পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ এবং পিতৃতান্ত্রিকতার শৃঙ্খল যেভাবে নারীদের শোষণ করছে, বঞ্চিত করছে সেই শৃঙ্খল ভাঙার নীরব সৈনিক ছিলেন সাংবাদিক দিল মনোয়ারা মনু। লেখনী ও কর্মের মধ্য দিয়েই তিনি আজীবন তার অবদান রেখে গেছেন।

শনিবার (২৮ জানুয়ারি) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে প্রয়াত সাংবাদিক, লেখক, মানবাধিকারকর্মী দিল মনোয়ারা মনুর কর্মময় জীবনের ওপর স্মারক গ্রন্থের প্রকাশনা ও মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এসব কথা বলেন।

দিল মনোয়ারা মনু অনিন্দ্য ফাউন্ডেশন আয়োজিত এ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নারী নেত্রী নুরজাহান বোস, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু, অধ্যাপক কবি কাজী মদিনা, লেখক-সাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির। স্বাগত বক্তব্য দেন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক ও সাংবাদিক দিল মনোয়ারা মনুর স্বামী শামসুল হুদা।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, দিল মনোয়ারা মনু সাহিত্য চর্চার মাধ্যমে সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য যে অবদান রাখেন তা অনস্বীকার্য। এই গ্রন্থটির প্রতিটি লেখার মধ্য দিয়ে দিল মনোয়ারা মনুর সম্পূর্ণ কর্মজীবনকে জীবন্ত ও প্রাণবন্ত করেছে। গ্রন্থটি মনুকে আমাদের মাঝে বাঁচিয়ে রাখবে।

নাসিমুন আরা হক মিনু বলেন, নারী সাংবাদিকদের অধিকারসহ নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় দিল মনোয়ারা মনু নিরলসভাবে কাজ করেছেন। নারীদের অধিকার আদায়ে আমরা যখনই কোনো উদ্যোগ নিয়েছি সেখানেই দিল মনোয়ারা মনুর সক্রিয় উপস্থিতি ছিল। ‘কচি-কাঁচার মেলা’র সঙ্গে জড়িত থেকে তিনি শিশুদের অধিকার রক্ষায়ও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন।

নুরজাহান বোস বলেন, দিল মনোয়ারা মনু এক মন থেকে সহস্র মনকে আপন করেছেন, যা এই গ্রন্থের পরতে পরতে উপলব্ধি করা যায়। তিনি মানুষকে খুব সহজেই আপন করে নিতে পারতেন। মানুষকে আপন করে নেয়ার এই বৈশিষ্ট্য তাকে অনন্য করেছে।

আনোয়ারা সৈয়দ হক বলেন, তুমি দৃষ্টান্ত হও নারী- এই ব্রত দিল মনোয়ারা মনুর সঙ্গে সবচাইতে মানানসই। কারণ, তিনি আজীবনই তার কর্মের মাধ্যমে শোষিত বঞ্চিত নারীদের দৃষ্টান্ত হওয়ার অনুপ্রেরণা দিয়ে গেছেন।

কাজী মদিনা বলেন, প্রকৃতপক্ষে দিল মনোয়ারা মনুর কর্মকাণ্ডের জীবদ্দশায় মূল্যায়ন করা হয়নি। তিনি আমৃত্যু নারী সাংবাদিক ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় যে কাজগুলো করে গেছেন তাকে এগিয়ে নিতে নতুন প্রজন্মকে আহ্বান জানান।

স্বাগত বক্তব্যে শামসুল হুদা বলেন, যে কাজগুলো এবং যে দৃষ্টান্তগুলো তিনি নীরবে নিভৃতে রেখে গেছেন তা সমাজে, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা আমাদের দায়িত্ব। সেই সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেও এই স্মারক গ্রন্থটির কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করেছি। শিল্পী রোকাইয়া নিলীর রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে প্রকাশনা ও মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।