×

জাতীয়

সংসদকে না জানিয়ে ১০ মাস বিদেশে খন্দকার মোশাররফ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:৫৭ এএম

সংসদকে না জানিয়ে ১০ মাস বিদেশে খন্দকার মোশাররফ

খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ফাইল ছবি

চার অধিবেশনে ৫৭ কার্যদিবস অনুপস্থিত স্থায়ী কমিটি থেকে বাদ

কোথাও নেই এক সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের দাপুটে মন্ত্রী ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সংসদেও নেই। স্থানীয় রাজনীতিতে নেই। নেই দেশের রাজনীতিতেও। এমনকি দেশেও নেই তিনি। একাদশ জাতীয় সংসদের ১৮ থেকে ২১তম অধিবেশন পর্যন্ত একনাগাড়ে ৫৭ সংসদীয় কার্যদিবস তিনি অনুপস্থিত। সংবিধান ও কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী একজন সংসদ সদস্য টানা ৯০ কার্যদিবস সংসদ অধিবেশনে অনুপস্থিত থাকলে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হওয়ার বিধান রয়েছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সভাপতি থাকায় তার অনুপস্থিতির কারণে গত ১১ মাস কোনো বৈঠক হয়নি। সংসদীয় কমিটিকে সচল করতে গত মাসে খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে বাদ দিয়ে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদকে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

সূত্রমতে, ৯০ কার্যদিবস অনুপস্থিতি হলেই এমপি পদও হারাবেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। অবশ্য রাজনীতি থেকেই বিদায় নেয়ার কথা ভাবছেন খন্দকার মোশাররফ। তার ঘনিষ্ঠজনরা বলেছেন, তিনি দেশেও আর না ফিরতে পারেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এরপর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে সরানো হয় তাকে। ২০২২ সালের ৬ এপ্রিল থেকে সংসদে অনুপস্থিত আছেন তিনি। সেই হিসাবে গত ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তার টানা অনুপস্থিতি দিনের সংখ্যা ৫৭ কার্যদিবস।

তার পারিবারিক সূত্র জানায়, বর্তমানে তিনি অবস্থান করছেন সুইজারল্যান্ডের জেনেভায়। ২০২২ সালের এপ্রিলে তিনি জেনেভায় তার কন্যার কাছে চলে যান। তার ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, আপাতত তিনি দেশে ফিরছেন না। আগামীতে আর নির্বাচন বা রাজনীতিও করবেন না। তিনি কিডনি, হার্টসহ নানা ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ায় বিদেশে বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সভাপতি হিসেবে ২০২২ সালে মাত্র দুটি বৈঠক করেন তিনি। সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিল ২২ সালের ১৩ মার্চ। জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিতে প্রতি মাসে অন্তত একটি বৈঠক করার কথা বলা আছে। সেখানে সভাপতি দেশে না থাকায় গত ১১ মাস কোনো বৈঠক হয়নি।

সংবিধানের ৬৭ ধারা অনুযায়ী, কোনো সংসদ সদস্য স্পিকারের অনুমতি ছাড়া একাধিক্রমে নব্বই কার্যদিবস সংসদ অধিবেশনে অনুপস্থিত থাকলে তার সদস্যপদ বাতিল হবে। বর্তমানে তার টানা অনুপস্থিতি ৫৭ কার্যদিবস। যা, বর্তমান সংসদে টানা অনুপস্থিতির নতুন রেকর্ড।

সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাধারণত কোনো এমপি দেশের বাইরে গেলে স্পিকারকে নোটিসের মাধ্যমে অবহিত করে যান। খন্দকার মোশাররফ হোসেন বিদেশে যাওয়ার আগে কোনো নোটিস করে যাননি। তিনি কোথায় যাচ্ছেন, কতদিনের জন্য যাচ্ছেন সে বিষয়ে স্পিকারকে কিছু বলেননি।

এ প্রসঙ্গে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, সংসদ অধিবেশন চলাকালে যদি কোনো এমপি দেশের বাইরে যেতে চান তাহলে স্পিকারকে অবহিত করার বিধান রয়েছে। কিন্তু খন্দকার মোশাররফ হোসেন যখন দেশের বাইরে যান তখন সংসদ অধিবেশন চলছিল না। এক্ষেত্রে অবহিত করা বাধ্যতামূলক ছিল না। তবে অনেক এমপি অধিবেশনের বাইরে বিদেশে গেলে স্পিকারকে অবহিত করে যান। সংসদ সদস্য পদ বাতিল প্রসঙ্গে স্পিকার বলেন, টানা ৯০ কার্যদিবস অনুপস্থিত থাকলে তখন বিষয়টি বিধি অনুসারে বিবেচনা করা হবে। তবে তার এখনো বেশ কয়েক দিন বাকি আছে ৯০ কার্যদিবস হতে। দেখা যাক, তিনি পরবর্তী অধিবেশনে যোগ দেন কিনা বা কোনো চিঠি স্পিকার বরাবর দিয়ে অনুপস্থিতির কারণ জানান কিনা?

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ফরিদপুর-৩ আসন থেকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ২০০৯ সালে তাকে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। পরে খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়।

তবে এ সময় তার অনুগতরা বিভিন্ন সরকারি সংস্থার উন্নয়ন কাজের দরপত্র নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি ও জমি দখল করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের আলোচনা সমালোচনার মধ্যেই ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তিনি মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েন। গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২২তম সম্মেলন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের পদ হারানোর পর গত ১৫ জানুয়ারি সংসদীয় কমিটির সভাপতির পদ থেকেও বাদ পড়েন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদ থেকে তাকে সরিয়ে নুরুল ইসলাম নাহিদকে সভাপতি করা হয়েছে। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তার ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, (স্যার) খন্দকার মোশাররফ হোসেন আর দেশে ফিরবেন বলে মনে হয় না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App