×

জাতীয়

বইয়ে সংশোধনী: থাকছে না বিবর্তনবাদ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:২২ এএম

বইয়ে সংশোধনী: থাকছে না বিবর্তনবাদ

ফাইল ছবি

প্রাচীন সভ্যতা যাচ্ছে ভিন্ন ক্লাসে

ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির দুটি বই প্রত্যাহারই নয়, আরো দু-তিনটি বই সংশোধনের কথা ভাবছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এটি নির্ভর করছে বিশেষজ্ঞদের মতামতের ওপর। সংশোধনী বেশি হলে পুরো বই পরিবর্তন হতে পারে বলে জানিয়েছেন এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম।

দুটি বই প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গত শুক্রবারই সব উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে সম্প্রতি ফরহাদুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, তারা এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ‘ওয়াকিবহাল’ আছেন। দুটি বই প্রত্যাহার হয়েছে। আরো দু-তিনটি বই সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে। সেগুলোর ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা মতামত দেবেন। সংশোধন প্রক্রিয়ায় কত সময় লাগতে পারে? এই প্রশ্নের জবাবে ফরহাদুল ইসলাম বলেন, এটি বিশেষজ্ঞদের মতামতের ওপর নির্ভর করছে। তারা ইতোমধ্যে তিনটি ‘সভা’ করেছেন। কমিটির মতামত হাতে পেলে যত দ্রুত সম্ভব স্কুল পর্যায়ে সংশোধনী পাঠিয়ে দেয়া হবে।

বই আকারে এই সংশোধনী দেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি নির্ভর করছে সংশোধনীর মাত্রার ওপর। যদি ২০/২৫ পৃষ্ঠার সংশোধনী আসে সেক্ষেত্রে তা স্কুলে স্কুলে পাঠিয়ে দেয়া হবে। এর চেয়ে বেশি সংশোধনীর সুপারিশ এলে পুরো বই পাল্টে যাবে। সেক্ষেত্রে অনলাইনে সংশোধনী পাঠানো হতে পারে।

থাকছে না ‘বিবর্তনবাদ’, ‘প্রাচীন সভ্যতা’ যাচ্ছে ভিন্ন ক্লাসে : পাঠ্যবইয়ে নানান ‘ভুল’ ও ‘অসঙ্গতি’ নিয়ে সারাদেশেই চলছে আলোচনা-সমালোচনা, যা উঠেছে সংসদ অধিবেশন পর্যন্ত। অবশ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিবর্তনবাদ নিয়ে ‘মিথ্যা তথ্য’ পরিবেশন করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং নির্দিষ্ট কিছু গণমাধ্যমে অপপ্রচার চালানো হয়েছে। যদিও ইতোমধ্যেই চলতি বছরের শিক্ষাক্রমের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির দুটি বই প্রত্যাহার করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। গত শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়েছে, এই দুটি বই প্রত্যাহারসহ আরো তিনটি বইয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে। তবে অন্য তিনটি বইয়ের কোন কোন অধ্যায়ে সংশোধন হচ্ছে তা নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। জানা গেছে, প্রত্যাহার করা বইয়ে থাকা বিবর্তনবাদের অংশ বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনসিটিবি। কিছু অংশ সংশোধন এবং কিছু অংশ বাদ দিয়ে অধ্যায়টি নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে যুক্ত করা হতে পারে।

শিক্ষাক্রম ঘেঁটে দেখা গেছে, নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ এবং ‘বিজ্ঞান’ বিষয়ে দুটি করে বই আছে। এর এক অংশের নাম দেয়া হয়েছে ‘অনুশীলন বই’ ও অপর অংশের নাম দেয়া হয়েছে ‘অনুসন্ধানী পাঠ’। এর মধ্যে দুটি শ্রেণিতেই ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বই দুটি আর পড়ানো হবে না।

যে দুটি বই প্রত্যাহার করা হয়েছে, তার মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়ের ২১ ও ২৪ নম্বর পৃষ্ঠায় আলোচিত ‘বিবর্তনবাদ’ অংশ নিয়ে বিতর্ক ওঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে। ষষ্ঠ শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ বই নিয়ে অপপ্রচার করে বলা হয়, ‘মানুষ বানর থেকে সৃষ্টি’। অথচ বইটির ২১ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘মানুষ ও সমাজ এলো কোথা থেকে?’ অধ্যায়ের ৮ নম্বর লাইনে বলা হয়েছে ‘অনেকে বলেন, মানুষের উদ্ভব নাকি বানর থেকে। এ কথা ভুল।’ বইটির ২৪ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ‘প্রাইমেট জাতীয় প্রাণী থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে একদিকে শিম্পাঞ্জি, গরিলা, ওরাংওটাং, গিবনের মতো এপ-জাতীয় প্রাণীরা ধীরে ধীরে বিভিন্ন পরিবর্তনের মাধ্যমে বিকশিত হয়েছে। অন্যদিকে বানর তৈরি হয়েছে। আর একটি ধারায় মানুষ ধীরে ধীরে বিকশিত হয়েছে নানান পর্যায়ে। তোমাদের মনে রাখতে হবে বানর বা শিম্পাঞ্জি থেকে মানুষের উদ্ভব হয়নি।’

অন্যদিকে ষষ্ঠ শেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞানের অনুশীলন বইয়ে ‘খুশি আপা’ গল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। বইটির ১১৩

নম্বর পৃষ্ঠায় ‘নিসর্গ’ প্রশ্ন করছে ‘খুশি আপা’কে। অংশটুকু তুলে দেয়া হলো- ‘নিসর্গ : আমি শুনেছি, আমাদের আদি পুরুষ নাকি বানর ছিল। খুশি আপা হেসে বললেন : তাই নাকি? অনেকে মনে করে, বানর আমাদের পূর্বপুরুষ। কিন্তু তথ্যটা সঠিক নয়। বানর আমাদের পূর্বপুরুষ নয়।’ এছাড়া সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ের ৫১ ও ৫২ পৃষ্ঠার ট্রান্সজেন্ডার বিষয় আলোচনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্ক তোলা হয়।

জানতে চাইলে এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে দুটো অংশ রয়েছে, আর বিজ্ঞান বইয়েও দুটো করে অংশ রয়েছে। একটা ‘অনুশীলন বই’, আরেকটা ‘অনুসন্ধানী পাঠ’। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ স্থগিত করা হয়েছে। আর ‘অনুশীলন বই’য়ের কিছু কিছু অধ্যায়ের কিছু জায়গায় সংশোধন করে স্কুলে পাঠিয়ে দেয়া হবে।

বিবর্তনবাদের বাইরে আর কোনো সংশোধনী আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মিশরীয় সভ্যতা, সুমেরীয় সভ্যতা ও মেসোপটেমীয় সভ্যতাগুলো এসেছে, প্রাচীন দেবদেবী নিয়ে কথা এসেছে। এর মধ্যে প্রাচীন দেবদেবী নিয়ে, প্রাচীন ইতিহাস নিয়ে বেশি কথা বলা হচ্ছে, আমাদের ইতিহাসটা কম। আর তাছাড়া ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির প্রাচীন সভ্যতার নামধামগুলো বাচ্চাদের জন্য কঠিন হয়ে যায়। সেগুলো নবম ও দশম শ্রেণির দিকে নিয়ে গেলে ভালো হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App