেন, গাড়িতে ওঠার পর নারীদের জন্য বরাদ্দ রাখা সিটে প্রায়দিনই বসতে পারি না। উঠে দেখি পুরুষরা বসে আছে। বললেও ওঠে না। পরে বাধ্য হয়ে ইঞ্জিনের পাশে সিটে বসতে হয়। সেখানে অনেক গরমকেও সহ্য করতে হয়।

এছাড়া চাকরিজীবী তরুণী নুরুন্নাহার চৌধুরী কলি বলেন, প্রতিদিন সকালে অফিস টাইমে বাসে করে অফিসে যাই। এই সময়ে গণপরিবহনে ভিড় থাকে বেশি। বসা যাত্রী ছাড়াও সিটের পাশে দাঁড়িয়ে যান অনেকে। সমস্যা হচ্ছে আমি যেদিন সিটে বসে যাই পুরুষ যাত্রীরা অনেক সময় পাশে এসে শরীরে সঙ্গে ঘেঁষে দাঁড়ান। তারপর পুরুষ যাত্রীরা মহিলাদের সিটে বসে যায়। আর বললে মেয়েদের সাথে খারাপ ব‍্যবহার করে।

ডা. খলিলুর রহমান বলেন, সম্ভবত ইঞ্জিনের কাছাকাছি আসনটি বৈধ নয়। এই ধরনের সিট বাস কোম্পানি দ্বারা পরিবর্তন করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ অবৈধ। যাত্রীদের ইঞ্জিনের কাছাকাছি বসার ব্যবস্থা সরিয়ে ফেলতে হবে। ইঞ্জিনের পাশে বসে দীর্ঘদিন যাতায়াত করলে কেবল নারীদেরই সমস্যা হয় না, এক্ষেত্রে পুরুষদেরও অনেক জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাদের ফার্টিলিটি কমে যেতে পারে। এছাড়া ইঞ্জিনের গরমের কারণে নারী-পুরুষ সবারই শ্বাসকষ্ট হতে পারে। তিনি আরো বলেন,  যাদের ত্বকের সমস্যা রয়েছে; বিশেষ করে অ্যালার্জি ও ব্রণ হওয়ার প্রবণতা রয়েছে, তাদের ত্বকে এর কারণে নানাভাবে ফোসকা পড়ে যেতে পারে। অনেকের হিট স্ট্রোকেরও উপক্রম হতে পারে। আবার অনেকের বমি, মাথাব্যথা এমনকি জ্বরও আসতে পারে। কারণ ইঞ্জিনের উচ্চমাত্রার তাপ দেহকে উত্তপ্ত করে তোলে। এরপর বাস থেকে নামলে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। এভাবে শরীর একবার ঠাণ্ডা আবার গরম হয়ে পড়ায় সর্দিসহ জ্বর দেখা দিতে পারে। এদিকে বাসে চলাচলের সময় কোনো হয়রানির শিকার হলে ৯৯৯ ও ১০৯ নম্বরের মাধ্যমে অভিযোগ জানাতে পারবেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ। তিনি বলেন, গণপরিবহনে নারীদের যৌন হয়রানি বন্ধে আমরা সব সময় কাজ করে যাচ্ছি। আশার কথা গণপরিবহনে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব বাসে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে চায় সরকার। এর মধ্যে ১০০ বাসে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App