×

জাতীয়

স্কোপোলামিন প্রয়োগে বশ করা হয় যুবককে!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:৩২ এএম

স্কোপোলামিন প্রয়োগে বশ করা হয় যুবককে!

রাজধানীর বাসাবো থেকে সদরঘাট যাওয়ার পথে চলন্ত বাসে এক যুবককে ভয়ংকর মাদক ‘স্কোপোলামিন’ প্রয়োগে অচেতন করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আবাসিক হলে নিয়ে নির্যাতন ও মুক্তিপণ দাবির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীর নাম ওয়ালিউল্লাহ। তিনি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাঁও এলাকার বাসিন্দা। ঢাকার তিতুমীর কলেজ থেকে স্নাতক (সম্মান) পাস করে বর্তমানে চাকরির সন্ধান করছেন। আর মূল অভিযুক্ত অসিত পাল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক এবং শহীদ সালাম বরকত হলের ২১৪ নং কক্ষে থাকেন। তার সঙ্গে আরো তিনজন এ কাজে অংশ নেন বলে নিশ্চিত করেন ভুক্তভোগী ওয়ালিউল্লাহ। তবে তাদের নাম পরিচয় জানা যায়নি।

ভুক্তভোগী ওয়ালিউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, গ্রামের বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে বুধবার বিকালে বাসাবো থেকে সদরঘাটের বাসে উঠেছিলাম। এরপর আমার আর কিছু মনে নেই। পরে কিছুটা সেন্স ফিরে এলে বুঝতে পারি কেউ আমাকে অনুসরণ করতে বলছে। আমিও অনুসরণ করতে থাকি, কিন্তু মুখ দিয়ে কিছু বলতে পারছিলাম না। পরে তারা আমাকে একটি কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে চারজন ছিল ও তারা একে অপরের সঙ্গে কথা বলছিল। এ সময় তারা আমাকে একটি চেয়ারে বসিয়ে মারধর করে দশ লাখ টাকা ?মুক্তিপণ দাবি করে। এছাড়া ব্যাগে থাকা নগদ চল্লিশ হাজার টাকা ও বিকাশের একটি এজেন্ট নম্বরে পরিবার থেকে পাঁচ হাজার টাকা আনিয়ে হাতিয়ে নেয়। বাড়তি টাকা দিতে না পারায় আরেক দফা মারধর করে রাতে ২০০ টাকা দিয়ে আমাকে হল থেকে বের করে দেয়া হয়। পরে আমি ক্যাম্পাসের অন্যান্য শিক্ষার্থীর সহায়তায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাই। এই ঘটনায় আপাতত জাবি প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়া হলেও সুস্থ হয়ে মামলা করবেন বলে জানান ওয়ালিউল্লাহ।

এদিকে মাদকের প্রভাবে ভুক্তভোগী শারীরিকভাবে সুস্থ না থাকায় জাবি প্রশাসন তাকে জিম্মায় রেখে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে পরিবারের কাছে হস্থান্তর করে। তাছাড়া ভুক্তভোগীকে নিয়ে রাতেই সম্ভাব্য কক্ষগুলো পরিদর্শন করেন সালাম বরকত হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সুকল্যাণ কুমার কুন্ডু। পরিদর্শনকালে ভুক্তভোগী যুবক অসিত পালের রুমে গিয়ে নিশ্চিত করেন সেখানেই তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। পরে রুম তল্লাশি করে নির্যাতনের আলামত ও ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক উদ্ধার করা হয়। এছাড়া অন্যান্য শিক্ষার্থীর কাছে থাকা ছবি দেখেও অসিতকে চিহ্নিত করেন ওয়ালিউল্লাহ। পরে সাংবাদিকরা সালাম বরকত হলসংলগ্ন বিকাশ এজেন্টের দোকানে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন অসিত পালই মুক্তিপণ হিসেবে আসা পাঁচ হাজার টাকা তুলেছেন।

এ ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. সুকল্যাণ কুন্ডু। তিনি জানান, প্রাথমিক তদন্তে ওয়ালিউল্লাহকে মারধরের আলামত পাওয়া গেছে। অসিত পালের কক্ষ (২১৪ নং কক্ষ) থেকে একটি ভাঙা চেয়ার, তার ট্রাঙ্ক ও বিভিন্ন মাদকদ্রব্য গ্রহণের কিছু আলামত জব্দ করা হয়েছে। আপাতত তার রুমটি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে।

অধ্যাপক সুকল্যাণ আরো বলেন, ভুক্তভোগীকে অচেতন করতে স্কোপোলামিন নামক ড্রাগ ব্যবহার করার সম্ভাবনা বেশি। তার বিবরণ ড্রাগ গ্রহণের পর প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে মিলে যায়। এই ড্রাগ প্রয়োগ করা হলে ব্যক্তিকে যা করতে বলা হবে সে তাই করবে। তার মস্তিষ্ক স্বাভাবিকভাবে কাজ করবে না।

ঘটনার বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত অসিত পালের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। হল ছাত্রলীগ নেতারা জানান, অসিতের অসঙ্গতিপূর্ণ আচরণের জন্য তাকে কয়েক দফা হল থেকে বের করে দেয়া হয়। পরে নতুন কমিটিতে পরিবেশবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়ার পর ফের হলে থাকতে শুরু করেন তিনি।

জাবির সহকারী প্রক্টর রনি হোসাইন বলেন, আমাদের প্রক্টরিয়াল বডি ইতোমধ্যে বিষয়টি অবহিত হয়েছেন। সাংবাদিকদের মাধ্যমে আমরা ঘটনায় একজনের যুক্ততার প্রমাণ পেয়েছি। বাকি তিনজনকেও খুঁজে বের করা হবে। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App