×

জাতীয়

মালয়েশিয়ায় নতুন সম্ভাবনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:২৮ এএম

মালয়েশিয়ায় নতুন সম্ভাবনা

ছবি: সংগৃহীত

ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক এ মাসে কর্মী পাঠানো সহজ করার আশ্বাস সফররত সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর
মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইলের সফরে সব ধরনের জটিলতা কাটিয়ে সেদেশে কর্মী যাওয়া সহজ হচ্ছে। দুদেশের মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল। বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়া সহজ করতে প্রয়োজনে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সংশোধন ও অভিবাসন খরচ কমানোর আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি। এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চলতি মাসেই ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে বসবে ঢাকা-কুয়ালালামপুর। রাজধানীর ইস্কাটনে প্রবাসী কল্যাণ ভবনে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে গতকাল রবিবার সকালে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টার বৈঠক শেষে এসব কথা জানান মালয়েশিয়ার মন্ত্রী। তিনি আরো বলেন, দুটি ইস্যুতে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। প্রথমত, রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রাম আরো দ্রুত করা এবং দ্বিতীয়ত, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো প্রক্রিয়া আরো সহজ করা। এক্ষেত্রে সরকার অভিবাসন ব্যয় কমাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইমরান আহমেদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ঢাকা সফররত মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমরা আগের করা সমঝোতা চুক্তি নিয়ে বৈঠকে কথা বলেছি। আজকের আলোচনার একটা বড় অংশজুড়েই ছিল এই চুক্তি। আমরা অভিবাসন ব্যয় কমিয়ে আনতে চাই। আগামী দিনে দুই দেশের প্রতিনিধিরা বসবেন। তারা রিভিউ করবেন- সমঝোতা চুক্তিতে পরিবর্তন আনার প্রয়োজন আছে কিনা। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী প্রয়োজনে এমওইউতে পরিবর্তন আনা হবে। মালয়েশিয়ার সরকার প্রক্রিয়াকে সহজতর করতে চায়, যেন মূল লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়। মূল লক্ষ্য হচ্ছে চাহিদা পূরণ করা, ব্যয় কমানো ও বিদেশি কর্মীদের সম্মান রক্ষা করা। যদি বর্তমান প্রক্রিয়ায় সেই লক্ষ্যে পৌঁছানো না যায়, আমরা পরিবর্তন আনতে প্রস্তুত। সেজন্য আমরা আলোচনায় বসব। মালয়েশিয়ায় ১৫ লাখ বিদেশি কর্মীর মধ্যে সাড়ে ৪ লাখ বাংলাদেশি জানিয়ে সাইফুদ্দিন বলেন, সেই কারণেই বাংলাদেশ ১৫টি সোর্স কান্ট্রির মধ্যে প্রথম স্থানে আছে। বাংলাদেশি কর্মীরা মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছেন। মালয়েশিয়ায় নানা কারণে অবৈধ হয়ে পড়া কর্মীদের বিষয়ে জানতে চাইলে সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়ায় অনেক অবৈধ কর্মী আছেন। তাদের একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বৈধ করা হচ্ছে। গত ২৭ জানুয়ারি থেকে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এক সপ্তাহে বৈধকরণের যা অনুমোদন আমরা দিয়েছি, তার ৫৫ শতাংশ বাংলাদেশি। মালয়েশিয়ার এই মন্ত্রী বলেন, আমরা অনুমোদন দেয়ার সময় কমিয়ে এনেছি। আগে ২০ থেকে ৩০ দিন সময় নেয়া হতো। এখন ২ থেকে ৩ দিনে অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। এটি একটি বড় নীতিগত পরিবর্তন। বৈঠক শেষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, আলোচনায় আমাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট যা যা আছে সব কথাই হয়েছে। এখানে খরচের ব্যাপার আছে, ওখানে যাওয়ার ব্যাপার আছে। সবকিছুই আলোচনা হয়েছে। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, মালয়েশিয়ার বর্তমান সরকার কিন্তু নতুন সরকার। আগের সরকারের সঙ্গে আমাদের যা কিছু কথা হয়েছে, এখন সেক্ষেত্রে বিরাট একটা পরিবর্তন আসবে। এ জিনিসটা তিনি (মালয়েশিয়ার মন্ত্রী) আশ্বস্ত করেছেন। ইমরান আহমদ বলেন, এমওইউ পরিবর্তন করার কথা আসছে। প্রয়োজন হলে আরো কিছু পরিবর্তন আসবে। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তিনি (মালয়েশিয়ার মন্ত্রী) এখনো দিতে চাইছেন না। আমার বিশ্বাস, যে দায়িত্ব নিয়ে তিনি (মালয়েশিয়ার মন্ত্রী) কথা বলেছেন, আমরা ভালো কিছুই পাব। চলতি মাসে দুই দেশের ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে আলোচনার মাধ্যমে এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। প্রতিনিধিরা যাচাইবাছাই করবেন, এমওইউতে পরিবর্তন আনার প্রয়োজন আছে কিনা? আজকের আলোচনার একটা বড় অংশই ছিল এই চুক্তি। মালয়েশিয়া সরকার এ প্রক্রিয়াকে সহজতর করতে চায় যেন মূল লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়। রিক্যালিব্রেশন নিয়ে আলোচনার বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী জানান, রিক্যালিব্রেশনে তারা কোনো জাতবিচার করবে না। যারা আছে ওখানে তারা যদি আবেদন করে ফিস দেয়, তারা তাদের লিগ্যাল করে নেবে। এছাড়া ২০১৬ তে রিহিয়ারিং স্কিম ছিল, ওটা পাঁচ বছরের ছিল। ওটার ডেট এক্সপায়ার্ড হয়ে গেছে। তারাও রিক্যালিব্রেশন হতে পারবে। এদিকে রবিবার দুপুর ১২টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, এমপি এবং মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইলের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বাড়ানো, রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন, শ্রমিক সম্পর্কিত বিষয় এবং দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক প্রশিক্ষণ সহযোগিতা, জ্ঞান ও তথ্য বিনিময় বিষয়ে আলোচনা হয়। দুই মন্ত্রীর বৈঠকে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বাড়ানোর বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশের মধ্যে মালয়েশিয়া যে বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেয় তা উল্লেখ করেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের তাদের নিজের দেশে প্রত্যাবর্তনে মালয়েশিয়ার সহযোগিতা কামনা করা হয়। জবাবে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাদের দেশেও রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে এবং আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মানবিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনে তাদের দেশের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় মালয়েশিয়া জোরালো ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য মালয়েশিয়ার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। প্রশিক্ষণ প্রদানসহ দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক জ্ঞান ও তথ্য বিনিময়ের বিষয়েও দুই মন্ত্রী একমত হন। আলোচনায় মালয়েশিয়ার বিভিন্ন স্থাপনায় নিরাপত্তা প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ হতে পেশাদার ও প্রশিক্ষিত আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের নিয়োগদানে অনুরোধ জানান বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। জবাবে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে সিকিউরিটি গার্ড নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেনজির আহমেদ, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী, আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপি কমিশনার, পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার, স্পেশাল ব্রাঞ্চের অতিরিক্ত আইজিপি প্রমুখ। ১৫ সদস্যের প্রতিনিধিদলে মালয়েশিয়ার পক্ষে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূত হাসনা হাসিমসহ মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। বৈঠক শেষে সবাই মালেশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্মানে আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন। এদিকে মালয়েশিয়ার মন্ত্রীর সফর ও বৈঠক প্রসঙ্গে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা) সভাপতি মো. আবুল বাশার আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, মালয়েশিয়ার মন্ত্রীর ঢাকা সফরে কর্মী পাঠানো নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা সম্পর্কে জ্ঞাত হয়েছেন তিনি। দেশে ফিরে সরকারকে অবহিত করার পর তারা পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন। মন্ত্রীর এই সফরে পুরনো সব জটিলতা দূর হয়ে আরো বেশি কর্মী যাওয়ার সুযোগ পাবে এবং সিন্ডিকেট ভাঙবে বলে মনে করছেন বাশার। তিনি মনে করেন, এখন থেকে কর্মী যেতে খরচ কমবে। নতুন যে পদ্ধতি তৈরি হবে তাতে পরিবর্তন আসবে। জানা গেছে, প্রায় চার বছর পর গত আগস্টে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালু হলেও দেশটিতে কর্মী যাওয়ার সংখ্যা তেমন বাড়ছে না। নির্দিষ্ট কিছু এজেন্সিকে কর্মী পাঠানোর অনুমোদন দেয়ার কারণেই এটি ঘটছে বলে মনে করা হচ্ছে। এর মধ্যে গত নভেম্বরে মালয়েশিয়ায় নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। এখন সহজে ও কম খরচে কর্মী নিয়োগের কথা ভাবছে দেশটির সরকার। মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ১৫ লাখ বিদেশি কর্মী কাজ করে মালয়েশিয়ায়। এর মধ্যে শীর্ষে বাংলাদেশের কর্মীরা। ৪ লাখ ৪৫ হাজার বাংলাদেশি কর্মী কাজ করে নির্মাণ, কৃষি, উৎপাদন ও সেবা খাতে। আরো পাঁচ লাখ নতুন কর্মী নিতে যাচ্ছে মালয়েশিয়া। এ চাহিদা পূরণ মালয়েশিয়ার অগ্রাধিকার। তাই নিয়োগপ্রক্রিয়া সহজতর করা ও ব্যয় কমানোটাই লক্ষ্য। প্রসঙ্গত, বিভিন্ন খাতে কর্মী নিতে ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সঙ্গে এমওইউ সই করে মালয়েশিয়া। এমওইউর আগে মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, বৃক্ষরোপণ, কৃষি, শিল্প উৎপাদন, সেবা, খনিতে উত্তোলন, নির্মাণ এবং গৃহকর্মের মতো খাতগুলোতে বাংলাদেশি শ্রমিক নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App