×

জাতীয়

‘দুই যুগেও হয় না বিচার, এই লজ্জা ও অপমান কার’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৩, ০৬:৫৩ পিএম

‘দুই যুগেও হয় না বিচার, এই লজ্জা ও অপমান কার’

বৃহস্পতিবার বিকেলে উদীচী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। ছবি: ভোরের কাগজ

আগামী ৬ মার্চ যশোর হত্যাকাণ্ডের দ্বিযুগপূর্তি। এ উপলক্ষে তিনদিনব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। ‘দুই যুগেও হয় না বিচার, এই লজ্জা ও অপমান কার’ এই শ্লোগানকে ধারণ করে আগামী ৪, ৫ ও ৬ মার্চ তিনদিনব্যাপী এই কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন হবে যশোরে।

এই কর্মসূচির বিস্তারিত তথ্য জানাতে বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) বিকেলে উদীচী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। এতে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান, সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম, ইকরামুল কবির ইল্টু, জামসেদ আনোয়ার তপন ও সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম।

লিখিত বক্তব্যে অমিত রঞ্জন দে বলেন, ২০০৬ সালের ৩০ মে মামলার রায়ে সকল আসামীদের বেকসুর খালাশ দিয়ে আদালত তিরস্কার করে বলেছিলেন, প্রায় কোনো রকম তদন্ত ছাড়া এই বোমা হামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পুলিশ। বলা বাহুল্য যশোর হত্যাকােেণ্ডর তদন্ত ও বিচারের ব্যাপারে সরকার সীমাহীন অবহেলা দেখিয়েছে। চব্বিশটি বছর পেরিয়ে গেলেও অজ্ঞাত কারণে তদন্ত প্রক্রিয়া থেমে আছে। এ কথা জোর দিয়ে বলা যায় যে, উদীচীর উপর বোমা হামলার সুষ্ঠু বিচার হলে হামলাকারীরা পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক সংঘটিত বোমা হামলার সুযোগ পেত না। যশোর হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান পরবর্তী সময়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলে তার সূত্র ধরে দু’জনকে গ্রেপ্তার করার পরও অজ্ঞাত কারণে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ২০০৮ সালের পর মামলাটির তদন্তের ভার সিআইডির হাতে ন্যস্ত হয়েছিল। কিন্তু আজ অবধি আমরা তদন্তের কোনো অগ্রগতি দেখতে পাইনি।

তিনদিনব্যাপী কর্মসূচি প্রসঙ্গে উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন, যশোর হত্যা মামলার পুনঃতদন্ত ও দ্রুত বিচার সম্পন্ন করে প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জোর দাবি জানায় উদীচী। ‘দুই যুগেও হয়না বিচার! এই লজ্জা ও অপমান কার?’- এই শ্লোগান নিয়ে এবার কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালিত হবে যশোর শহরে।

তিনদিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে আছে:

৪ মার্চ: ‘রং তুলিতে প্রতিবাদ’ শীর্ষক ২৪ জন চিত্রশিল্পীর চিত্রাঙ্কন, গ্রাফিতি অঙ্কন; ৫ মার্চ: সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও শ্রেণি পেশার বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে মতবিনিময় সভা ও ৬ মার্চ: বিকেল তিনটায় যশোর টাউন হল ময়দানে নির্মিত শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন। একই দিন বিকেল সাড়ে চারটা থেকে যশোর টাউন হল ময়দানে প্রতিবাদী সমাবেশ, প্রদীপ প্রজ্জ্বালন, মশাল মিছিল ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা থাকবে। এছাড়া, বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত যশোর হত্যাকাণ্ডের শত ছবির প্রদর্শনীও থাকবে। এদিন, যশোরে আয়োজিত কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় সংসদের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও খুলনা বিভাগ, বরিশাল বিভাগ ও ঢাকা বিভাগের পদ্মাপারের জেলা ও শাখাসমূহের বন্ধুরা অংশগ্রহণ করবেন। এছাড়া, দেশের সব জেলা ও শাখায় যশোর হত্যা দিবস উপলক্ষে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ ও প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

মাহমুদ সেলিম বলেন, সংস্কৃতি মানুষকে জাগিয়ে তোলার অন্যতম হাতিয়ার, এই কথাটি উদীচী যেমন বোঝে তেমনি ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীও বোঝে। সেজন্যই বারবার উদীচীসহ প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক শক্তির ওপর হামলা চালায় তারা। কিন্তু সংস্কৃতির এই শক্তি সম্পর্কে স্বাধীনতার পক্ষের দাবিদার রাজনৈতিক দলগুলো কতটুকু সচেতন?

ইকরামুল কবির ইল্টু বলেন, শুধু গান গাইতে গিয়ে কাউকে বোমার আঘাতে মরতে হবে এটা কেউ স্বাধীন দেশে কল্পনাও করতে পারেনি। বোমা হামলায় নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো ও আহতদের পুনর্বাসনের জন্য উদীচী সাধ্যমতো চেষ্টা করলেও তা যথেষ্ট নয় জানিয়ে তিনি বলেন, রাষ্ট্রের উচিত এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া।

বদিউর রহমান বলেন, ১৯৯৯ থেকে ২০২৩-২৪ বছরেও একটি স্বাধীন দেশে যদি সংস্কৃতি কর্মী হত্যা মামলার বিচার না হয় তাহলে এই স্বাধীনতার কী মানে? একটি ন্যায়বিচার যদি চেয়ে নিতে হয় তাহলে এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কিছু হতে পারে না।

তিনি আরো বলেন, যতদিন এই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হবে ততদিইনই রাজপথে সোচ্চার থাকবে উদীচীর শিল্পী ও কর্মীরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App