×

জাতীয়

মিটার প্রকল্পে শত কোটি টাকা গচ্চা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:৪৪ এএম

মিটার প্রকল্পে শত কোটি টাকা গচ্চা

ছবি: সংগৃহীত

মিটারে চলতে নারাজ সিএনজি অটোরিকশা

সব আইন ভঙ্গ করা এবং যাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণার পরও সিএনজি অটোরিকশা রাজধানী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মিটার থাকলেও মিটারে ভাড়া দেয়া যায় না। অটোরিকশা চালকরাও মিটারে ভাড়া না নিয়ে যাত্রীদের চুক্তিতে যেতে বাধ্য করছে। মিটার অনুযায়ী ভাড়া না নেয়ার যাত্রীরা প্রতিবাদ করলে এবং পুলিশের সহযোগিতা চাইলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয় না।

গত শুক্রবার সকালে ধানমন্ডির শংকর এলাকা থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্ত একটি সিএনজি অটোরিকশায় ভাড়া চাওয়া হয় ২৫০ টাকা। চালক

খালেদের ওই অটোরিকশায় মিটার থাকলেও তিনি মিটারে যাবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। চুক্তিতে ভাড়া কমিয়ে ২৩০ টাকায় যাবেন বলেও জানান। মিটার সচল থাকতেও কেন মিটারে যাবেন না? জানতে চাইলে খালেদ বলেন, মিটারে গেলে পোষাবে না। জমার খরচ অনেক বেশি। কখনো কখনো পুলিশকেও টাকা দিতে হয়। তাই ঢাকার কোনো সিএনজি এখন আর মিটারে চলে না।

আরো কয়েকজন সিএনজি চালকও মিটারে না যাওয়ার কথা সাফ জানিয়ে দেন। তারা বলেন, অনেক সিএনজির মালিক পুলিশের সদস্য। সার্জেন্টরা সিএনজি ধরলে মালিকের নাম পরিচয় বললেই ছেড়ে দেয়। তাই মিটারে না চললেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয় না। পুলিশ সপ্তাহ ও সড়কে অন্য কোনো বিশেষ কারনে পুলিশ সার্জেন্টরা সিএনজি ধরলে তখন কিছু টাকা দিতে হয়। তবে বড় কোনো ব্যবস্থা পুলিশ নেয় না। আমরা চালকরা চাঁদা না দিয়ে সিএনজি চালাতে চাই। কিন্তু মালিকরা জমার টাকা আগের চেয়ে দ্বিগুন হারে নিচ্ছে। তাদের নির্ধারিত জমার টাকা না দিলে পরের দিন থেকেই আর সিএনজি চালাতে দেয় না। ড্রাইভার পরিবর্তন করে ফেলে। আর আয় না থাকলে পরিবার নিয়ে আমাদের পথে বসতে হবে। গ্যাস নিতে সমস্যার শেষ নেই। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরেও গ্যাস পাওয়া যায় না। আবার অনেক সময় পর্যাপ্ত গ্যাস পাওয়া যায় না। তখন জমার টাকা উঠাতে মিটারে চালালে পকেট থেকে লোকসান গুণতে হয় চালকের।

অঘোষিত সিএনজি স্ট্যান্ডে দাঁড়ালে চাঁদা দিতে হয় ১৫ থেকে ২০ টাকা। পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না দিয়ে নোপার্কিং মামলা দিয়ে পুলিশ চালকদের হয়রানি করছে। এ ধরনের একের পর এক অজুহাত দাঁড় করান সিএনজি অটোরিকশা চালকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর সব সিএনজি অটোরিকশায় মিটার বসানো থাকলেও তারা মিটারে চলে না। এই সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি। পুলিশ সপ্তাহসহ বিশেষ অভিযানকালে মামলা থেকে বাঁচতেই শুধু মিটার চালু রাখা হয়েছে। তবে মিটার বসানো নেই, এমন সিনজির অটোরিকশার সংখ্যাও কম না।

সূত্রমতে, এই সংখ্যা ২০ হাজারের কাছাকাছি। এসব সিএনজি অটোরিকশা ঢাকা জেলার নামেই রেজিস্ট্রেশন করা। নিয়মতান্ত্রিকভাবে যাত্রী পরিবহনের জন্য সরকার শত কোটি টাকা খরচ করে সিএনজিতে মিটার বসানোর প্রকল্প নিয়েছিল। এই প্রকল্প এখন জনগনের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিএনজি চালকরা প্রতারণার মাধ্যমে জনগণের পকেট কাটছে।

এ ধরনের নানান অজুহাত দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত তারা চুক্তিতেই রাজধানী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এতে অসহায় যাত্রীরাও ঝামেলা এড়াতে চুক্তিতেই গন্তব্যে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। আইন অনুযায়ী, যাত্রীরা যেখানে যেতে চায় সিএনজি চালক সেখানেই যেতে বাধ্য। কিন্তু চালকরা যেতে চান না। এই বিষয়ে সড়কে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের কাছে অভিযোগ করতেও বলা হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ করার পরও পুলিশ ব্যবস্থা নেয় না। ভাড়া নিয়ে প্রতিনিয়ত যাত্রীদের সঙ্গে চালকদের ঝগড়া এমনকি, হাতাহাতি পর্যন্ত হচ্ছে।

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, সিএনজি অটোরিকশা ভাড়ার নৈরাজ্য ঠেকাতে আমরা মালিক প্রতিনিধিদের নিয়ে সেমিনার করেছি। এতে সিএনজি চালক, চালক সমিতি ও মালিকপক্ষ, যাত্রী পরিবহন সমিতির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। রাজধানীসহ সারাদেশে অটোরিকশাগুলোতে মিটার সাজিয়ে রাখা হলেও কোনোটির মিটারই চালু নেই। কিছু কিছু মিটার চালিয়ে রাখা হলেও মিটারের কোনো ব্যবহার নেই। আমি নিজে দেখেছি, সিএনজি অটোরিকশাগুলো মিটারে চলে না। এদিকে মহাসড়কে সিএনজি চলাচলের জন্য আলাদা লেন দাবি করা হচ্ছে। সিএনজি মালিকরা কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া বাড়ানোর দাবি তুলেছেন। ঢাকার চালকরাও পাশ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায় অটোরিকশা চলাচলের সুযোগও চেয়েছেন।

ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিবশা চালক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মো. গোলাপ হোসেন সিদ্দিকি বলেন, আগের মতো সিএনজি চালকদের আয় নেই। যানজটে পড়ে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ঢাকায় সিএনজি চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এজন্য মহাসড়কে আলাদা লেন করে দেয়া হলে চালকরা উপকৃত হতো। গ্যাস নিতে বিড়ম্বনার শেষ নেই। বাধ্য হয়েই কোনো কোনো সিএনজি চালক চুক্তিতে চলাচলে বাধ্য হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App