×

জাতীয়

যে কারণে ভাঙল ২০ দলীয় জোট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:৩৯ এএম

যে কারণে ভাঙল ২০ দলীয় জোট

ছবি: সংগৃহীত

যে কারণে ভাঙল ২০ দলীয় জোট

ফাইল ছবি

১২ দলীয় জোটের আত্মপ্রকাশ যুগপৎ আন্দোলনের নতুন ছক

জোট থাকলেও কাজ নেই। মাঝেমধ্যে নিয়ম রক্ষার বৈঠক আর একে অন্যের অনুষ্ঠানে যাওয়া ছাড়া জোটের কোনো কর্মসূচি নেই। শেষ কবে বিএনপির সঙ্গে সমাবেশ কিংবা গণজমায়েত কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন জোট নেতারা তা মনেও করতে পারেন না। অভিমানে জোট থেকে বেরিয়ে গেছে একাধিক দল। বেরিয়ে যাওয়া দলগুলোর ভগ্নাশং জোড়াতালি দিয়ে জোটের সংখ্যা কোনো রকমে টিকিয়ে রাখা হলেও অভ্যন্তরীণ কাঁদা ছোড়াছুড়ি চলছিল।

এমন টানাপোড়নের মধ্যেই ভেঙে গেল বিএনপির নেতৃতাধীন বহুদিনের ২০ দলীয় জোট। আত্মপ্রকাশ করল ১২ দলীয় জোট। এই ১২ দলীয় জোটের নেপথ্যেও রয়েছে বিএনপি। সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গেই থাকবে নতুন এই জোট। আর আন্দোলনে সফল হলে জাতীয় সরকারেও থাকবে জোটের অংশীদারত্ব। সংশ্লিষ্টরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০ দলীয় জোটের ১২টি শরিক দল মিলে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন জোট গড়ার ঘোষণা দিয়েছে। একই সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণমিছিল করবে নতুন এই জোট।

নতুন এই ‘১২ দলীয় জোট’ গড়ার ঘোষণা দেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার। নতুন এই জোটে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ছাড়াও রয়েছে কল্যাণ পার্টি, লেবার পার্টি, জাতীয় দল, বাংলাদেশ এলডিপি, জাতীয় গণতান্ত্রিক দল- জাগপা (তাসমিয়া প্রধান), এনডিপি, এলডিপি (সেলিম), মুসলিম লীগ, জমিয়াতে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামিক পার্টি এবং সাম্যবাদী দল।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০ দলের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছি। তাই এখন থেকে জোটগতভাবে আন্দোলন করব না। যে যার অবস্থান থেকে আন্দোলন এগিয়ে নেব। স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন বেগবান করতে এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, ২০ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলেন যারা শেষ পর্যন্ত রাজপথে থাকবে তাদের নিয়ে পরবর্তীতে জাতীয় সরকার গঠন করব।

নতুন জোটের ঘোষণার পর মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, দেশের সর্ববৃহৎ বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে আমাদের ঐক্য, সমঝোতা এবং হৃদয়ের বন্ধন আগের

মতোই অটুট থাকবে। আমরা আরো বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার জন্য প্রকৃত প্রস্তাবে দেশের সব কয়টি রাজনৈতিক দল, যারা এই সরকারের বিরোধী, তাদের এক কাফেলায় শামিল করার জন্য একটু ভিন্ন কৌশলে অগ্রসর হচ্ছি। আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে যুগপৎ আন্দোলনে এগিয়ে যাব।

শরিক দলের শীর্ষ নেতারা জানান, জোটের বৃহৎ দল বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে বেশ কয়েকটি দলের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। বিশেষ করে বিএনপির প্রধান শরিক জামায়াতের সঙ্গে টানাপোড়েন চলছে। এমতাবস্থায় ২০ দলীয় জোটের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট কার্যত আগেই ভেঙে দেয়া হয়েছিল। গত ৯ ডিসেম্বর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জোটের এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে শরিকদের এমন সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন বিএনপির নেতারা।

সূত্র জানায়, ৯ ডিসেম্বরের বৈঠকে জোট নেতাদের উদ্দেশ্যে বিএনপির নেতারা বলেন, কৌশলগত কারণে জোট ভেঙে দেয়া হলো। তবে আমরা যুগপৎ আন্দোলন করব। আপনারা যার যার অবস্থান থেকে যুগপৎ আন্দোলন করবেন। তবে আপনারা নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করে নতুন জোট আকারে আন্দোলন করতে পারেন। যে যেভাবে পারেন বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা দাবি সমর্থন করে যুগপৎ আন্দোলনে থাকবেন।

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, মৌলিকভাবে বলতে গেলে যে ২০ দলীয় জোট ছিল, তার মধ্যে ১২টি দল মিলে আমরা জোট করেছি। অন্যদের জন্য দরজা খোলা রেখেছি। আমরা ভাগাভাগি কিংবা রেষারেষিতে নেই। আমরা একসঙ্গে চলেছি। বিএনপি আমাদের প্রধান মুরুব্বি। তাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা থাকবে। বিএনপির ঘোষিত ১০ দফা এবং ২৭ দফার সমর্থনে আমাদের এই প্রচেষ্টা।

প্রসঙ্গত, চারদলীয় জোটের স¤প্রসারণ ঘটিয়ে বিএনপির নেতৃত্বে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল ১৮ দল এবং পরে পর্যায়ক্রমে আরো কয়েকটি দল নিয়ে ২০ দলীয় জোট গঠিত হয়। ডানপন্থি ও মধ্য-ডানপন্থি দলগুলোর সমন্বয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী এ জোট গড়ে উঠেছিল।

১২ দলের কর্মসূচি : ১২ দলীয় জোটের কর্মসূচি আগামীতে ঘোষণা করা হবে জানিয়ে সৈয়দ ইবরাহিম বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের পর আমরা বিভাগীয় শহরগুলোতে যেতে চাই। তবে সেই সিদ্ধান্ত এখনো সম্মিলিতভাবে নেয়া হয়নি। আমরা বিএনপির সব কর্মের সঙ্গে যুগপৎ থাকব। আমরা যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিল করব। আমরা সেদিন দুপুর ২টায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের কাছে ইনশাল্লাহ মিলিত হব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App