×

জাতীয়

চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নের পথে ফি বাড়ানোর কাঁটা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:৩৭ এএম

চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নের পথে ফি বাড়ানোর কাঁটা

ফাইল ছবি

বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ফি বৃদ্ধি

চিকিৎসা শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণও জরুরি

সেন্ট্রাল ওমেন্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ ৫ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন তানিয়া রহমান। মাধ্যমিকেও জিপিএ ৫ রয়েছে তার। মা চাইতেন তানিয়া বড় হয়ে চিকিৎসক হবে। মায়ের মৃত্যুর পর সেই ইচ্ছাটাকেই বাস্তবে রূপ দিতে চান তানিয়া। তানিয়া বলেন, ৪ ভাই বোনের মধ্যে আমি দ্বিতীয়। বাবা ছোটখাটো ব্যবসা করেন। আমি যখন ক্লাস সিক্সে তখন আমার মা মারা যান। মার ইচ্ছা ছিল আমি বড় হয়ে ডাক্তার হব। মানুষের সেবা করব। আমি আমার মার ইচ্ছা পূরণ করতে চাই। সেই স্বপ্ন পূরণে বাবাও আমাকে যথেষ্ট সাপোর্ট দিয়ে আসছেন। আমি জীবনে কখনো টিউশনি বা কোচিংয়ে যাইনি। কারণ বাবার সামর্থ্য খুব বেশি ছিল না। তবে আমার স্বপ্ন পূরণে বাবা আমাকে মেডিকেলে ভর্তি কোচিংয়েও দিয়েছেন। আমি চেষ্টা করছি। জানি না কতটা পারব। বাবা বলেছিলেন, সরকারিতে চান্স পেলে ভালো। তা না হলে কষ্ট করে হলেও প্রাইভেট মেডিকেলে পড়াবেন। তবে খবরে দেখেছি প্রাইভেট মেডিকেলে ভর্তির ফি বেড়েছে। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হিসেবে আমার মনে হয়, প্রাইভেট মেডিকেলে পড়া আমাদের জন্য নয়। অনেক দিনের স্বপ্ন দেখাটা এখন বন্ধ করতে হবে। আমার ছোট দুই ভাই রয়েছে। পরিবারটাও বাবার আয়ে চলে। আমার একার জন্য এতগুলো টাকা বাবার পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব নয়। তানিয়ার মতো নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের কাছে প্রাইভেট মেডিকেলে ভর্তি এখন দূর আকাশের তারার মতো।

দেশে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন রয়েছে ৪ হাজার ৩৫০টি। আর ৭২টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে আসন সংখ্যা ৬ হাজার ৪৮৯টি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া এই তথ্য অনুযায়ী, এমবিবিএস ও বিডিএস শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশই বেসরকারি মেডিকেলে কলেজে পড়ছে। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেধাবী সন্তান সরকারি মেডিকেলে ভর্তি সুযোগ না পেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হচ্ছে। এই খরচ জোগাতে অভিভাবকের কষ্ট হলেও সন্তানের ভবিষ্যৎ ভেবে তারা সেই ব্যয় মেটাচ্ছেন। তবে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে যারা ভর্তি হবেন তাদের গুণতে হবে বাড়তি ব্যয়। এই শিক্ষাবর্ষ থেকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজের এমবিবিএস ও বিডিএসে ভর্তি ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

১৬ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের চিকিৎসা শিক্ষা-২ শাখার উপসচিব মাহবুবা বিলকিস স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তির ফি ২০ শতাংশ বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার টাকা করা হয়েছে। একইসঙ্গে, এমবিবিএস এবং বিডিএস শিক্ষার্থীদের জন্য মাসিক টিউশন ফি ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছে মেডিকেল শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ। গত ৯ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ও বিডিএসে ভর্তি ফি বাড়ানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তা নির্ধারণ করা হয়। এর আগে ২০১৮ সালের ১৫ মার্চে জারিকৃত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এত দিন এ ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। তবে ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার এবং টিউশন ফি ১০ হাজার টাকা করে ৪ বছরে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা আগের শিক্ষাবর্ষের মতো বহাল রাখা হয়েছে। ‘বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ আইন-২০২২’ এর ২২ ধারা অনুসারে বেসরকারি

মেডিকেল কলেজ প্রাপ্ত প্রস্তাবের ভিত্তিতে বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) টিউশন ফি অনুমোদিত হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তে বেসরকারি মেডিকেলে শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা কমবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ঢাকা মেডিকেলে কলেজের সাবেক এবং পপুলার মেডিকেলে কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ ভোরের কাগজকে বলেন, এখনই এই মন্তব্য করা যাবে না। এবার শিক্ষার্থীদের ভর্তির হার দেখে তা বোঝা যাবে। দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য শুধু সরকারি নয় বেসরাকরি মেডিকেল কলেজগুলোতেও কোটা আছে। বৃত্তির ব্যবস্থাও আছে। যারা দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থী তাদের বিষয়টি প্রতিষ্ঠান অবশ্যই বিবেচনা করবে।

হঠাৎ ফি বাড়ায় শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে মনে করেন না শিক্ষা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. টিটো মিয়া। তার মতে, ভর্তি ফি সহনশীল পর্যায়েই রাখা হয়েছে। তবে এ সেশনের শিক্ষার্থী ভর্তি শেষ হলে প্রভাব কেমন পড়বে তা বোঝা যাবে বলেও মনে করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক এই অধ্যক্ষ।

বর্ধিত এই ফি প্রসঙ্গে কেউ কেউ বলছেন, শিক্ষার মানোন্নয়ন নয়, ব্যবসায়িক স্বার্থে মেডিকেলে ভর্তি ফি বাড়ানো হয়েছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ৫ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হয়েছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও শিক্ষার মানোন্নয়নে মেডিকেলে ভর্তি ফি বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়। স্বাস্থ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিবেশী দেশের বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তি ফি দেখে এ ফি সমন্বয় করা হয়েছে।

চিকিৎসাবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হেলথ সায়েন্সেসের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী ভোরের কাগজকে বলেন, সবার আগে চিকিৎসা শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। মেডিকেলে ভর্তি ফি বাড়ানোর সঙ্গে শিক্ষাদানের গুণগতমান বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে হবে।

বাংলাদেশ বেসরকারি মেডিকেল এসোসিয়েশনের সভাপতি মুবিন খানের দাবি, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম মূল্যে মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। আর এ কারণেই বিদেশ থেকে শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে মেডিকেলে পড়তে আসে। নেপালে বেসরকারি মেডিকেলে পড়ার জন্য গুণতে হয় ৫০ লাখ, ভুটানে ৫৫ লাখ, মালয়েশিয়ায় ৮০ লাখ টাকা। আর ভারতে এ ফি দেড় কোটি টাকা। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার অনলাইনে আবেদন শুরু হয়েছে ১৩ ফেব্রুয়ারি। প্রবেশপত্র বিতরণ শুরু হবে ৬ মার্চ থেকে, চলবে ৭ মার্চ পর্যন্ত। আগামী ১০ মার্চ সকাল ১০টায় ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App