×

জাতীয়

২ হাজার কি.মি. মহাসড়ক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২২, ০৬:১১ পিএম

বর্তমান সরকারের সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এখন অনায়াসেই দেশের যে কোনো প্রান্তে পৌঁছানো যায়। এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় খুলনা বিভাগের ৩৫২.২৬ কিলোমিটারসহ সারাদেশে দুই হাজার কিলোমিটার মহাসড়ক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী বুধবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব মহাসড়ক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

সারাদেশে সওজের আওতাধীন সড়কের দৈর্ঘ্য ২২ হাজার ৪৭৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে জাতীয় মহাসড়ক ৩ হাজার ৯৯০ কিলোমিটার। আঞ্চলিক মহাসড়ক ৪ হাজার ৮৯৮ কিলোমিটার এবং জেলা সড়ক ১৩ হাজার ৫৮৮ কিলোমিটার। উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা দুই হাজার কিলোমিটার সড়ককে মহাসড়ক বলা হলেও এর মধ্যে জাতীয় মহাসড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়ক ও জেলা সড়কও রয়েছে। নতুন নির্মিত সড়কের পাশাপাশি পুনর্নির্মিত এবং যথাযথ মানে প্রশস্ত করা সড়কও রয়েছে।

সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ৪৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের আটটি বিভাগে ৫০টি জেলায় ১০০টি মহাসড়কে উন্নয়ন করা হয়েছে। যার সর্বমোট দৈর্ঘ্য ২,০২১.৫৬ কিলোমিটার। এতে মোট ব্যয় হয়েছে ১৪,৯১৪.৯৫ কোটি টাকা। উন্নয়নকৃত মহাসড়কের মধ্যে খুলনা বিভাগে ৩৫২.২৬ কিলোমিটার, ঢাকা বিভাগে ৬৫৩.৬৬ কিলোমিটার, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৫৮.৯০ কিলোমিটার, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৪২.৪৮ কিলোমিটার, সিলেট বিভাগে ১০৬.১৮ কিলোমিটার, বরিশাল বিভাগে ১০৭.২৬ কিলোমিটার, রাজশাহী বিভাগে ১৯৬.৮৭ কিলোমিটার এবং রংপুর বিভাগে ২০৩.৯৫ কিলোমিটার মহাসড়ক অবস্থিত। তবে উদ্বোধনের আগে থেকেই এর সবগুলোতেই যান চলাচল করছে।

এর মধ্যে খুলনা বিভাগে মোট ৩৫২.২৬ কিলোমিটার মহাসড়ক রয়েছে। খুলনা সড়ক ও জনপদের (সওজ) বাস্তবায়নে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক হলো খুলনা-চুকনগর-সাতক্ষীরা আঞ্চলিক মহাসড়ক। এর দৈর্ঘ্য হলো ৫৩.৮০ কিলোমিটার। মহাসড়কটির নম্বর আর-৭৬০। এ মহাসড়কটি নির্মাণের ফলে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরের সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে। একই সঙ্গে মহাসড়কটি খুলনা বিভাগীয় শহরের সঙ্গে ডুমুরিয়া, পাইকগাছা;

সাতক্ষীরা জেলাকে সংযুক্ত করে। এছাড়া যশোর-খুলনা রুটের বিকল্প হিসেবে ওই মহাসড়কটি ব্যবহার হয়। এই এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মহাসড়কটি বড় ধরনের ভূমিকা পালন করে। এ মহাসড়কের ফলে রাজধানীর সঙ্গে পদ্মা সেতু হয়ে দূরত্ব কমবে ১০০ কিলোমিটার। ফলে ভারত থেকে পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি, মাছসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানিতে সময় ও পরিবহন ব্যয় বাঁচবে। সুন্দরবন ভ্রমণে দেশিবিদেশি পর্যটকরা এই মহাসড়কটি ব্যবহার করে। ফলে জনসাধারণের আর্থসামাজিক উন্নয়নে মহাসড়কটি গুরুত্ব আপরিসীম।

বাগেরহাট-চিতলমারী-পাটগাতী মহাসড়কটি (জেড৭৭০৮) ও (জেড৭৭০৫৪) ৩৮.৩০ কিলোমিটার। এই মহাসড়ক নির্মাণের ফলে বাগেরহাটের হযরত খানজাহান আলীর (র.) মাজার, ষাট গুম্বজ মসজিদের সঙ্গে এবং গোপালগঞ্জ ও টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিস্থলে যাওয়ার জন্য সংযোগ স্থাপন হয়েছে। ফলে দেশিবিদেশি পর্যটকসহ এই অঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ স্বল্পসময়ে বাগেরহাটে হযরত খানজাহান আলীর (র.) মাজার জিয়ারত, ষাট গুম্বজ মসজিদ পরিদর্শন ও বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা ও জিয়ারত করতে পারবে। গোপালগঞ্জের সঙ্গে বাগেরহাটের দূরত্ব কমবে প্রায় ২০ কিলোমিটার।

নওয়াপাড়া-বাগেরহাট-পিরোজপুর আঞ্চলিক মহাসড়কটি (আর-৭৭০) ৩৯.৫০ কিলোমিটার। এ মহাসড়ক নির্মাণের ফলে বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর সঙ্গে পিরোজপুর হয়ে খুলনা বিভাগীয় শহরের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হবে।

যশোর-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়কের (এন-৭০৬) উন্নয়নের ফলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বেনাপোল বন্দর হয়ে দ্রুত সময় কলকাতায় যাওয়া যাবে। এতে সময়, অর্থ দুটিই ব্যয় কমবে।

অন্যদিকে গাজীপুরের জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল জাতীয় মহাসড়কটি (এন-৪) ৭০ কিলোমিটার। এই মহাসড়কটি পৃথক লেনযুক্ত। অগ্রাধিকার উন্নয়নের ভিত্তিতে মহাসড়টি দক্ষিণ এশিয়া উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা (ঝঅঝঊঈ) নির্মাণ করে। সংস্থাটির উদ্দেশ্য উপআঞ্চলিক যোগাযোগ দৃঢ়করণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে নির্মিত মহাসড়কটি গাজীপুরের ভোগড়া থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত। এ মহাসড়কটির মাধ্যমে রাজধানী থেকে উত্তরাঞ্চলের পাশাপাশি প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হয়েছে। এই জাতীয় মহাসড়কটি দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনায়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের তত্ত্বাবধানে নির্মিত ওই দুই হাজার কিলোমিটার সড়ক বর্তমান সরকারের উন্নয়নের অন্যতম ধারা। এর ফলে সড়ক যোগাযোগ হয়ে উঠবে আরো শক্তিশালী। যাত্রী ও পণ্য পরিবহন দ্রুত, সহজতর ও নিরাপদ হয়ে উঠবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে যাবে দুর্গম এলাকার জনগণের দ্বারপ্রান্তে, বিকশিত হবে দেশের অর্থনীতি। নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় বৃদ্ধি পাবে কৃষিজ উৎপাদন ও বিপনন এবং নিশ্চিত হবে খাদ্য নিরাপত্তা। সামগ্রিকভাবে দ্রুত ও নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের ফলে উন্মেচিত হবে আর্থ সামাজিক উন্নয়নের সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App