×

জাতীয়

৪ বছর পর নিখোঁজ শিশুকে উদ্ধার র‌্যাবের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০২২, ০৬:২৩ পিএম

৪ বছর পর নিখোঁজ শিশুকে উদ্ধার র‌্যাবের

ছবি: ভোরের কাগজ

সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার ৪ বছরেও গুলশান থানা পুলিশ হারানো মেয়ে শিশুর সন্ধান দিতে না পারলেও অবশেষে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করেছে র‌্যাব-৩ এর একটি দল। রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় গতকাল রবিবার (১৮ ডিসেম্বর) মধ্যরাতে অভিযান চালিয়ে অপহরকারীকে গ্রেপ্তার করাসহ ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাবের দাবি, আটক স্টীল ব্যবসায়ী মো. আব্দুল্লাহ (৩৯) গৃহকর্মী হিসেবে বিক্রির জন্য ফুল ও স্টিকার বিক্রেতা এক শিশুকে গুলশান থেকে অপহরণ করে। পরে বিক্রি করতে না পারলে ১২ বছর বয়সে অপহরণ করা শিশুটিকে ৪ বছর আটকে রাখে। শত চেষ্টা করেও মেয়েটি তার মা-বার কাছে যেতে পারেনি।

সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) এ বিষয়ে র‌্যাব-৩ এর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ এর কমান্ডিং অফিসার (সিও) লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, গত ২০১৮ সালে এক হতদরিদ্র দিনমজুরের কন্যা সন্তান জীবিকার তাগিদে রাস্তায় ফুল ও কাগজের স্টিকার বিক্রি শুরু করে। প্রতিদিনের মতো ভিকটিম ফুল বিক্রি করতে রাস্তায় যায় ও দিন শেষে সে আর বাসায় আসেনি। মেয়েকে বাসায় আসতে না দেখে ভিকটিমের পিতা মাতা হন্যে হয়ে বিভিন্ন জায়গায় তার সন্ধান করতে থাকে। তাদের চেনা জানা সকল জায়গায় খোঁজাখুঁজির পর একপর্যায়ে ভিকটিমের বাবা মা তাদের সন্তানকে খুঁজে না পেয়ে গুলশান থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করে। ডায়েরী করার ৪ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরেও কোন খোঁজ না পেয়ে তারা র‌্যাব-৩ এ একটি অভিযোগ করে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও গুলশান থানায় নিখোঁজ ডায়েরির ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ ছায়া তদন্ত শুরু করে জানতে পারে যে, তাদের মেয়েকে অপহরণ করে গ্রেপ্তারকৃত আসামি নিজ বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে আটকে রেখে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন করে আসছে। এরই ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে দোষীকে আমরা গ্রেপ্তার করি।

গ্রেপ্তারকৃতকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গত ২০১৮ সালে সেপ্টেম্বর মাসে গুলশান এলাকার আজাদ মসজিদের সামনে ফুটপাতে পথশিশু ভিকটিমকে ফুল ও কাগজের স্টীকার বিক্রি করা অবস্থায় দেখতে পায়। সেখান থেকেই অপহরণকারী তাকে টার্গেট করে ও বেশ কয়েকদিন তাকে অনুসরণ করতে থাকে। এরপর একদিন বিকেলে ফুল বিক্রি করার সময় অপহরণকারী ভিকটিমকে ডেকে তার নাম জিজ্ঞেস করে এবং তার ছেঁড়া জামা কাপড় দেখে নতুন জামা কাপড় কিনে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ভিকটিম শিশুটিকে একটি মার্কেটে নিয়ে যায়। নতুন জামা কাপড়সহ বিভিন্ন ধরনের খেলনা কিনে দিয়ে ভিকটিমকে অপহরণকারী তার স্টীলের কারখানায় নিয়ে যায়। কারখানায় নিয়ে শিশুটিকে ৭-৮ দিন রাখার পর তাকে স্থানীয় এক দালালের কাছে গৃহকর্মী হিসেবে ২০ হাজার টাকায় বিক্রির জন্য বায়নাপত্র করা হয়। কিন্তু কারখানায় থাকার ফলে পর্যাপ্ত খাবার ও আলো বাতাসের অভাবে শিশুটি অসুস্থ হয়ে গেলে তার অবস্থা দেখে উক্ত দালাল নিতে অস্বীকৃতি জানায়। শিশুটি অতিমাত্রায় অসুস্থ হয়ে পড়লে একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে গ্রেপ্তারকৃত আব্দুল্লাহ শিশুটিকে তার নিজ বাসায় নিয়ে যায় ও তাকে দিয়ে গৃহপরিচারিকার সকল কাজকর্ম করাতে থাকে।

ভিকটিমের জবানবন্দিতে জানা যায়, অপহরণের পর আটক থাকাকালীন শিশুটি বাবা মার কাছে যাওয়ার জন্য আটক আব্দুল্লাহর কাছে অনেক কাকুতি মিনতি করলেও তাতে কোন কাজ হয় না। অপহরণকারী বাসায় যারা নিয়মিত যাতায়াত করত তাদের অনেকের কাছেই শিশুটি তার বাবা-মার বস্তির ঠিকানা দিয়ে সেই ঠিকানায় তাকে পৌঁছে দেয়ার জন্য অনুরোধ করতো। তবে এসব দেখে আবদুল্লাহ শিশুটিকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি-ভয়ভীতি দেখাতো। যখনই সে তার বাবা মায়ের কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করতো তার ওপর অমানসিক নির্যাতনের পরিমাণ বেড়ে যেত। এভাবেই দুঃখ-কষ্টে নির্যাতনের শিকার হয়ে ৪ বছর কাটিয়ে দেয় শিশুটি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App