×

জাতীয়

ভুল চিকিৎসায় বিদেশি পাইলটের মৃত্যুর অভিযোগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ০৭:৫৬ পিএম

ভুল চিকিৎসায় বিদেশি পাইলটের মৃত্যুর অভিযোগ

ছবি: সংগৃহীত

গালফ এয়ারের পাইলট ক্যাপ্টেন ইউসুফ আলহেন্দি ফ্লাইট নিয়ে বাংলাদেশে আসার পর অসুস্থ হয়ে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায় তার মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও জর্ডানের দ্বৈত নাগরিক তালা আলহেন্দি। তারা সম্পর্কে ভাই-বোন।

সোমবার (৩০ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে তার বোন তালা আলহেন্দি হাসপাতালটির লাইসেন্স বাতিল ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান। এর আগে গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর ইউনাইটেড হাসপাতালে ওই পাইলটের মৃত্যু হয়। ভাইয়ের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর দেড় মাস পর ন্যায়বিচার পেতে জর্ডান থেকে ঢাকায় এসেছেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে তালা আলহেন্দি জানান, বাংলাদেশে এসে ইউনাইটেড হাসপাতালের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাইলে তাকে অসহযোগিতা করা হয় এবং দেরি করে কাগজপত্র দিলেও সেখানে জালিয়াতি করা হয়েছে। গালফ এয়ারও সময়মতো ইউসুফ আলহেন্দির চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারেনি। খোঁজ-খবর নিয়ে ইউনাইটেড হাসপাতাল ও গালফ এয়ার কর্তৃপক্ষের অবহেলার নানা প্রমাণ পেয়েছেন তিনি।

তালা আলহেন্দি বলেন, আমার ভাই ৬৩ বছর বয়সী ইউসুফ আলহেন্দি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন। একজন পাইলট হিসেবে নিজের কাজের দরকারে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতেন। গত ১৪ ডিসেম্বর তিনি ঢাকার মেরিডিয়ান হোটেলে ছিলেন। খুব সকালে তার গালফ এয়ারের ফ্লাইট পরিচালনার কথা ছিল। রাত পৌনে ৩টায় তিনি ফ্লাইটের জন্য প্রস্তুত হন। এরপর হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দিয়ে ভোর সাড়ে ৩টায় বিমানবন্দরে পৌঁছান। পরে ভোর ৪টা ১০ মিনিটের দিকে তিনি ইমিগ্রেশনের প্রক্রিয়া শুরু করেন। তখন তিনি সেখানে লুটিয়ে পড়েন। বিমানবন্দরে আমার ভাইয়ের প্রথম কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। তখন তিনি পাঁচ মিনিট কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন সিপিআর পেয়েছেন। ক্রমশ তার রক্তচাপের অবনতি হতে থাকে।

তিনি আরো বলেন, ‘আমার ভাইকে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। দুপুর ১২টার দিকে তাকে পিসিআই কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। অর্থাৎ অযথাই সাড়ে ছয় ঘণ্টা সময় নিয়েছেন চিকিৎসকরা। এ সময়ের মধ্যে সঠিক চিকিৎসা হলে আমার ভাইকে বাঁচানো যেত। কিন্তু চিকিৎসার ক্ষেত্রে তারা অবহেলা করেছেন।’

তিনি আরো বলেন, দীর্ঘ সময় চিকিৎসাবিহীন থাকার কারণে বেশ কয়েকবার তার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে। একজন রোগীকে সাড়ে ছয় ঘণ্টা চিকিৎসাবিহীন রাখার পরেও একজন কার্ডিওলোজিস্টকে তারা (কর্তৃপক্ষ) সেখানে আনতে পারেননি। তারা মূলত আমার ভাইকে হত্যা করেছেন। ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে যথাযথ ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে আমি ন্যায়বিচার চাচ্ছি।

পাইলট ইউসুফের বোন তালা বলেন, আমি পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে পেয়েছি যে, সিসিটিভি ফুটেজ ও হাসপাতালের কাগজপত্রে কারসাজি করা হয়েছে। এছাড়া আমি যখন অনুসন্ধান করছিলাম, তখন হাসপাতালের কর্মীরাও আমাকে ভয় দেখিয়েছেন। ২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারি ইউনাইটেড হাসপাতালের কাছে আমি চিকিৎসার কাগজপত্র ও সিসিটিভির ফুটেজ দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রমাণাদি কারসাজি করতে তারা এসব দিতে তিন দিন সময় নিয়েছিল।

তিনি আরো বলেন, আমার ভাইয়ের চিকিৎসা করেছেন ডা. কায়সার নাসির। কিন্তু পরিবারের কাছে চিকিৎসার যে কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে, তাতে তার নাম পাওয়া যায়নি। রিপোর্টে বলা হয়েছে, আমার ভাইয়ের অ্যাজমা ছিল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে, তারা বলেছে, ভুল করে এটা বাদ পড়ে গেছে। ফোনে কার্ডিওলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে। তিনি সশরীরে রোগীর কাছে উপস্থিত ছিলেন না। মারা যাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমার ভাইকে সমাহিত করা হয়।

এ ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে দৃষ্টান্তমূলক জরিমানা বা ক্ষতিপূরণ চেয়ে তালা আলহেন্দি বলেন, আমি চাই না অন্য কারও ভাই, বোন, বাবা, মা আমার ভাইয়ের যা হয়েছে, তার মধ্য দিয়ে যাক। আমি চাই না, আমাদের আস্থা রাখা চিকিৎসকদের হাতে আরও কেউ ভুল চিকিৎসার শিকার হোক। আমি ইউনাইটেড হাসপাতালকে এ রকম ভয়াবহ চিকিৎসা অবহেলা থেকে বিরত রাখতে চাই। আর কেউ যেন চিকিৎসা নিতে গিয়ে এমন অবহেলার শিকার না হয়।

এছাড়া গালফ এয়ার কর্তৃপক্ষেরও অবহেলা ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, কার্ডিয়াক এরেস্ট হওয়ার পর আমার ভাই অচেতন হয়ে পড়েন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সেই অবস্থাতেই ছিলেন। তিনি গালফ এয়ারের একটি ফ্লাইটে ওঠার সময় এটা হয়েছে। পরিবারের অনুপস্থিতিতে অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করতে কোনো কর্মকর্তাকে হাসপাতালে পাঠায়নি গালফ এয়ার। অথচ ১০ মিনিট পরেই ৫০০ যাত্রী নিয়ে পাইলট হিসেবে আমার ভাইয়ের নেতৃত্বে গালফ এয়ারের একটি ফ্লাইটের উড়াল দেওয়ার কথা ছিল। বিমান চালনার সময় তিনি অসুস্থ হলে ৫০০ যাত্রীর জীবনও হুমকিতে পড়ে যেতে পারত। কিন্তু আমার ভাইয়ের সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি গালফ এয়ারকে। এছাড়া গালফ এয়ারের কাছে থাকা আমার ভাইয়ের চিকিৎসার অতীত ইতিহাস ইউনাইটেড হাসপাতালে জমা দেওয়া উচিত ছিল, কিন্তু তারা তা করেনি।

এদিকে, অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে কোনো বক্তব্য দেননি। হাসপাতালটির জনসংযোগ বিভাগ জানায়, এ বিষয়ে আজই কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেবেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App