×

জাতীয়

৪ বছরেও শেষ হয়নি চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডি মামলার বিচার কাজ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:১১ এএম

৪ বছরেও শেষ হয়নি চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডি মামলার বিচার কাজ

ফাইল ছবি

‘সব আগের মতো চলছে। আগুন লাগা ভবন সংস্কার করে ব্যবহার হচ্ছে। আসামিরা জামিন পেয়ে দেদারসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আগের মতোই ব্যবসা চলছে। মাঝখান থেকে আমার বাবার মতো ৭১টি প্রাণ চলে গেল। অথচ চার বছরেও মামলার বিচারকাজ শেষ হলো না।’ চুড়িহাট্টা ট্র্যাজিডিতে আগুনে দগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণকারী মো. জুম্মনের ছেলে মো. আসিফ গতকাল রবিবার আক্ষেপের সুরেই ভোরের কাগজকে এসব কথা বলেন।

২০১৯ সালের এই দিনে (২০ ফেব্রুয়ারি) চকবাজারের চুড়িহাট্টার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জন নিহত হন। এছাড়া আহত হন আরো অনেকই। এ ঘটনায় চকবাজার থানায় মামলা দায়ের করেন মো. আসিফ। এরপর ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি বিচার। সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে মামলাটি।

এ বিষয়ে বাদী আসিফ বলেন, আমরা সুষ্ঠু বিচার চাই। ৪ বছরেও মামলার রায় হলো না। বছরের এই একটি দিনে সবাই খোঁজ নেয়। বাকি ৩৬৩ দিন আমাদের কেউ খোঁজ রাখে না। সরকারিভাবে আমরা কিছুই পাইনি। নিহত ৭১ জনের পরিবারের মধ্যে থেকে ২৬ জনকে সর্বনি¤œ পদ ক্লিনারের চাকরি দিয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে আমার ভাইকে চাকরি দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু কিছুই হয়নি। আশ্বাস পেলেও ৪ বছরে কোনো ক্ষতিপূরণ পেলাম না আমরা।

এদিকে আসিফের মামলাটি তদন্ত করে ২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ৮ জনকে আসামি করে চার্জশিট জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার মডেল থানার ওসি আবদুল কাইউম। আসামিরা হলেন- ভবনের মালিক দুই সহোদর হাসান ওরফে হাসান সুলতান, সোহেল ওরফে শহীদ ওরফে হোসেন, রাসায়নিক গুদামের মালিক ইমতিয়াজ আহমেদ, পরিচালক মোজাম্মেল হক, ম্যানেজার মোজাফফর উদ্দিন, মোহাম্মদ জাওয়াদ আতির, মো. নাবিল ও মোহাম্মদ কাশিফ। বর্তমানে সবাই জামিনে আছেন। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি এই ৮ আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার ৮ম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দা হাফসা ঝুমা। আগামী ১৪ মার্চ বাদী আসিফের সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য রয়েছে।

মামলার প্রধান দুই আসামি ভবনের মালিক হাসান ও হোসেনের আইনজীবী মোস্তফা পাঠান ফারুক ভোরের কাগজকে বলেন, আসামিদের ভবন থেকে আগুন লাগেনি। বাইরের সিলিন্ডার দুর্ঘটনায় আগুন লাগে। আসামিরা বাড়ি হারিয়েছেন, সম্পদ হারিয়েছেন। ওই দুর্ঘটনায় তাদের মা গুরুতর জখম হন। পরে মারা যান। আদালতকে বলেছি তারাও ক্ষতিগ্রস্ত। এছাড়া রাজউক থেকে ব্যবসার অনুমতি ছিল। সিটি করপোরেশন থেকে ব্যবসার লাইসেন্স ছিল। তাই আসামিদের ব্যবসা ছিল বৈধ। আবাসিক এলাকায় ব্যবসা যদি ঠিক না হয়, তাহলে রাজউক-সিটি করপোরেশন দায়ী। আসামিদের অব্যাহতির জন্য আমরা উচ্চ আদালতে যাব।

এছাড়া আসামি ইমতিয়াজ আহমেদ ও জাওয়াদ আতিরের আইনজীবী এস কে আবু সাঈদ বলেন, এই দুই আসামির প্রতি অবিচার করা হয়েছে। আগুন লেগে তারাও কোটি টাকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের গোডাউন ছিল অন্য ভবনে। সেখানে পারফিউমের বিজনেস করত। অথচ আগুন লাগে কেমিক্যালের গুদাম থেকে। সেই ভবনের ব্যবসায়ীদের আসামি করা হয়নি। রাজউকও এর দায় এড়াতে পারে না। আবাসিক এলাকায় কেমিক্যালের গুদাম হয় কীভাবে? কিন্তু রাজউকের কাউকে আসামি করা হয়নি। আদালতও একই কথা বলেছেন।

এদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সংশ্লিষ্ট আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মাজহারুল হক বলেন, মামলাটির চার্জগঠন হয়ে গেছে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাক্ষী নিয়ে এসে দ্রুত সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করার চেষ্টা করব। আশা করছি, দ্রুত এ মামলার বিচার কাজ শেষ হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জন মারা যান। এতে কেউ বাবা, কেউ ভাই, কেউ মা হারান। একই পরিবার থেকেও অনেকে মারা যান। দগ্ধ হয়ে পঙ্গুত্ব বরণও করেন অনেকে। এই ঘটনায় চকবাজার থানায় দায়ের করা মামলায় বাদী আসিফ অভিযোগ করেন, আসামিরা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য তাদের ৪র্থ তলা বসতবাড়ির বিভিন্ন ফ্লোরে দাহ্যপদার্থ ক্রয়-বিক্রয়কারীদের ভাড়া দেন। মানুষের জীবন এবং জানমাল ধ্বংস হতে পারে জেনেও আসামিরা কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের গোডাউন করার অনুমতি দিয়েছিলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App