×

জাতীয়

মিলিয়ন ডলারের ভুয়া ‘ক্রয়াদেশ’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:৫১ এএম

মিলিয়ন ডলারের ভুয়া ‘ক্রয়াদেশ’

ছবি: সংগৃহীত

মূলহোতাসহ চক্রের ৭ সদস্য গ্রেপ্তার

মার্কিন কোম্পানি আমেরিকান সিগন্যাল কর্পোরেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাংলাদেশের সারা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি কোম্পানি। মার্কিন কোম্পানিটির কাছে উপস্থাপন করা হয়, ডিরেক্টরেট জেনারেল ডিফেন্স পারচেজ (ডিজিডিপি) এর মিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের সামরিক সরঞ্জাম কেনার ক্রয়াদেশ। এসব সরঞ্জাম কেনার আগে সারা এন্টারপ্রাইজের ৬ জনকে প্রশিক্ষণ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা অনুমোদনের গ্যারান্টি দেয়ার অনুরোধ করা হয় আমেরিকান সিগন্যাল কর্পোরেশনকে।

ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতেও বলা হয় কোম্পানিটিকে। ওই কোম্পানিটি ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে জানালে তদন্তে বেরিয়ে আসে নেপথ্যের কাহিনী। মূলত মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে ওই ৬ জনকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাতে বেছে নেয়া হয় এই অভিনব পন্থা।

ভুয়া ক্রয়াদেশ পাঠিয়ে ভিসা প্রাপ্তির আবেদন করা চক্রের মূলহোতাসহ ৭ জনকে গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ।

গ্রেপ্তাররা হলেন- মূলহোতা মো. রেজাউল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, মো. আজিজুর রহমান, মো. খায়রুল কবির, সাদেকুর রহমান, মো. শাহরিয়ার হোসেন বিক্রম ও মুহাম্মদ আবু বক্কর। বুধবার রাজধানীর রামপুরা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ২০টি জাল সিল, ২টি সিল প্যাড, ৯টি পাসপোর্ট, ৪টি ভূয়া আইডি কার্ড, একটি পেনড্রাইভ, ২টি মোবাইল ফোন ও বিপুল পরিমাণ জাল কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়।

ডিবি বলছে, ডিজিডিপি’র ভুয়া ক্রয়াদেশ দেখিয়ে প্রতারক রেজাউল দীর্ঘদিন ধরে ইতালি, পোল্যান্ড ও চেক রিপাবলিকসহ বিভিন্ন দেশে লোক পাঠিয়েছে। এজন্য প্রতি জনের কাছ থেকে ১৮-২০ লাখ টাকা করে নিতো সে। সবশেষ একই কায়দায় সামরিক সরঞ্জাম কেনার ভুয়া ক্রয়াদেশ বানিয়ে ৬ জনকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাতে গিয়ে ধরা পড়ে সে।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, সারা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সবুজ আলম নামে একজন আমেরিকান সিগন্যাল করপোরেশনকে ডিজিডিপির ক্রয়াদেশ উপস্থাপন করেন। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস

ডিজিডিপি ক্রয় আদেশ যাচাই বাছাই করে জানতে পারে, নথিতে উল্লিখিত সিলসমূহ জাল, নথিতে স্বাক্ষরকারী ব্যক্তি (মেজর মো. বসির আহমেদ) ৫ বছর আগে ডিজিডিপিতে চাকরি করত। এছাড়া টেন্ডার নম্বর- ২১১.৩৯৯ এফ.২২ (তারিখ ২০-০৩-২২) নথিটি জাল। পরে গত বুধবার গুলশান থানায় মামলা (নম্বর-৭) দায়ের করে দূতাবাস। ওই মামলার সূত্র ধরেই ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ডিবি সূত্র জানায়, আমেরিকান কোম্পানির কাছে সারা এন্টারপ্রাইজ দাবি করে, তারা ১.২ মিলিয়নের অধিক মূল্যের সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় চুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি কোম্পানি এবং মার্কিন কোম্পানিকে ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য সারা এন্টারপ্রাইজের ৬ জনের ভিসা অনুমোদনের গ্যারান্টি দেয়ার অনুরোধ করে। মূলত ওই ৬ ব্যক্তির প্রশিক্ষণ গ্রহণের কোনো উদ্দেশ্য ছিল না এবং তারা এই প্রতারণামূলক কাজটি ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে এবং যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অভিবাসনের জন্য মার্কিন ভিসা পেতে ব্যবহার করেছিল।

সূত্র আরো জানায়, গ্রেপ্তার রেজাউল ২০১১-১২ সালে নিজ কোম্পানি ডিফেন্স আইকনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে লোকাল টেন্ডারে চাল-ডাল ইত্যাদি সরবরাহ করত। সরকারি কাজের সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সে প্রতারণার এই কৌশল রপ্ত করে। সে ডিজিডিপির ক্রয় পদ্ধতির সম্পর্কে বিশেষভাবে পারদর্শী। পরবর্তীতে তার এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ২০১৪-১৫ সাল থেকে ১৮-২০ লাখ টাকার বিনিময়ে এ ধরনের প্রতারণা করে আসছে। প্রতারক রেজাউল বিশ্বের বিভিন্ন নামিদামি কোম্পানির সঙ্গে অতীতে এ ধরনের বহু প্রতারণা করেছে। রেজাউল একাধিক পরিচয় দিত। সে নিজেকে কখনো সবুজ আলম কখনো মেজর বসির পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আসছিল।

ডিবি জানায়, মূলত সারা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী রেজাউল নিজেকে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর পরিচয় দিয়ে অন্য গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে অবৈধ পথে আমেরিকায় পাঠানোর চেষ্টা করছিলেন। ইউএস ভিসা প্র্রাপ্তির জন্য তারা পরস্পর যোগসাজশে জাল সিল ও নকল কাগজপত্র তৈরি করে। রেজাউল নিজেকে সারা এন্টারপ্রাইজের মালিক সবুজ আলম পরিচয়ে ইউএসএ, ইতালি, পোল্যান্ড, চেক রিপাবলিকসহ বিভিন্ন দেশের নামিদামি কোম্পানির কাছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে মালামাল সরবরাহের জন্য ক্রয় চুক্তি করে থাকে। কিন্তু ওই চক্রের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে অবৈধ পন্থায় বিভিন্ন লোকদের বিদেশে পাঠানো।

এ বিষয়ে ডিবির সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম উত্তর বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ ভোরের কাগজকে বলেন, গুলশান থানায় দায়ের হওয়া মামলার সূত্র ধরে ওই ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই চক্রের মূলহোতা রেজাউল। তাদেরকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বিস্তারিত তথ্য বেরিয়ে আসবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App